বুদ্ধবাবু আজ শরীর থেকে ছুটি নিলেন, সত্তার মৃত্যু হয়েছে আগেই

Share It

নির্মল চক্রবর্তী

আজ খুব কলেজবেলার কথা মনে পড়ছে। এসএফআই করতাম। সুভাষ চক্রবর্তী, সঈফুদ্দিন চৌধুরী এবং অবশ্যই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মত মানুষদের আদর্শ হিসেবে সামনে রেখে এগিয়েছিলাম। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় ওঁর শিক্ষা, রুচি, ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করত। আজও আমার ওঁকে আদর্শ ভেবেই শান্তি পাওয়া। একজন সত্যিকারের রোল মডেল। ওইরকম শিক্ষিত, সজ্জন রাজনীতিবিদ যেকোনো দেশের বা রাজ্যের পক্ষে গর্ব করার মত। তাই না? একজন এমন মুখ্যমন্ত্রী, শুধু স্বপ্নই দেখাননি, স্বপ্নপূরণের পথটাও দেখিয়েছিলেন। উনি প্রমাণ করেছিলেন কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। এই স্লোগান সামনে রেখে আমরা যদি এগোতে পারি, দেশের মধ্যে শীর্ষে থাকবে আমাদের রাজ্য। আজ আবার বলার কথা মনে হল।

শালবনীতে ৩০,০০০ কোটি বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছিল জিন্দাল গোষ্ঠী। সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠী তাঁদের কারখানা প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ করে ফেলেছিল। সবকিছু নষ্ট করতে মাঠে নেমে পড়েছিল তৎকালীন সব বিরোধী দল। সঙ্গে মাওবাদী এবং সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ। কী লাভ হল? মানুষকে বারবার মিথ্যে বলে, ভয় দেখিয়ে আসলে তাদের সর্বনাশ করা হল।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আসলে আজ মারা যাননি, ওঁকে যেদিন যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষ ভোটে হারিয়েছিল এবং রাজ্যের পাকাপাকি সর্বনাশ করেছিল সেদিনই ওঁর সব সত্তার মৃত্যু হয়েছিল। নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব হবে না ঘোষণা করার পরও দিনের পর দিন বিরোধীরা মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তা কেটে আটকে এমন একটা অবস্থা করে রেখেছিল যেখানে পুলিশ-প্রশাসনও ঢুকতে পারবে না এবং তারা যা খুশি অন্যায় করে যাবে, সেদিনই কি ওঁর সত্তার মৃত্যু হয়নি?

ওঁর কালে কী ছিল? সল্টলেক সেক্টর ফাইভের আইটি সেক্টরে দেশের সমস্ত বড় বড় সংস্থাকে নিয়ে এসেছিলেন। বহুজাতিক সংস্থাগুলো কলকাতায় নিজেদের প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। কারণটা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

ওঁর অভাবে ১৩ বছর পর আজ আমাদের রাজ্যের কী হাল! কোনও চাকরি নেই, শিক্ষা নেই, শিল্প নেই…আছে শুধু অনুদান। ছাত্ররা দিশাহীন। যুবসমাজ স্বপ্ন দেখেনা আর। একটু ভাল ছাত্রদের ৮০ শতাংশ পাশ করেই রাজ্যছাড়া। চাকরির সন্ধানে বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, পুণে, চেন্নাই, দিল্লি এমনকি ওড়িশাতেও চলে যাচ্ছে। সেইদিন বিরোধীরা কিছু সংবাদমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ক্ষমতায় না আসতে পারলে পরের পাঁচ বছরে হয়ত আমাদের রাজ্য সবক্ষেত্রে সেরা হতে পারত।

তাই আজকের দিনে বলতেই হচ্ছে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আজ হয়ত শারীরিক ভাবে বিদায় নিলেন কিন্তু এই রাজ্যের মানুষ ওঁর সঙ্গে যে ভুল করেছে তার ফল আমাদের ভুগতে হবে আগামী আরও দশ-পনের বছর। এই ভুলের কোনও ক্ষমা হয়ও না। যত পরে মানুষ উপলব্ধি করবে, ততই বেশি দেরি হবে। হয়ত আমাদের রাজ্য ততদিনে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়াণার মত রাজ্যগুলোর নীচে জায়গা করে নেবে! রাজ্যের এমন অবস্থা ওঁকে দেখে যেতে হল, এটাই বেদনার।

আজ আমার তোলা ওঁর একটা ছবি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। এভাবেই উনি প্রকৃত শিল্পীদের সামনের সারিতে এগিয়ে দিতেন। নিজে পিছনে থাকতেই পছন্দ করতেন। কখনও সংবাদমাধ্যমে নিজের ছবি ছাপানোর দরকার পড়েনি ওঁর।

লাল সেলাম কমরেড। ভাল থাকবেন রোল মডেল। ভাল থাকবেন প্রিয় মানুষ।

(লেখক চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রাক্তন চিত্রসাংবাদিক)

Loading


Share It