জীবনের মধ্যে মিশে যাওয়াটাকে মিস করি: অনির্বাণ

Share It

অতনু রায়

তাঁর অভিনয় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে আট থেকে আশি। সত্যিই তাই। ‘একেনবাবু’ তাঁকে যে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, সেটাকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন সমস্ত রকমের চরিত্রের মধ্যে। এই মুহূর্তে বাংলার অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা বললে তাঁর নাম প্রথমের সারিতে আসে। সব রকমের ফরম্যাটের তুখোড় অভিনেতা। মনে হয় না এমন কোনও পরিচালক আছেন, যিনি তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চান না। আগামীকাল মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত দুটি ছবি ‘চালচিত্র’ এবং ‘খাদান’। একই সঙ্গে মুক্তি পাবে ওয়েব সিরিজ ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’। একদিনে তিনটে নতুন কাজ। হাজার ব্যস্ততা সামলে অনির্বাণ চক্রবর্তী সময় দিলেন কিছুটা আড্ডার।

প্রশ্ন: ‘চালচিত্র’ ছবিতে তুমি পুলিশ। পুলিশের চরিত্র তুমি আগেও একাধিকবার করেছ। চরিত্রের প্রয়োজনে তুমি একজন পুলিশকে আরেকজন পুলিশের থেকে কিভাবে আলাদা কর?

অনির্বাণ: আমার কাছে পুলিশের চরিত্রের একটাই ‘কমনালিটি’, সেটা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই পেশায় পুলিশ। কিন্তু প্রত্যেকে আলাদা আলাদা মানুষ। তুমি একজন সাংবাদিক। তুমিও জানো যে সব সাংবাদিক এক নয়। তেমনভাবেই প্রত্যেক পুলিশ আলাদা। তাঁরা একটা জিনিস কে কীভাবে দেখেন, তাঁদের জীবনযাত্রা, সবটাই আলাদা। আর আমি সব সময় একটা চরিত্রকে একজন মানুষ হিসেবেই দেখেছি। আমি এমন পুলিশের চরিত্র করেছি, যে খুব ভাল। এমন পুলিশের চরিত্র করেছি যে খুব খারাপ। এমন পুলিশের চরিত্রও করেছি যাকে শুরুতে খারাপ মনে হচ্ছে কিন্তু শেষের দিকে গিয়ে এসে ভাল। আবার ভাল খারাপের মাঝামাঝি পুলিশও। আমার কাছে প্রত্যেকটা চরিত্র আসলে ‘চরিত্র’ হিসেবেই এসেছে, যাঁরা পেশায় পুলিশ। এবার কখনও সে হয়ত একটা ক্রাইম থ্রিলারের অংশ। আমি এভাবেই চরিত্রগুলোকে আলাদা করি।

প্রশ্ন: তুমি অন্য ধারার ছবি এবং হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবি দুটো ক্ষেত্রে একই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছ। তুমি এমন চরিত্র করো যে সেটা ছোট হলেও তা নিয়ে কথা হয়। এটা তো চ্যালেঞ্জিং বটেই। কিন্তু এখন যেহেতু বাংলায় অনেকগুলো কাজ একইসাথে করতে হয়, তখন একটা চরিত্র থেকে আর একটা চরিত্রে খুব কম সময়ের মধ্যে শিফট্ করতে অসুবিধা হয় না?

অনির্বাণ: না। এখন আর অসুবিধা হয় না। বরং যেটা খুব কষ্টকর মনে করে মানুষ, আমার সেটাই এখন সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হয়। হ্যাঁ, অবশ্যই সেটা চ্যালেঞ্জিং যে, আজ আমি রাতে একটা কাজ শেষ করে শুতে গেলাম আর কাল সকালে আমাকে সম্পূর্ণ নতুন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে হবে! আবার এটাই কিন্তু একজন অভিনেতা হিসেবে আমার অভিনয়ের প্রতি ইন্টারেস্টকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। বরং একজন অভিনেতা হিসেবে একইরকম চরিত্রে যদি আমাকে অভিনয় করে যেতে হত, আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং হত। সেই বোরডম কাটানো বেশ কষ্টের হত।

প্রশ্ন: এখন তবে সন্তুষ্ট?

