অনির্বাণের নিবেদনে আসছে ‘মানিকবাবুর মেঘ’
সৃজিত মুখোপাধ্যায়, ইমতিয়াজ আলি, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, প্রভাত রায়, দেব। এই তালিকায় যোগ হল আরেকটি নাম, অনির্বাণ ভট্টাচার্য। একটু পরিষ্কার করে বলা যাক।
২০১৩। নতুন পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের ছবি ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ প্রেজেন্ট মানে নিবেদন করলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
২০১৪। বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘তিনকাহন’। নিবেদনে ইমতিয়াজ আলি।
২০২২। নতুন পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘দোস্তজী’ নিবেদন করলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
২০২৩। নির্মল চক্রবর্তীর প্রথম ছবি ‘দত্তা’ নিবেদন করলেন প্রভাত রায়।
২০২৪। সব ঠিকঠাক থাকলে রামকমল মুখোপাধ্যায়ের পরবর্তী ছবি ‘বিনোদিনী- একটি নটির উপাখ্যান’ নিবেদন করবেন দেব।
২০২৪। অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘মানিকবাবুর মেঘ‘ নিবেদন করছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
একাকীত্ব। এমন একটা বিষয় নিয়ে ছবি আমরা ‘ফেস্টিভ্যাল’-এর ছবি বলে দাগিয়ে দিই। কিন্তু প্রযোজক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় এবং মোনালিসা মুখোপাধ্যায় সেই ছবিকেই আনছেন বড় পর্দায়।

বৌদ্ধায়ন বললেন, “বড় পর্দায় ছবি মুক্তি দিতে সাহস লাগে। আর সেই সাহসটা পেয়েছি পৃথিবীর বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটা দেখার পরে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে। বিভিন্ন দেশের দর্শক, যাঁদের সঙ্গে বাংলা ভাষার কোনও সম্পর্ক নেই, এমনকী তাঁরা ভারতীয়ও নন, তাঁরা হল ভরিয়ে ছবিটা দেখেছেন। আমাদের তখন মনে হয়েছে, তাহলে বাঙালিরা কেন দেখবে না! তারপর যখন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটা দেখতে ভিড় উপচে পড়ল, তখন বুঝলাম যে একাকীত্বের ছবি তো তাই কোথাও গিয়ে মানুষ কানেক্ট করতে পারছে। সেই সাহসেই বড় পর্দায় রিলিজ করার ভাবনা”।
আরও পড়ুন: বাংলা ছবির নতুন অধ্যায় ‘দেবী চৌধুরানী’র হাত ধরে
কিন্তু চলচ্চিত্র উৎসবের দর্শক তো একেবারেই আলাদা। তাঁরা কি থিয়েটারে যাবেন এই ছবি দেখতে? বৌদ্ধায়ন অবশ্য এক্ষেত্রে যাঁরা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটা দেখেননি কিন্তু বাংলা ছবি দেখেন তাঁদের কথাই মাথায় রাখছেন।

