Exclusive:অস্কার কর্তৃপক্ষ বুদ্ধদার উপরে হওয়া কাজগুলো সংরক্ষণ করতে চায়: সোহিনী

Share It

অতনু রায়

৬ জুলাই নন্দন ৩-এ উদযাপন করা হবে কিংবদন্তি পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে। আয়োজনে ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’। ৩ বছরের এই ট্রাস্ট কেবলই একদিনের অনুষ্ঠানে আটকে থাকছে, নাকি প্রয়াত পরিচালকের মতাদর্শ নিয়ে তাঁর ছবির মতই ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে আর অলক্ষ্যে ছুঁয়ে ফেলতে চাইছে আমার আপনার মনের শিকড়? সবটা খুঁটিয়ে জেনে নিতে ‘দ্য কাউন্টার কালচার’ যোগাযোগ করেছিল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সহ-পরিচালক, সহধর্মিনী এবং ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর ফাউন্ডার সোহিনী দাশগুপ্ত‘র সঙ্গে। সোহিনী কথায় কথায় বললেন অনেক কিছু।

প্রশ্ন: ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ শুরু করার গোড়ার কথা যদি বল।

সোহিনী: ২০২১ এ বুদ্ধদা চলে যাওয়ার পরেই ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর ভাবনার শুরু। ওঁর চলে যাওয়ার পর প্রথম জন্মদিনে মানে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আমরা ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল লেকচার’ আয়োজন করেছিলাম। আর চলে যাওয়ার দিনে মানে ১০ জুন করেছিলাম ‘স্পেশ্যাল হোমেজ টু দ্য ডিরেক্টর’।

প্রশ্ন: প্রথম বছরেই?

সোহিনী: হ্যাঁ। তারপরের বছরে আমরা করলাম ‘প্রথম বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ফিল্ম অ্যান্ড পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যাল’। সারা পৃথিবীতে এইরকম ফেস্টিভ্যাল কিন্তু আর কোথাও হয়নি। সিনেমা, কবিতা এবং দুটো ক্ষেত্রের মেলবন্ধন নিয়ে আমরা দুদিন ধরে চর্চা করেছিলাম সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (SRFTI) এবং ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে। সেখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পরিচালকের ছবি নিয়ে চর্চা করেছি, দেখেছি। আমরা মহিলা কবিদের উপর ফোকাস করেছিলাম প্রথমবারে। এই ফেস্টিভ্যালটা আমরা দু’বছরে একবার করে করব। ২০২৫ এর ফেব্রুয়ারিতে আবার হবে।”

প্রশ্ন: বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বিশ্ব সিনেমায় অন্য ধারার এক চিত্রভাষের জন্ম দেন। ট্রাস্টও কি কোনও অন্য ধারার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে?

সোহিনী: অবশ্যই প্রচুর ভাবনা চিন্তা আছে। সমস্ত রকমের অল্টারনেটিভ আর্টের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এবং প্রান্তিক মানুষের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। যেমন ঝাড়গ্রামের খোয়াবগাঁওতে খুব তাড়াতাড়ি সিনেমার একটা ওয়ার্কশপ করব। সেখানে একদম আদিবাসী ছোট বাচ্চারা আর তাদের বাবা-মায়েরাও যোগ দেবে।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতায় মুক্তি, ‘পদাতিক’-এর অপেক্ষায় মৃণালের এলডোরাডো

প্রশ্ন: ওইখানে কীভাবে সেটা সম্ভব হবে?

সোহিনী: হ্যাঁ। ওখানে তো আমরা ক্যামেরা শেখাব না, স্টোরি-টেলিং শেখাব। কিভাবে নিজের গল্প বলতে হয়, কিভাবে দেখার চোখ তৈরি করতে হয়, নিজেকে বোঝার মনন তৈরি করতে হয় এই সব শেখাব। তবে আস্তে আস্তে চিত্রনাট্য, সাউন্ড, এডিটিং এবং অভিনয় নিয়ে মূল পাঁচটা বিষয়েই মাস্টারক্লাস করার ইচ্ছা আছে।

প্রশ্ন: সিনেমা আর কবিতার বাইরে কিছু ভাবছ?

সোহিনী: একদম। সেরকম ভাবনাও রয়েছে। মেন্টাল হেল্থ, ইমোশনাল হেল্থ নিয়ে কাজ করতে চাইছি। ডান্স-মুভমেন্ট থেরাপি, মিউজিক থেরাপি, ক্রিয়েটিভ রাইটিং থেরাপি সহ বিভিন্ন থেরাপেটিক ভ্যালু নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।

প্রশ্ন: তোমরা কি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের কোনও বিশেষ মতাদর্শকে বেশি করে আঁকড়ে ধরেছ নাকি ছবির মাধ্যমেই তাঁকে উদযাপন করবে শুধু?

