ভারতীয় রাগ সঙ্গীতকে মডার্ন মিউজিক প্রোডাকশনের মোড়কে পরিবেশন করলে দারুণ হয়: অণ্বেষা
অতনু রায়
১৬ বছর আগে রিয়্যালিটি শো’র মঞ্চ মাতানো যে মেয়েটিকে নিয়ে বাঙালি গর্ব করত, আজ তাঁকে নিয়ে গর্বিত সারা দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি। বিভিন্ন ভাষার গানে একইরকম সাবলীল তিনি। মিউজিক কম্পোজার হিসেবেও সফলভাবে কাজ করছেন অণ্বেষা দত্ত গুপ্ত (Anwesshaa Datta Gupta)। অণ্বেষা’র সঙ্গে একান্ত আড্ডায় উঠে এল অনেক কথা:
প্রশ্ন: অণ্বেষা, ১৬ বছর কাটিয়ে ফেললে ইন্ডাস্ট্রিতে। বাংলা গানের ইন্ডাস্ট্রিকে কতটা বদলাতে দেখলে?
অণ্বেষা: আমি যখন শুরু করেছিলাম, বেসিক গানের অ্যালবাম তখনও হচ্ছিল। তাই কিছু বেসিক গান বা মৌলিক গানের অ্যালবাম করার সুযোগ আমার হয়েছে। তবে সেটা ছিল ‘ফেডিং স্টেজ’। ডিক্লাইনিং স্টেজ ছিলও বলতে পার। যেহেতু আমার প্লেব্যাক কেরিয়ারটা পাশাপাশি চলছিল, তাই বাংলা এবং সর্বভারতীয় ছবিতেও আমার গানগুলো বেশি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। সেই একটা সময় চলল। তারপরে বেশ কিছু বছর ধরে দেখলাম বাংলা গানের যে বাঙালি এনার্জি ব্যাপারটা ছিল, সেটা বাংলা ছবির গানে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল। আমি এটাকে ভাল বা খারাপ কিছু বলছি না, আমি বলতে চাইছি যে শুধু ভাষাটাই বাংলা রয়ে গেল কিন্তু অ্যাপ্রোচটা অনেকটা হিন্দি ও ইংরাজির মত হয়ে গেল।
প্রশ্ন: সেটা তুমি কেমনভাবে নিয়েছিলে?
অণ্বেষা: আমার সেটা যে খুব খারাপ লেগেছে তা নয়। কিন্তু আমি একই সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের চারটে ভাষাতেও প্লে-ব্যাক করি তো, ওখানে গিয়ে কাজ করে আমার একটা বড় উপলব্ধি হল। আমাদের যে নিজস্ব জিনিসগুলো রয়েছে, সেটা ভারতীয় রাগ সঙ্গীত হতে পারে বা আমাদের এখানকার মাটির যে মেলোডি, সেইগুলোকে একদম ছেড়ে না দিয়ে মডার্ন মিউজিক প্রোডাকশনের মোড়কে যদি পরিবেশন করা যায়, সেটা দারুণ হতে পারে। আমি খুব ‘ইন্সপায়ার্ড’ হলাম। আমার বারবার মনে হত, এটা আমাদের বাংলাতেও কেন হতে পারে না? আমাদের যা আছে, তা নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত। আবার ৪-৫ বছর ধরে এমন একটা সময় এসেছে যে মানুষ কিন্তু আবার ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ মিউজিকে ঢুকছেন। শুধু টার্মটা বদলেছে ‘বেসিক গান’ থেকে।
প্রশ্ন: কীভাবে বুঝতে পারছ?