অনির্বাণ: যে এক্সারসাইজটা আমার হয়, সেটা হল আমি আজকে একটা মানুষ আবার কালকে অন্য একটা মানুষ। তার মধ্যে অধিকাংশ চরিত্রই আমার অচেনা, মানে মানুষগুলোকে আমি চিনি না। কিন্তু আমি তাঁদের চরিত্রে অভিনয় করি। এই বিষয়টার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার একটা ফিজিকাল স্ট্রেইন থাকে, কিন্তু মেন্টালি যে স্ট্রাগলটা করতে হয় সেটাকে আমি খুব এনজয় করি।

প্রশ্ন: ‘টাইপকাস্ট’ কথাটা তো ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সত্য। তোমাকে এমন একটা চরিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে যেখানে সিরিয়াসনেসকেও একটা অদ্ভুত মজার মোড়কে তুমি উপস্থাপন করেছ। সেই ‘একেনবাবু’ হিসেবেই মানুষ তোমাকে দেখে অভ্যস্ত। যখন একদম অন্যরকম একটা চরিত্র তোমাকে করতে হয়, তুমি কি সচেতনভাবে চেষ্টা করো যাতে একেনবাবুর ছাপ না থাকে?

অনির্বাণ: না। আমি এটা একদমই সচেতনভাবে করি না। আর আমি যেহেতু ‘ট্রেইনড্’ অভিনেতা নই, কোথাও অভিনয় শিখিনি, তাই আমার আলাদা করে শেখা কোনও প্রসেস নেই। আমি যখন কোনও কমেডি চরিত্রে অভিনয় করি, সেটাকে কিন্তু আমি একটা কমেডি চরিত্র বলে ভাবি না। আমি সেটাকে আর পাঁচটা চরিত্রের মত করেই দেখি। সেটা যেভাবে লেখা আছে, যে চিত্রনাট্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে, তাতেই বোঝা যায় যে কোন জায়গায় কমেডি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি আলাদা করে কমেডি অভিনয় কখনও চেষ্টা করে করি না। আমার মনে হয় সেটা খুব বাজে কমেডি। আমি মনে করি, চিত্রনাট্য যদি কমেডিকে সাপোর্ট না করে তাহলে আসলে কমেডি দাঁড়ায় না। চিত্রনাট্য খুব স্ট্রং হতে হয়। অভিনেতারা তাকে সাহায্য করেন। কিন্তু চিত্রনাট্য যদি খুব বাজে হয় তাহলে কিন্তু কমেডি করা খুব কষ্টকর। তেমনভাবেই সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রেও আমি আমাকে সিরিয়াস হতে হবে, সেটাও ভাবি না। আমি শুধু ওই মানুষটাকে বুঝে রিয়্যাক্ট করার চেষ্টা করি। তাতেই যা তৈরি হয়, সেটা ভাল না খারাপ সেটা মানুষ বলবেন। তবে আমি আলাদা করে কিছু করার চেষ্টা করি না।

প্রশ্ন: আমার মনে হয় এবং অনেকেই বলেন, বহুদিন পরে আমরা বাংলায় এমন একজন অভিনেতাকে পেয়েছি যিনি কমেডি এবং খল চরিত্র দুক্ষেত্রেই জায়গাতেই একইরকম সপ্রতিভ। আমরা পরেশ রাওয়ালকে এভাবে দেখেছি। অনেকেই চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোনও একটা জায়গায় গিয়ে যেন আটকে গেছেন। অনির্বাণ চক্রবর্তী সেই দেওয়ালটা ভেঙেছেন। এটা যে অভিনয়ের ‘ট্রেইনিং’-এর উপর নির্ভর করে না সেটা তো তোমার আগের প্রশ্নের উত্তরে বুঝলাম। তাহলে রহস্যটা কী?