সোহিনী: অবশ্যই ছবি দেখাব। তবে যেহেতু একটা ধরণের সিনেমা সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছয় না আবার একটা ধরণের সিনেমা পৌঁছয় তাই বুদ্ধদা সবসময় বলত যে, সিনেমা হলে যদি লোক না আসে তাহলে আমাদের সিনেমাটাকে নিয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছতে হবে। এই কথাটাই আমাদের পাখির চোখ। অনেক ছবিই হয়ত একটু প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছয়নি যেখানে তার দর্শক আছে। যেমন ‘মেঘে ঢাকা তারা’ হয়ত কোনোও একটা গ্রামের কেউ দেখেননি কারণ তাদের সুযোগটাই হয়নি। এই প্রান্তিক মানুষগুলোর কাছে সিনেমা এবং অন্যান্য অনেক অল্টারনেটিভ শিল্পকে পৌঁছে দেওয়ার রাস্তাটা তৈরি করতে চাই।

আরও পড়ুন: নন্দনে দিনভর উদযাপনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

প্রশ্ন: কিন্তু এই না পৌঁছনোটা কেন বলে মনে কর তুমি?

সোহিনী: আসলে বিনোদন বিষয়টাকেই আমরা একটা কনজিউমারাইজড্ ব্র্যাকেটে ফেলে দিয়েছি। যেখানে আমাদের বোঝানো হয় যে এটাই সিনেমা, এটাই নাটক বা এটাই লেখা। কিন্তু সবক্ষেত্রে সেটা তো নয়। সারা পৃথিবীতে লাইমলাইটের বাইরে আরও অনেক শিল্প এবং তার জোরদার চর্চা রয়েছে যেগুলো হয়ত সর্বত্র পৌঁছয় না। সেই চর্চার মঞ্চটাই তো বাঁধতে চায় বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।

প্রশ্ন: আর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর কালজয়ী কাজগুলোর সংরক্ষণ নিয়ে কিছু ভাববে না?

সোহিনী: বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত’র ছবিগুলোকে আর্কাইভ করা, রেস্টোরেশন করা এবং দেখানো তো থাকবেই। সংরক্ষণ না হলে পরের প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

প্রশ্ন: বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়ে কি আমরা যথেষ্ট চর্চা করতে পেরেছি? কী মনে হয় তোমার?

সোহিনী: বুদ্ধদা এমন একজন মানুষ যাঁকে সারা পৃথিবীতে ‘মাস্টার ফিল্মমেকার’ হিসেবে দেখা হয়। অস্কার কর্তৃপক্ষ মানে ‘অ্যাকাডেমি সোসাইটি’ বুদ্ধদার উপরে হওয়া কাজগুলোকে সংরক্ষণ করতে চাইছেন। মুম্বইয়ে ওঁকে নিয়ে সাংঘাতিক লাফালাফি আমি নিজে দেখেছি। কেরলে তো মাতামাতি আছেই। কিন্তু সত্যিই নিজের রাজ্যে বা নিজের শহরে ওঁকে নিয়ে চর্চা অনেক কম। সেই চর্চা বাড়ানোটাকেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হিসেবেই দেখছি আমি।

প্রশ্ন: সেটা কেমন করে সম্ভব হতে পারে মনে কর?

সোহিনী: একেবারেই বুদ্ধদার স্বকীয়তা দিয়ে। ওটিটির কল্যাণে কনটেন্টের জোয়ার এলেও সিনেমার ভাষার চর্চাটা কিন্তু ভীষণ একটা দোদুল্যমান জায়গায় আছে এখনও। সবার গল্প বলার ধরণ, শট-টেকিং, মেকিং, ডিজাইন এত স্মার্ট আর ঝকঝকে যে বুঝতেই পারা যায় না কে কোনটা বানিয়েছেন। ছবির ভাষাটা কোথাও গিয়ে যেন একটা নির্দিষ্ট গতে বাঁধা। বুদ্ধদার ছবির ভাষাটাই ছিল স্বতন্ত্র। অনেক ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকারের হয়ত স্বকীয়তা রয়েছে কিন্তু পৌঁছতে পারেননি সব জায়গায়। তাঁদের পাশে থাকতে চাই। অনেকে মজা করে আবার কখনও তাচ্ছিল্য করেও বলেন, শিল্প করতে এসেছে! আমরা এই শিল্পটাকেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিই এবং এই শিল্পটাকে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। বুদ্ধদার মতাদর্শের টানে আমরা সবাই মনের তাগিদে কাজ করি, কিছু পেতে নয়। স্বকীয়তাকে নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই বুদ্ধদার চর্চাকে প্রচুর মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে পারব।

(ছবি সৌজন্য: সোহিনী দাশগুপ্ত’র সোশ্যাল মিডিয়া)

Loading


Share It

One thought on “Exclusive:অস্কার কর্তৃপক্ষ বুদ্ধদার উপরে হওয়া কাজগুলো সংরক্ষণ করতে চায়: সোহিনী

Comments are closed.