অণ্বেষা: যেহেতু আমি অন্যের গান করার পাশাপাশি নিজের গান লেখা আর সুর করা শুরু করেছি, আমি এটা বুঝতে পারছি। মানুষ আবার নিজেদেরকে ‘এনগেজ’ করছেন। আমার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে আমারই তৈরি করা গান যখন আমি রিলিজ করি, সেটা কিন্তু প্রচুর সংখ্যায় মানুষ দেখে, শোনে, কমেন্ট করে। সেটা থেকে আমি বুঝতে পারি।

প্রশ্ন: বাহ, এ তো খুব ভাল লক্ষণ…
অণ্বেষা: ছবির গান মানে বিশাল একটা ব্যাপার আর ‘নন-ফিল্ম’ গান মানে সেরকম কিছু না, আমাদের দেশে এই ধারণা বা বিভাজনগুলোও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। হ্যাঁ, তবে এটা অবশ্যই বলব যে আমাদের দেশে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক এখনও ‘ইমার্জিং’ স্টেজে আছে, পশ্চিমের দেশগুলোর মত অত বড় এখনও হয়নি। আমরা ‘গ্রো’ করছি। এখানে এখনও প্লে-ব্যাক বা এই ধরণের ব্যাপারগুলো বেশি গুরুত্ব পায় কিন্তু এটাও ঠিক যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক আস্তে আস্তে আবার জায়গা ফিরে পাচ্ছে। মাঝখানে এটা শূন্যে গিয়ে ঠেকেছিল। এই বদলগুলো আমি আমার গানজীবনে দেখেছি, দেখছি।
প্রশ্ন: আমরা গান শুনতাম। সেই জায়গাটা এখন গান দেখার জায়গাতে পৌঁছেছে। মিউজিক ভিডিও ছাড়া মানুষ কি আগের মতো গানের সঙ্গে কানেক্ট করছেন? নাকি বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে ভিজ্যুয়াল?
অণ্বেষা: যদি একজন শ্রোতা হিসেবে বলি, আমি যে ধরণের গান শুনতে পছন্দ করি সেখানে আমি শোনার অভিজ্ঞতা বেশি পছন্দ করি। আমি অডিও এক্সপেরিয়েন্সটা চাই। আমি ছোটবেলায় গল্প শুনতেও ভালবাসতাম। আমার মনে হয়, অডিও এক্সপেরিয়েন্সে একটা কল্পনার জায়গা থাকে। কিন্তু যখনই কোনও একটা ভিজ্যুয়াল দিয়ে দেওয়া হয় তখন আমরা একটা ‘টেমপ্লেট’ পেয়ে যাই যে এটার ‘পিক্টোরিয়াল রিপ্রেজেন্টেশন’ এরকমই হবে বা এই গানটা তো এরকমই দেখানোর কথা ছিল। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, শুধু শুনলে যে ম্যাজিকটা মাথার মধ্যে তৈরি হত বা যে ‘ফিল্’ বা এক্সপেরিয়েন্সটা পেতাম, সেটা ভিডিওর ক্ষেত্রে কিছুটা ল্যাক করে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সবাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে। আজকে আমাদের মিউজিক সার্কেলে অনেকে বলেন, এখন নতুন একটা গান তৈরি করতে যাওয়া খুব বিরক্তিকর। নতুন গান মাথায় আসা প্রচন্ড খরচসাপেক্ষ একটা ব্যাপার এখন, শুধু গান তৈরি করলে হবে না…
প্রশ্ন: … মিউজিক ভিডিওর ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হয়…
অণ্বেষা: …একদমই। মানে ইউটিউবে না দিলে একটা নতুন গান শুনতে মানুষ প্রস্তুত নয়। তবে এরকম অনেক শ্রোতাও রয়েছেন যাঁরা বিভিন্ন অডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে গান শুনছেন। অনেকে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেও জানান। আমি হাঙ্গামা থেকে আমার কথা আর সুরে ‘মিজাজ-এ-ইস্ক’ (Mizaaj-e-Ishq) নামে একটা ইন্ডিপপ অ্যালবাম করেছিলাম। অনেকেই সেটা আইটিউনস্ থেকে কিনেছিলেন। কিন্তু হ্যাঁ, এখন সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য অনেক কিছুই বেশি করে ভিজ্যুয়াল হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: অডিও ক্যাসেট বা সিডির ইনলে কার্ডও একটা নস্ট্যালজিয়া। তোমার কেরিয়ারের শুরুতে তুমিও পেয়েছ। আজকে ডিজিট্যাল মিডিয়াম হয়ত ‘ক্রিস্ট্যাল ক্ল্যারিটি’ দিচ্ছে, ভাল ইয়ারফোনের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু অ্যালবামের ইনলে কার্ডে নিজের নাম লেখা থাকা, মিস করো?