অনির্বাণ: (হেসে) জানি না। এটার উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে খুবই মুশকিল। একটা তো জানি, যেটা হয়, আমি পরিচালক, দর্শক, প্রযোজক সবাইকে ধরেই বলছি; তাঁরা করতে দেন না। তাঁরা অ্যাকসেপ্ট করেন না। এবার আমি এটা করতে পারছি আমি সুযোগটা পাচ্ছি বলে। আমাকে তো সবাই মিলে সুযোগটা দিচ্ছেন! আমাকে যদি চরিত্রগুলোয় কেউ কাস্ট না করত তাহলে আমি যে এই চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে পারি, সেটা দেখানোর সুযোগও পেতাম না। সুযোগটা কিন্তু আমাকে সবাই দিয়েছেন। আমি দর্শককেও ধরব এর মধ্যে।শুরুতেই যদি দর্শক আমাকে অন্য চরিত্রে দেখে বলত যে কমেডি চরিত্র ছাড়া দেখব না তাহলে কিন্তু পরিচালকরা বা প্রযোজকেরা আমাকে আর দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতেন না। সকলের ভালবাসা, আশীর্বাদ, যাই বলি সেটা আছে। আমি আমার কাজটা করার চেষ্টা করেছি। সবাই সেটা চেষ্টা করে, তবু তুমি যেটা বললে, এটা ঘটে। সেটা খুবই দুঃখজনক কিন্তু কী কারণে ঘটে সেটা বলা সত্যিই মুশকিল।

প্রশ্ন: সম্প্রতি আমরা তোমাকে ‘অ্যাকশন’ অবতারেও দেখেছি। সেটা একটা চমক বলা যেতে পারে। তুমি অ্যাকশন কতটা এনজয় করেছ?

অনির্বাণ: দারুণ। আমার যা চেহারা, সেই অনুযায়ী লোকজন এটা ভাববে না। কারণ আমাকে তো এটা আগে কেউ করতে দেখেননি। পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় আমাকে সেই সুযোগটা দিলেন। উনি ভাবতে পেরেছেন যে আমি এটা ঠিকঠাক ‘পুল্-অফ’ করতে পারব। এবং দেখা গেল যে সত্যিই আমি সেটা করতে পারছি। ওটা যখন আমি করতে পারলাম তখন আমি নিজেও জানতে পারলাম এই জিনিসটা আমার পক্ষে করা সম্ভব। একজন অভিনেতা যেটা আগে কখনো করেনি সেটার সুযোগ দেওয়াটাও ভাল এবং নতুন কিছু একটা, যেটা আমার সঙ্গে সাধারণত যায় না, সেটা করাও খুব মজার।

প্রশ্ন: তুমি যে কথাটা বললে, ‘চেহারা’, সেই জায়গা থেকেই আমার পরের প্রশ্ন। আমরা সারা পৃথিবীর ছবি যখন দেখি, অনেক এমন অ্যাকশন হিরো দেখি যাঁরা তথাকথিত গ্ল্যামারাস হিরো নন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে সফল। কিন্তু তোমার কথায় কোথাও গিয়ে একটা সীমাবদ্ধতার প্রশ্ন উঠছে। সীমাবদ্ধতাটা দর্শকের? নাকি পরিচালকের?

অনির্বাণ: এটা হয়ত সবাই মিলে। তবে এটাও সত্যি যে আস্তে আস্তে সময়টা পাল্টাচ্ছে। পুলিশ বলতেও তো কোনও এক ধরনের চেহারা নয়! বাস্তবে বরং পুলিশের ভিন্ন রকমের চেহারাই হয়। পুলিশ মানেই ছ’ফুট লম্বা বা অ্যাকশন করছে মানেই তাঁর জিমে যাওয়া পেটানো চেহারা, বাস্তবে সবসময় তো তা নয়। এই রিয়্যালিটিকে পরিচালকেরা যত অ্যাকসেপ্ট করছেন, ততই দর্শকেরাও আস্তে আস্তে অ্যাকসেপ্ট করে নিচ্ছেন।

প্রশ্ন: জটায়ুর পার্টনার ফেলুদা বেশি ভাল লাগার নাকি পুলিশ অনির্বাণ চক্রবর্তীর বস টোটা রায়চৌধুরী?

অনির্বাণ: জটায়ু যখন ফেলুদার সঙ্গে থাকে তখন কিন্তু তাঁরা বন্ধু বেশি। তাঁরা মিলেমিশে অনেক কিছু সলভ্ করেছে কিন্তু সেই জন্য তাঁরা সাথে নেই। বন্ধু হিসেবে আছে। কিন্তু ‘চালচিত্র’ ছবিতে তাঁরা সহকর্মী। দুটো ক্ষেত্রে ইক্যুয়েশন আলাদা কিন্তু দুটোই চমৎকার। ফেলুদা-জটায়ু কম্বিনেশনে আমরা চারবার অভিনয় করে ফেলেছি, কিন্তু এখানে একটা আলাদা ছবি। আমি দুটোই খুব এনজয় করেছি।

