তিন খুদের জীবনের অঙ্ক মেলানোর গল্প বলতে আসছে ‘অঙ্ক কি কঠিন’

Share It

সোমনাথ লাহা

অঙ্ক স্কুলের পাঠ্যব‌ইয়ের হোক কিংবা জীবনের, যদি না-মেলে, তখন চোখ-মুখ জুড়ে ছেয়ে থাকে একরাশ হতাশা। কিছুই যেন তখন আর মন ভাল করতে পারে না। এরকম স্কুলের অঙ্কের সঙ্গে জীবনের অঙ্ক মিশিয়ে চিত্রনাট্যের বুননে সেটিকে জুড়েছেন পরিচালক সৌরভ পালোধী। ছবির নাম ‘অঙ্ক কি কঠিন’।

ছবির ভরকেন্দ্র জুড়ে রয়েছে তিনটি বাচ্চা। তাদেরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে কাহিনি। এছাড়াও ছবিতে অন্যতম প্রধান চরিত্রে রয়েছেন পার্নো মিত্র, ঊষসী চক্রবর্তী, প্রসূন সোম, শঙ্কর দেবনাথ ও সঞ্জিতা মুখোপাধ্যায়। ছবির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা তিনজন খুদে অভিনেতা হলেন তপোময় দেব, গীতশ্রী চক্রবর্তী ও ঋদ্ধিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবিতে তাদের নাম যথাক্রমে বাবিন, ডলি ও টায়ার।

ছবির কাহিনিতে এবার একটু উঁকি দেওয়া যাক। টায়ার, ডলি ও বাবিন ক্লাস টু-থ্রির পড়ুয়া। তাদের স্কুলে যাওয়ার একমাত্র কারণ মিড-ডে মিল পাওয়া। এই তিনজন খুদে থাকে এমন একটি বস্তিতে, যেখান থেকে পাঁচ-সাত মিনিট দূরেই রয়েছে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা। কিন্তু তাদের বস্তি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে চরম দারিদ্র। সেখান থেকে আকাশছোঁয়া বাড়ি দেখা গেলেও তাকে ছোঁয়া স্বপ্ন দেখার মতই। বাবিনের স্বপ্ন বড় হয়ে ডাক্তার হ‌ওয়ার। কারণ সে পাড়ার এক কাকাকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেখেছে। বাবিনের বাবা কনস্ট্রাকশনের কাজে মালপত্র জোগানের কাজ করেন। তিনি অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। বাবিনের বাবার ভূমিকায় রয়েছেন শঙ্কর দেবনাথ। আর মায়ের চরিত্রে দেখা যাবে ঊষসী চক্রবর্তীকে। অপরদিকে ছোট্ট ডলি চায় নার্স হতে। কারণ তার মা নার্স। টায়ার চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে।

আরও পড়ুন: এবার শেখর‌-ললিতা রূপে গৌরব-দেবচন্দ্রিমা, ‘পরিণীতা’ নিয়ে হ‌ইচ‌ই

এই তিন খুদের জীবনেরই একজন হিরো রয়েছে। সে হল শাহরুখ। সে লোকের বাড়িতে বাড়িতে খাবার, জিনিসপত্র ডেলিভারি করে। শাহরুখ থাকলে কাজলের কথা চলেই আসে। এখানেও কাজল রয়েছে। শারুখের প্রেমিকা সে। কিন্তু এই শাহরুখ-কাজলকে দেখে কেউ শিস-সিটি বা হাততালি দেয় না। বরং জাত-পাতের দোহাই দিয়ে চোখরাঙানি দেয়। সমাজের বুকে থাকা এত সমস্ত বাধা-বিপত্তি, সংশয় কাটিয়ে এক হতে পারবে শাহরুখ-কাজল? পূর্ণতা পাবে তাদের ভালোবাসা! শাহরুখের চরিত্রে অভিনয় করেছেন থিয়েটারের অভিনেতা প্রসূন সোম। কাজলের ভূমিকায় রয়েছেন পার্নো মিত্র।

এদিকে করোনার কোপে পড়াশোনায় ছেদ পড়া বস্তির এই তিনটি বাচ্চার স্বপ্ন ছুঁতে চাওয়ার তীব্র ইচ্ছে। বাবিন, টায়ার, ডলি মিলে একটা হাসপাতাল বানাতে চায়। এক পরিত্যক্ত নির্মীয়মাণ বহুতলের একটি তলায় বসে সেই পরিকল্পনা করে ওরা। হাসপাতালের একটা দারুণ নামও স্থির করে ফেলে, ‘আব্বুলিশ বাড়ি’। অর্থাৎ যে বাড়ি থেমে গিয়েছে। আর তা বাস্তবায়িত করার জন্য একে একে নানা জিনিসপত্র জড়ো করে সেখানে। শেষ পর্যন্ত কি ওরা আদৌ হাসপাতাল গড়ে তুলতে পারে? গলি থেকে রাজপথের দিক চলা তাদের এই স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথ কি সফলতা আনবে? সেই উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন সৌমিত দেব ও পরিচালক স্বয়ং।

আরও পড়ুন: সিনেমা না পেইন্টিং? ছবি হবে! হতাশ পরিচালক সুদীপ্ত

ছবিজুড়ে রয়েছে শ্রেণিসংগ্রাম, শৈশবের স্বপ্ন দেখার সাহসের পাশাপাশি প্রেমের বাতাসের ছোঁয়া। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন থিয়েটারের বেশ কয়েকজন দক্ষ অভিনেতা। ডিসিএম ফিল্ম অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারের এই ছবির প্রযোজক রানা সরকার। ছবির সংগীত পরিচালনায় দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। সিনেমাটোগ্রাফার অঙ্কিত সেনগুপ্ত, যিনি সৌরভের সাম্প্রতিক ওয়েবসিরিজ ‘খোলাম কুচি’তেও ক্যামেরার দায়িত্ব সামলেছেন। সম্পাদনায় প্রণয় দাশগুপ্ত।

একদম রিয়্যাল লোকেশনে এই ছবির শুটিং করেছেন পরিচালক। ছবির বেশিরভাগ অংশের শুটিং হয়েছে রাজারহাট অঞ্চলে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে এই ছবির ফার্স্ট লুক পোস্টার সহ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের লুকস্। সেগুলো রীতিমত নজর কেড়েছে দর্শকদের।

প্রসঙ্গত, এই ছবির হাত ধরে দীর্ঘ সাত বছর পর বড়পর্দায় ছবি পরিচালনায় ফিরলেন সৌরভ পালোধী। ২০১৬ তে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর প্রথম ছবি ‘কলকাতায় কলম্বাস’। সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মীর, তনুশ্রী চক্রবর্তী ও গৌরব চক্রবর্তীর মত অভিনেতারা। এবার পরিচালক বেছে নিয়েছেন শৈশবের স্বপ্নপূরণের গল্পকে।

এখন দেখার, ‘অঙ্ক কি কঠিন’ কতখানি দাগ কাটতে পারে সিনেপ্রেমীদের মনে। সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পাবে এই ছবি।

Loading


Share It