অণ্বেষা: হ্যাঁ। এখন অনেকে ‘ই-বুক’, অডিও বুক থেকে বইয়ের মজাটা নিতে চাইছেন কিন্তু হাতে ধরে বই পড়ার যে অনুভূতি সেটা ‘ই-বুক’ বা অডিও বুক থেকে আসে না। বইয়ের পাতাটা পুরানো হয়ে গেলেও তার অন্য রকমের একটা গন্ধ, পুরোটা নিয়ে একটা এক্সপেরিয়েন্স। শুধুমাত্র গল্পটা তো নয়! এটাও ঠিক সেরকমই। তার মানে ডিজিট্যাল যুগের উন্নতির সঙ্গে আমরা এগিয়ে যাব না বা থেমে থাকব সেটাও নয়। ডিজিট্যাল যুগে এসে, যেটা তুমি বললে, সেটা আর পাই না। আমার যেহেতু শুরুর দিকে অ্যালবাম করার সুযোগ হয়েছে, সেইখানে ইনলে কার্ডগুলো ডিজাইন করা, কীরকম ছবি থাকবে, কী কী ছবি হবে, সেগুলো সত্যিই একটা আলাদা রকমের অভিজ্ঞতা। সেটা তো মিসিং বটেই। আমার শুরুর সময়টা একটা ‘ট্র্যানজিশন পিরিয়ড’ ছিল, আমার সৌভাগ্য যে আমি এগুলো পেয়েছি।
প্রশ্ন: তুমি এতগুলো ইন্ডাস্ট্রিতে গান করেছ, করছ। ভাষা নিয়ে তোমার কোনও অসুবিধা হয়েছে? বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয় ভাষাতে?
অণ্বেষা: সমস্যা তেমন বলব না। দক্ষিণ ভারতের চারটে ভাষার মধ্যে আমার সব থেকে কঠিন লাগে মালয়ালম। প্রথম প্রথম মালয়ালম ভাষায় গাইতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু মালয়ালমে আমার বেশ কিছু ভাল গান গাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মালয়ালম মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু খুব ‘রিচ্’। গান গাওয়ার সুযোগ যে ইন্ডাস্ট্রি থেকেই আসুক সেটা তো সবসময়ই ভাল লাগে। তবে মালয়ালম ভাষায় গান রেকর্ড করাটা আমার কাছে খুব টাফ ছিল। দক্ষিণের তামিলেও ঠিক আছে, আর তেলুগুতে আমি এতই নিয়মিত গাই যে ওই ভাষাটা আমার কাছে অনেকটা হিন্দির মতোই হয়ে গেছে গাইতে গাইতে।
প্রশ্ন: তেলেগু ভাষাটা কি একটু একটু করে বুঝতেও পারছ?