প্রশ্ন: বড়পর্দা, ওটিটি এবং মঞ্চ, তিন ফরম্যাটেই তুমি জমিয়ে কাজ করছ…

অনির্বাণ: মঞ্চে তো এখন সেভাবে সময় দিতে পারি না, তবে চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: আরেকটা প্ল্যাটফর্ম টেলিভিশন অধরা থেকে যাচ্ছে কেন? টেলিভিশনে এখন অনেক ছোট কাজও হচ্ছে মানে বেশি দিনের এনগেজমেন্ট নয়, সাহিত্য নিয়েও কাজ হচ্ছে। তেমন কোনও কনটেন্ট পেলে টেলিভিশনে তোমাকে দেখা যাবে?

অনির্বাণ: আমার আলাদাভাবে কোনও প্ল্যাটফর্মের উপর বিরাগ নেই। আসলে আমার খুব সময়ের অভাব। সময়ের অভাবে তিনটে প্ল্যাটফর্মেই ঠিক করে সময় দিতে পারছি না। আর প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মের একটা নিজস্ব ‘ডিম্যান্ড’ রয়েছে। টেলিভিশনে মূলত যেটা হয়, সেটা হল মেগা। যাঁরা মেগাতে কাজ করেন তাদের কাছে শুনেছি, সেভাবে অন্য কিছু করে ওঠার সময় পান না। আমাকে এত রকমের কাজ করতে হয় যে সময়ের অভাবের জায়গা থেকেই এই মুহূর্তে আমি টেলিভিশনের কথাটা ভাবছি না।

প্রশ্ন: আমরা জীবনে যখনই ব্যস্ত হয়ে পড়ি, আমাদের প্রত্যেকের জীবন থেকে কিছু পছন্দের জিনিস বাদ পড়ে যায়। এই হাজার ব্যস্ততার মধ্যে তোমার জীবন থেকে পছন্দের কী কী জিনিস বাদ পড়েছে?

অনির্বাণ: সারাদিনের মধ্যে আমার সবথেকে প্রিয় সময় সন্ধেবেলা। যখন আমার অন্য একটা জীবন ছিল, তখন যখন আমার কাজ থাকত না, তখন সন্ধেবেলায় আমি একা একা উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে বেড়াতাম। সেটা এখন আর পারি না। সেটা সবথেকে বেশি মিস করি। আরেকটা হয়, এটা কোনও জ্ঞানের কথা নয়, আমি নিজের মত করে মানুষজনকে দেখি, বোঝার চেষ্টা করি। আমার মনে হয়, যত বেশি ‘গ্রাউন্ড’ লেভেলের মানুষকে দেখা যায়, তাঁদের সঙ্গে থাকা যায়, তত বেশি জীবনকে দেখা যায়। কারণ উপরের দিকে তো আমরা সবাই একটা ছোট্ট বাবল্-এর মধ্যে চলে আসি, ওইটুকুই জগৎ হয়ে যায়। তার বাইরে আমরা আর কিছু দেখি না। আগে যখন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাওয়া আসা করা ছিল, খুবই বিরক্ত লাগত। ভাবতাম, কী ভিড়! মেট্রোতে যাওয়া, অটোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, এগুলো চলে গেছে। এখন আর আমার জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে এগুলোকে ‘ইনকর্পোরেট’ করে নেওয়াটা সম্ভব নয়, কিন্তু সেই জীবনটারও তো একটা মজা আছে! এটা কেমন শোনাবে জানি না, কিন্তু আমি বলব যে আজকে এই কমফর্ট পেয়েও ওই পুরনো সময়টাকে মিস করি। জীবনের মধ্যে মিশে যাওয়াটাকে মিস করি।

প্রশ্ন: এখন তো শান্তিতে সিনেমা দেখতে যাওয়াও হয় না? সেলফি বা অটোগ্রাফ বিরক্ত করে?

