Exclusive: ‘বাংলা ছবির চ্যালেঞ্জ’:বাজার তৈরির দাওয়াই ফিরদৌসুল হাসানের

Share It

বাংলা ছবির সময় কেমন এখন? আপনি প্রযোজকদের জিজ্ঞাসা করুন, অভিনেতাদের জিজ্ঞাসা করুন, পরিচালকদের জিজ্ঞাসা করুন। নিশ্চিতভাবেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাবেন। এবার দর্শক আর সোশ্যাল মিডিয়ার বড় অংশকে জিজ্ঞাসা করুন। সব হিসেব আপনার গুলিয়ে যাবে। কিন্তু সত্যিই কি গুলিয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতি? জানতে এবং জানাতে চেষ্টা করছে ‘দ্য কাউন্টার কালচার’। আজ প্রথম কিস্তি। বললেন ফিরদৌসুল হাসান; প্রযোজনা সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন’ এর কর্ণধার।

ফিরদৌসল জানালেন, “যদি খুব ভাল করে দেখা যায়, পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ছবির সংখ্যার নিরিখে ভারতবর্ষ এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। ভারতবর্ষে আমরা ২০ টা ভাষায় ছবি করি। আমরা প্রযোজকেরা কিন্তু সবসময় একটা কম্পিটিশনের মধ্যে থাকি। আমি যখন একটা ছবি করি, আমাকে কিন্তু হিন্দি, ইংরাজি বা অন্য আঞ্চলিক ছবির সঙ্গে কম্পিটিশন করতে হয়। আমরা কোনও ‘ক্লিন সুইপ’ পাই না। আমাদের সবসময় কম্পিটিশনের মধ্যে দিয়েই টিকতে হয়।”

আরও পড়ুন: ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এ ভালবাসার বৃষ্টি প্রসেনজিতের

বিনোদন জগতের চ্যালেঞ্জের শুরুটা মনে করিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমাদের চ্যালেঞ্জটা কিন্তু তখন শুরু, যখন দূরদর্শন আমাদের জীবনে আসে। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন যে সন্ধের পর মানুষ আর সিনেমাহলে যাবেন না। কিন্তু দূরদর্শন আসার পরে আমরা দেখলাম যে বহু পুরনো ছবি একটা নতুন জীবন পেল। কারণ, দূরদর্শন সেই ছবিগুলো দেখাতে শুরু করল। অনেক অভিনেতা যাঁরা ছবিতে আর সুযোগ পেতেন না বলে কাজ থেকেই সরে গিয়েছিলেন, নতুন করে দূরদর্শনে ফিরলেন। অনেক নতুন মানুষ আবার টেলিভিশন থেকে ছবি করতে গেলেন। তাই দেখা গেল আদপে টেলিভিশন একটা ভ্যালু অ্যাড করল।”

তবে সব কিছুই যে এই দীর্ঘ পথে ভ্যালু অ্যাড করেনি তা পরিষ্কার ‘মহানন্দা’ প্রযোজকের পরের কথাতেই। বললেন, “এরপর আমাদের জীবনে এল ভিডিও, পাইরেসি, ক্যাসেট। সেটা এমন একটা জায়গায় পৌঁছলো যে সিনেমাহলের থেকে ভিডিও হল বেশি হয়ে গেল! সেই চ্যালেঞ্জও কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি যথেষ্ট কষ্ট করেই সামাল দিয়েছে। এরপরে হুড়মুড়িয়ে স্যাটেলাইট চ্যানেল আসতে শুরু করল এবং শেষমেশ ওটিটি। ভাল-খারাপ মিশিয়ে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু পথ বেরিয়েছে। তাই পুরো গ্রাফটা দেখলে বোঝা যায়, এন্টারটেইনমেন্ট সেক্টর কিন্তু ‘ইকনমিক্যালি’ গ্রো করেছে, নিচের দিকে যায়নি।”

তাহলে এখন কি প্রযোজকেরা অন্য ছবির সঙ্গে লড়াই ছাড়া খুব একটা চিন্তার কিছু দেখছেন না? উত্তরে সম্পূর্ণ অন্য এক চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন ‘অপরাজিত’ ছবির প্রযোজক। বললেন, “আমার উপলব্ধি, ছবি বানানোর আগে একজন প্রযোজক হিসেবে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে ছবিটা আমরা কার জন্য বানাচ্ছি। সিনেমাহলের জন্য, টেলিভিশনের জন্য নাকি ওটিটির জন্য? এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।”

আরও পড়ুন: বাংলা ছবির নতুন অধ্যায় ‘দেবী চৌধুরানী’র হাত ধরে

বাংলা ছবির দর্শককে একেবারেই হালকা ভাবে দেখতে নারাজ ‘শেষ পাতা’র প্রযোজক। জানিয়ে দিলেন, “দর্শক কিন্তু আজ অনেক বুদ্ধিমান। আজকে আমি একটা ড্রয়িংরুম ড্রামা বানিয়ে দর্শক সেটাকে বড়পর্দায় দেখতে যাবে এই আশা করতে পারি না। কারণ, বাঙালি যথেষ্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে খরচ করে। তাই সিনেমাহলের জন্য বানালে আমাকে অডিও এবং ভিজ্যুয়াল সমস্ত দিক থেকেই একটু লার্জ স্কেলে ছবি বানাতে হবে। সেটা না হলে দর্শক দেখবে না, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। হল পাই না, শো পাই না, দর্শক যাচ্ছে না বলে কান্নাকাটি করে আর লাভ নেই।”

বাংলা ছবির টিকিটের দাম প্রসঙ্গে নিজের পর্যবেক্ষণের কথাও জানালেন হাসান। বললেন, “মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে সম্ভবত অনেক ক্ষেত্রেই টিকিটের দাম নাগালের বাইরে থাকছে। তাই একটা ভাল ছবি দেখতে চাইলেও অনেকক্ষেত্রেই সাধ্য ইচ্ছাপূরণে অন্তরায় হচ্ছে। তাই সে ছবিটা ওটিটিতে আসার অপেক্ষা করছে। আমাদের এখন সত্যিই নন্দনের মত আরও কিছু হলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যেখানে ৩০ টাকা, ৫০ টাকা, ৭০ টাকা খরচ করে মানুষ ছবি দেখতে পারে।”

বাংলা ছবির বাজার তৈরি না হওয়াকেও অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন আসন্ন ‘পদাতিক’ ছবির প্রযোজক। বাজার নিয়ে সপাট জবাবে বলেন, ” সিনেমা হোক বা সাবান, যে কোনও কিছু বিক্রি করতে গেলে আগে তার বাজার তৈরি করতে হয়। পৃথিবীর সবথেকে বেশি বলা ভাষার মধ্যে ছ’নম্বর স্থানে থাকা ভাষায় ছবি বানিয়েও আমরা সেই বাজারটা তৈরি করতে পারিনি। এটা কিন্তু আমাদের একটা বিরাট ব্যর্থতা। আজকে যদি ১২ কোটি তামিল বা ৫-৬ কোটি পঞ্জাবি মানুষ থাকেন, তাঁরা যদি ২৫ কোটি, ৫০ কোটি, ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারেন, আমরা পারব না কেন? তাই চ্যালেঞ্জের দিকে না দেখে আমাদের উচিত আত্মবিশ্লেষণ করা। আমাদের একসঙ্গে বসে সদুপায় বার করতে হবে। বুঝতে হবে, কোথায় ভুলটা হচ্ছে। আমি আমার দিক থেকে করছি। আমার মনে হয় সকলেরই এটা করা উচিত।”

Loading


Share It