অণ্বেষা: না না, একেবারেই নয়। আসলে যখন কেউ একটা ভাষায় গান গায়, শুনলে মনে হয় যে সে খুব বুঝে গায়। কিন্তু সেটা নয়, এটা একটা হ্যাবিট। আসলে পুরোটা বোঝা সম্ভব নয়, কারণ দক্ষিণের ভাষাগুলোর সঙ্গে ভারতের অন্যান্য জায়গায় ভাষার তো অনেকটা তফাৎ। বাকিদের কথা বলতে পারব না, আমি আমার কথা বলছি, ভাষাটা হয়ত সেভাবে বুঝিনি কিন্তু কিছু কিছু শব্দের মানে জানি। যেমন তামিল গানে ‘কাজল’, ‘কুঞ্জুম’ শব্দগুলোর মানে জানি। কিছু কিছু শব্দ থাকে যেগুলো বারবার ঘুরে ফিরে গানের মধ্যে আসে, গাইতে গাইতে সেগুলোর মানে জেনে যাই আস্তে আস্তে। গানের একটা বেসিক ইমোশন থাকে, কোনোটা মজার গান, কোনোটা প্রেমের গান, কোনোটা দুঃখের গান; সেই ইমোশনটাকে বুঝে নিয়ে তারপরে গানটাকে গাই। এছাড়া মেলোডির তো নিজস্ব একটা ভাষা থাকেই, যেটা ঠিক কমিউনিকেট করে। সেটাও অনেকটা হেল্প করে।
প্রশ্ন: তুমি কম্পোজার হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিলে এবং অনেক কম্পোজ করেছ। আমার মনে আছে শুরুর দিকে তুমি যখন ‘কাগজের নৌকো’ করলে, খুব ভাল হল। তারপরে এতগুলো দিন চলে গেছে। আজ কম্পোজার অণ্বেষা নিজেকে কোন জায়গায় দেখছে?
অণ্বেষা: এইটা বলবার জন্য আমার আরও কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, নতুন হওয়ার একটা অ্যাডভান্টেজ আছে। আমি যখন যেটাই বানাবো, সেটাই মানুষের ফ্রেশ লাগবে। আজকে থেকে দশ বছর পরে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে যদি আমার আরও অনেক বেশি কম্পোজিশন হয়ে যায়, বেশ কিছু ছবিতে যখন আমি কম্পোজ করার সুযোগ পাব, তখন আসলে বোঝা যাবে আমার স্টকে কী কী আছে। আমি এখনও এই ব্যাপারটাতে প্রমাণিত নয়। তাই আমি মনে করি এখনই নিজেকে কম্পোজার হিসেবে বিচার করতে যাওয়া ঠিক হবে না।
প্রশ্ন: অনেককে বলতে শুনেছি ছবির জন্য কম্পোজ করতে গেলে পরিচালক-প্রযোজকের অনেক কথা মাথায় রেখে করতে হয়। তুমি যেমন নিজের মত কাজ করতে পছন্দ কর, তাতে তুমি কি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাজই করতে চাইবে? নাকি ছবির জন্যও বেশি কম্পোজ করতে চাইবে?
অণ্বেষা: আমি সব রকমের কাজ করতে চাই। কারণ, আমি যত রকমের কাজ করব ততই আমি বুঝতে পারব যে আমি সব ধরণের কাজ করার জন্য তৈরি কিনা। না হলে বুঝতেই পারবনা। তাই যা যা কাজ করা সম্ভব আমি সব কাজই করতে চাই। আমার মাথায় এরকম কিছু নেই যে এটা আমার জন্য বেশি ভাল বা কিছু। আমি দক্ষিণের ছবির জন্য অবশ্যই কম্পোজ করতে চাই। কারণ ওখানে ওরা মিউজিক কম্পোজারকে খুব বড় একটা সম্মানের জায়গা দেয়। হিন্দি কোনও ছবির কাজ এলেও আমি নিশ্চয়ই করব। তবে আমি সত্যিই এখন ‘অ্যাগ্রেসিভলি’ গিয়ে কাউকে পিচ করি না। যে মারাঠি ছবি ‘পাহিজে জাতিছে’ (Pahije Jatiche) তে আমি ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর আর মিউজিক করেছি, সেটাও নিজে থেকেই আমার কাছে এসেছিল।
প্রশ্ন: কীভাবে?
