অঘোরীদের জীবন এবার তথ্যচিত্রে, অঙ্গনে, নেপথ্যে এহসাস কাঞ্জিলাল
সোমনাথ লাহা
প্রাচীন তথা পুরাকাল থেকেই ভারত সাধু-সন্তদের পীঠস্থান। হিন্দু সন্ন্যাসীদের ঘিরে এদেশের মাটিতে রয়েছে বহু ঘটনা। লৌকিক এবং অলৌকিকের ঘেরাটোপে যা আজও সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্ণয় করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই হিন্দু সন্ন্যাসীদের একটি আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় গোষ্ঠী হল অঘোরী। আধ্যাত্মিকতার জন্য তাঁদের একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এঁদের উৎপত্তি এবং ইতিহাস রহস্যাবৃত, কারণ তাঁরা গোপন ও অধরা একটি গোষ্ঠী। মূলত শৈব উপাসক অঘোরীদের বাসভূমি শ্মশান। শরীরে ছাই মাখা, মৃত মানুষের মাথার খুলিকে পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা এবং মানুষের মৃতদেহ থেকে মাংস খাওয়ার মতো বিষয় তাঁদের সাধনার সঙ্গে জড়িত। সমাজের প্রচলিত নিয়ম ও মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা বরাবরই মানুষের সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে উঠে নিজেদের কার্য সম্পাদন করে।
তাই অঘোরীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের উৎসাহ চিরকালীন। এবার সেই রহস্যাবৃত অঘোরীদের জীবনের নানা দিক উন্মোচিত হতে চলেছে তথ্যচিত্রে। কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করেছেন এক বঙ্গকন্যা। এহসাস কাঞ্জিলাল। এহসাসের তৈরি তথ্যচিত্র ‘দ্য সেক্রেড স্কালস্’ -এর হাত ধরেই এবার রহস্যময় অঘোরীদের জীবনচর্যার অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন দর্শকরা। প্রসঙ্গত তার প্রথম তথ্যচিত্র ‘রেড নটস’ ইতিমধ্যেই যথেষ্ট প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। এরপরই এহসাস শুরু করেছেন নিজের পরবর্তী তথ্যচিত্র ‘দ্য সেক্রেড স্কালস’ -এর কাজ। তথ্যচিত্র নির্মাণের পাশাপাশি এহসাস একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাও।
অঘোরী সাধুদের জগতের নানা দিক ফুটে উঠবে এই তথ্যচিত্রটিতে। তাঁদের পবিত্র আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ঐতিহাসিক উৎপত্তি এবং সমসাময়িক সমাজে তাঁদের গুরুত্বের দিকটিও উঠে আসতে চলেছে ‘দ্য সেক্রেড স্কালস’ নামের তথ্যচিত্রে। এই ডকুমেন্টারিটি এক অর্থে অঘোরীদের জীবন সংক্রান্ত একটি গভীর অন্বেষণের দিককে তুলে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ অপ্রচলিত এই গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের চোখে তাঁদের ভুল নিত্যনৈমিত্তিক চর্চার জন্য পরিচিত। এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে
তাঁদের আধ্যাত্মিক আচার অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বের উপর আলোকপাত করতে চলেছেন পরিচালক। ফলে দর্শকদের সামনে উঠে আসবে অঘোরীদের জীবনধারার এক গভীর চিত্র।
সুমনা কাঞ্জিলাল এবং মোজোটেল এন্টারটেইনমেন্টস ও ডিস্ট্রিবিউশনস দ্বারা প্রযোজিত, ‘দ্য সেক্রেড স্কালস’ তথ্যচিত্রটি এই রহস্যময় সম্প্রদায়ের সাধুদের জীবনশৈলীর উপর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ এবং শ্রদ্ধাশীল আলোকপাত। ২৩ বছরের এহসাসের এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আবারও একবার অনন্য বিষয়ভাবনার পাশাপাশি আকর্ষণীয় তথ্য দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত হবে বলেই মনে করছেন নির্মাতারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ -এ পথচলা শুরু করা মোজোটেল এন্টারটেইনমেন্টসের নেপথ্যে রয়েছেন এহসাস ও তার মা সুমনা কাঞ্জিলাল। ইতিমধ্যেই পাঁচটি প্রশংসিত প্রযোজনার হাত ধরে বাংলা ছবির আঙিনায় সংস্থাটি জায়গা করে নিয়েছে।
সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এহসাস এবার ‘দ্য সেক্রেড স্কালস’-র মাধ্যমে অঘোরীদের জীবন ও বিশ্বাসভাবনার দিকগুলির প্রতি নিরন্তর অন্বেষণ চালিয়ে সেই প্রতিচ্ছবি দর্শকদের সামনে হাজির করেছেন। বর্তমানে প্রযোজনা স্তরে থাকা এই তথ্যচিত্রটির মুক্তির দিন এখন স্থির করা হয়নি। তবে এমন বিষয়ভাবনা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রের প্রতি যে দর্শক ও সিনেপ্রেমীদের উৎসাহ থাকবে তা বলাই বাহুল্য।