ছবিটি নিবেদন করতে রাজি হওয়া প্রসঙ্গে অনির্বাণের স্বতঃস্ফূর্ত জবাব, “আমি একবার এস্তোনিয়াতে গিয়েছিলাম। আমি সেখান থেকে চলে আসার পরেই শুনতে পাই বৌদ্ধায়নদা ট্যালিন চলচ্চিত্র উৎসবে একটা ছবির নিয়ে গেছেন। তখনই জেনেছিলাম অভিনন্দন ‘মানিকবাবুর মেঘ’ বানিয়েছে, কিন্তু ছবিটা আমি দেখিনি। এরপর দেড় মাস আগে বৌদ্ধায়নদা আর মোনালিসাদি আমাকে একদিন কফি খেতে ডাকেন। তখন ওঁরা আমাকে ছবিটা নিবেদন করার প্রস্তাব দেন। আমি হতচকিত হয়ে যাই। ভয় লাগে, কুন্ঠাও হয়। গানটার কথাও আমি তখন শুনি। আমি তারপর ওঁদের পাঠানো স্ক্রিনারে ছবিটা দেখে আরও কুণ্ঠিত হয়ে পড়ি। এরকম একটা অমোঘ এবং অসাধারণ শিল্পনির্মাণ যেখানে আমার কোনও কৃতিত্ব নেই সেখানে আমার নামটা জুড়ে যাবে! তবু কুন্ঠা নিয়েও আমি রাজি হয়ে যাই। হয়ত ওঁদের মনে হয়েছে আমার নামটা দেখে দশ-কুড়ি-পঞ্চাশ জন অতিরিক্ত মানুষ ছবিটি দেখতে আসতে পারেন। তবে যাঁরা এই ছবিটি দেখতে আসবেন তাঁরা প্রচন্ড গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদী অনুভূতি নিয়ে ফিরবেন”।
তবে অনির্বাণের রাজি হওয়া প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত বৌদ্ধায়ন বলেন, “আমি প্রযোজক হিসেবে এরকম ছোট একটা ছবির জন্য ওঁকে পেয়ে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমরা তো একটা দর্শন থেকে ছবি বানাই। অনির্বাণের সঙ্গে কথা বলে, দেখা করে, কাজ করে আমার ভীষণ মনে হয়েছে ‘সেনসিবিলিটি’ এবং ‘সেনসেটিভিটি’ এই দুটো জায়গা থেকেই অনির্বাণের আর আমাদের দর্শনের কোথাও একটা মিল আছে। সেই সমমনস্কতার জায়গা থেকেই অনির্বাণকে ছবিটা নিবেদন করার কথা বলা”।

‘মানিকবাবুর মেঘ’ দেখে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় কোনও ফারাক না থাকা প্রযোজক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়কে আরও হাইপার লোকাল ছবি বানানোর সাহস দিয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা ছবির মাধ্যমে যত বেশি করে আমাদের শিকড়ের কাছে পৌঁছতে পারব ততই বেশি করে ‘গ্লোবাল’ হতে পারব। বিশ্বজনীন হওয়ার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ ‘মানিকবাবুর মেঘ’। একাকীত্ব প্রথম বিশ্ব এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশের মধ্যে বিভেদ না করা একটা মহামারীর মত। আমরা সবাই আক্রান্ত। অসম্ভব হাইপার লোকাল উত্তর কলকাতার একাকীত্বে ভোগা একটা মানুষের গল্প তাই এস্তোনিয়া থেকে লস অ্যাঞ্জলেস, হংকং থেকে জোহানেসবার্গের মানুষকে একই ভাবে ছুঁয়ে গেছে”।
আরও পড়ুন: ‘ছবি দেখানোর খরচ কমল, দেখার খরচে খিঁচ’, কী বলছে ইন্ডাস্ট্রি?
ছবির জন্য একটি ‘প্রমোশনাল’ গানও গেয়েছেন অনির্বাণ। ‘তোমার আমার গল্প হত যদি’ গানটিকে মিউজিক ভিডিও হিসেবে শুট করেছেন ছবির প্রযোজক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়। গানের কথা অভিনন্দন নিজেই লিখেছেন। শোনা যাচ্ছে থিয়েটারে মুক্তির সময়ে ছবির এন্ড-ক্রেডিটে এই গানটি জুড়ে দেওয়া হবে। তাই বলাই যায় ছবির শুরু এবং শেষে জড়িয়ে থাকবেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মান কুড়িয়ে ১২ জুলাই বাংলায় মুক্তি পেতে চলেছে অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘মানিকবাবুর মেঘ’। মানিকবাবুর ভূমিকায় চন্দন সেন ছাড়াও এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ব্রাত্য বসু, দেবেশ রায়চৌধুরী, অরুণ গুহঠাকুরতা ও নিমাই ঘোষ।