অণ্বেষা: দক্ষিণের একজন পরিচালক নরেন্দ্র বাবু (Narendra Babu), নিজেই আমাকে অ্যাপ্রোচ করেন। উনি আমার ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক শুনেছেন, এবং আমাকে মাঝে মাঝে সেটা লিখতেন যে ভাল লেগেছে। আমি একবার ওঁকে বলেছিলাম যে আমার দক্ষিণের ছবিতে মিউজিক করার খুব ইচ্ছে। ওঁর ছবিতে আমি কন্নড় ভাষায় প্রচুর প্লেব্যাক করেছি। সেই সূত্রেই আমাকে চিনতেন এবং স্নেহ করতেন। উনি জানতেন যে আমি কম্পোজও করি, তাই এই ছবিটার যখন কথাবার্তা চলছিল তখন আমাকে মনে করেন। আমি ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ। এখনও পর্যন্ত কয়েকটা ছবিতে মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আমি সব সময় খুব ওপেন মাইন্ডেড। আমি নিজেকে কখনও একটা নির্দিষ্ট গন্ডিতে আটকে রাখতে চাইনি। এমনকী আমি যে কম্পোজ করতে পারব, সেটাও আমি কখনও ভাবিনি। শুরু থেকে আমি সবসময় নিজেকে একজন সিঙ্গার হিসেবেই দেখেছি। যখন আমি কম্পোজ করতে শুরু করি, সেটা আমার কাছে খুব সারপ্রাইজিং। তখন আমার মনে হয়েছিল যে, নিজেকে কখনও লেবেল করা উচিত নয় কারণ, আমাদের ভিতরে অনেক কিছু লুকানো থাকে যেটা আমরা সেভাবে জানি না। আজকে কিছু একটা করতে গিয়ে যদি ব্যর্থ হই ঠিক আছে, সেক্ষেত্রে আমাদের সামনে আবার সুযোগ আছে উঠে দাঁড়ানোর। খুব বেশি হলে কী হবে? পারব না। রিজেকশন আসবে। কিন্তু চেষ্টা করে দেখলে তো একটা বড় সমুদ্রও খুলে যেতে পারে। তাই সবসময় চেষ্টা করা উচিত বলে আমার মনে হয়।

প্রশ্ন: তোমাকে আমরা রিয়্যালিটি শো’তে দেখেছি। তুমি সাফল্যটা ধরে রাখতে পেরেছ এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছ। এখন রিয়্যালিটি শো’র সংখ্যা অনেক বেড়েছে তা সত্ত্বেও আমরা সেরকমভাবে কোন শিল্পীকে উঠে আসতে দেখছি না কেন? জাতীয় স্তরে সাফল্য আসছে না। কোথায় পিছিয়ে থাকছে তারা?
অণ্বেষা: আমার মনে হয় সময় একটা বড় ফ্যাক্টর। কোন সময়ে কোন জিনিসটা মানুষ ‘অ্যাকসেপ্ট’ করছে সেটারও বোধহয় একটা ব্যাপার থাকে। আমি যে সময়ে এসেছিলাম, সেই সময় রিয়্যালিটি শো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিল। আজ আমার এত গান হওয়ার পরেও এরকম কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যাঁরা সেই ১৬ বছর আগে টেলিভিশনে দেখা একটা বাচ্চাকে দিয়েই কিন্তু আমাকে রিলেট করেন। তার মানে, সেটা কতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে এতদিন পরেও মানুষ সেটা মনে করছে! রিয়্যালিটি শো’র জন্য সেটা খুব ভাল একটা সময় ছিল। সেদিক থেকে দেখতে গেলে আমরা কিন্তু লাকি। আমি বলব না যে তারপরে ট্যালেন্ট আসেনি। সেটা বলা খুবই অন্যায় হবে। অনেক ভাল ভাল ট্যালেন্ট এসেছে। পবনদীপ (Pawandeep), অরুনিতার (Arunita) মত ট্যালেন্ট এসেছে এবং ওরা কাজও করছে। তবে হ্যাঁ, শো’র সংখ্যা এখন এত বেশি যে যেকোনো চ্যানেল খুললে কিছু না কিছু শো দেখা যায়। মানুষ কজনকে দেখবে আর কজনকে মনে রাখবে! ট্যালেন্টের কোনও ঘাটতি নেই, কিন্তু শো’র ওভারডোজ হয়ে গেছে। তার ফলে মানুষের পক্ষে এত জনকে দেখে মনে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এবারে এই বাচ্চাগুলো নিজেদের গান গাইবে কিনা বা কত বছর ‘সাসটেইন’ করতে পারবে, সেটা ওদের উপরেই নির্ভর করবে।
প্রশ্ন: বইয়ের পাতার গন্ধের কথা উঠল। এখন বই পড়ার সময় পাও?