অনির্বাণ: সব সময় যে খুব বিরক্ত লাগে সেটা বলব না। এক এক সময়ে সেটাকে এনজয়ও করি। মানুষ চিনতে পারছে বলেই তো কাছে আসছে। বেড়াতে গেলেও এটা হয়। কিন্তু এটাকে প্রবলেম বলব না। কারণ কাজের জন্যই পরিচিতি বাড়ছে, তাই মানুষজন আসছে। ভালই লাগে। কিন্তু আমি যখন বেড়াতে যাই, এক এক সময় মনে হয় একদম একা থাকতে পারলে ভাল হত। যাঁরা আসছেন, ছবি তুলছেন, সেটাও এনজয় করি। তবু মনে হয়, একদম একা যদি বসে থাকতে পারতাম তাহলে কতই না ভাল হত!

প্রশ্ন: পরিচালনা করবে না?

অনির্বাণ: আমার মনে হয়, পরিচালনা করতে গেলে অনেক টেকনিক্যাল জ্ঞান দরকার। আমি তো পরিচালনা করাটা শিখে আসিনি। চারপাশে চোখ খোলা রাখার জন্য যেটুকু দেখতে পাচ্ছি, বুঝতে পারছি, সেটুকুই। পরিচালনা করার আগে অনেক কিছু শিখতে হয়। আমি এখনও তার ধারে কাছেও নেই। আমি একটা গল্প বলতে চাইছি, সেই ইচ্ছেটা আমার যথেষ্ট…কিন্তু পরিচালনা করার জন্য যে শিক্ষার দরকার সেটা আমার একেবারেই নেই।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের অভিনেতা অপূর্ব’র সঙ্গে কাজ করলে। ওঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

অনির্বাণ: খুবই ভাল। আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল অ্যানাউন্সমেন্টের সময়। তারপর শুটিং শুরু হল। ও নিজের উদ্যোগে আমি কোন মেকআপ ভ্যানে আছি জেনে সেখানে এসে আমার সঙ্গে আলাপ করেছে। ও যে আমার কাজ দেখেছে, ভাল লেগেছে, জানিয়েছে। ও যখন কলকাতায় এসেছিল, একসাথে বসে আমরা আড্ডা দিয়েছি। ভাল খাবারের লিস্ট করে নিয়ে এসেছিল, একদিন খাবারের অর্ডার করল, আমরা একসাথে বসে খেলাম। খুবই চমৎকার লেগেছে।

প্রশ্ন: সব মিলিয়ে বাংলা কন্টেন্ট খুব সন্তোষজনক জায়গাতে আছে বলে অনেকেই মনে করছেন না। হারানো গৌরব ফিরে পেতে, ‘পিনাকল্’ পয়েন্ট ছুঁতে কী করা প্রয়োজন মনে কর?

অনির্বাণ: আমার মনে হয়, সব ধরণের ছবি তৈরি হওয়া দরকার। মানে আমি নানারকম সেন্সিবিলিটির ছবির কথা বলছি। সবগুলো যে একই সাথে খুব ভাল চলবে তেমনটা নাও হতে পারে। একই সাথে আমরা হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবি বলতে যেটা বুঝি সেগুলো সফল হওয়া কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। এটা তোমার পছন্দ হল কিনা বা আমার পছন্দ হল কিনা, সেটা একদমই ম্যাটার করে না। জনগণের পছন্দ হওয়া দরকার। কমার্শিয়াল ছবি হিট হওয়া দরকার কারণ, সেটা যদি না হয় তাহলে আর কোনও ধরনের ছবি সফল হবে না। কারণ আল্টিমেটলি একটা বিজনেস অ্যাসপেক্ট রয়েছে সেটা তো অস্বীকার করতে পারবে না! ছবিটা তৈরি হল, লোকে দেখল না। রিফিউজ করল। সেখানে টাকাটা ফেরত এল না। সেটা যদি হয়, তাহলে প্রযোজক পরের ছবির জন্য টাকাটা ঢালবেন কেন? বা অন্য ধরণের ছবির জন্য? একটা এক্সপেরিমেন্টাল ছবি করার কথা ভাববেন? সেটা যদি না হয়, তাহলে কতদিন একজন নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কাজ করে যেতে পারবেন বা ছবি বানাতে পারবেন? আমি মেজরিটির কথা বলছি। তাই সব ধরণের ছবি তৈরি হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। আর সব ধরণের ছবি যদি খুব ভাল ব্যবসা করে তাহলে তো খুবই ভাল। প্রত্যেকেই ভাল ব্যবসা চায়। কিন্তু সেটা তো বাস্তবে হয় না। কিন্তু কমার্শিয়াল ছবি হিট হওয়া খুব দরকার।

Loading


Share It