অণ্বেষা: কোভিডের সময়ে যখন বেশ কিছু কাজ খুব ঢিমে তালে চলছিল ওই সময়টায় বেশ কিছু বইয়ের ধুলো পরিষ্কার হয়েছিল। আসলে বই পড়াটা অন্যরকম একটা এক্সপেরিয়েন্স। সারাটা দিন ফাঁকা, নিজের মত আছি, কোনও কাজ নেই, এরকম না হলে আমার ইচ্ছে করে না যে একটা বই খুলে বসি। কারণ, মাথায় কিছু না কিছু কাজ ঘুরতে থাকলে আমার বই পড়তে ইচ্ছে করে না। সম্প্রতি তাই খুব একটা বই পড়া হয়নি। তবে, বই পড়তে আমি খুব ভালবাসি। নানা রকমের বই। ফাঁকা সময় পেলে বই পড়াটা আমার একটা হবির মধ্যেই পড়ে।
প্রশ্ন: প্রিয় লেখক কে?
অণ্বেষা: আমি আসলে ডিটেকটিভ গল্প বেশি পড়ি। প্রিয় বললে আগাথা ক্রিস্টি (Agatha Christie) আর সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)।
প্রশ্ন: এখন অনেক সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী বিভিন্ন কনসেপ্ট নিয়ে পডকাস্টিংয়ে আসছেন। তোমার কি পডকাস্টিংয়ের কোনও ইচ্ছে আছে?
অণ্বেষা: হ্যাঁ, পডকাস্টিংয়ের ইচ্ছে আমার আছে। আমি বিভিন্ন পডকাস্টারদের শুনি, বেশ ভাল লাগে ফরম্যাটটা। কারণ এগুলো ওইরকম ইউজ্যুয়াল ইন্টারভিউয়ের মত হয় না। অনেক সোলো পডকাস্টারকেও আমি শুনি, বেশ ভাল লাগে। আমার মনে হয় যে, এরকম ধরণের একটা সিরিজ বা কিছু শুরু করতে গেলে আমাকে যথেষ্ট পরিমাণে ব্রেইন এবং এনার্জি ব্যয় করতে হবে। ঠিক করে করতে না পারলে শুধুমাত্র করার জন্য আমি একটা জিনিস শুরু করতে চাই না। এত কাজের চাপের মধ্যে এগুলো ভাবা হয়ে ওঠে না। কিন্তু একটু ফাঁকা সময় পেলে আমি নিশ্চয়ই করব কারণ, আমার ইচ্ছে আছে। এছাড়া আরও কিছু টুকটাক বাংলা ছবি, বাংলা টেলিভিশনে কয়েকটা ভাল কাজ করছি আর নিজের জন্য কিছু গানের লাইন-আপ তো থাকেই। আমার ইউটিউব চ্যানেলটা এখন গ্রোয়িং ফেজে আছে। মাঝে মাঝে চেষ্টা করি নিজস্ব কিছু কম্পোজিশন ওখানে রিলিজ করার।