‘কালরাত্রি’-র হাত ধরে ওয়েবে সৌমিতৃষা, ট্রেলার লঞ্চে হাজির কনেসাজে

Share It

সোমনাথ লাহা

অঘ্রাণের শনিবাসরীয় বিকেল। গুটি গুটি পায়ে শীতের আনাগোনা শুরু শহর তিলোত্তমায়। শুরু হয়ে গিয়েছে বিয়ের মরশুম। হঠাৎ করেই হ‌ইচ‌ই-এর অফিস সুসজ্জিত বিয়েবাড়ির আদলে। সেখানেই কনের সাজে সিঁথিতে সিঁদুর পরে হাজির অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুন্ডু। এতদূর পড়ে চমকে ওঠা পাঠকদের উদ্দেশ্যে জানাই এগুলো সবটাই তাঁর আসন্ন ওয়েব সিরিজের ট্রেলার লঞ্চের সৌজন্যে। বাস্তবের সঙ্গে এর কোন‌ও সম্পর্ক নেই।

ছোটপর্দায় ‘মিঠাই’ এবং বড়পর্দায় ‘প্রধান’-এর সাফল্যের পর এবার ওটিটি-র আঙিনায় পা রাখছেন সৌমিতৃষা। অয়ন চক্রবর্তী পরিচালিত মার্ডার মিস্ট্রি সিরিজ ‘কালরাত্রি’-তে প্রতাপনগরের বনেদি রায়বর্মণ পরিবারের ব‌উ দেবী রূপে এবার দেখা যাবে অভিনেত্রীকে। তবে বিয়েবাড়ি বলতেই চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে অর্থাৎ হ‌ইহুল্লোড়, আনন্দ, গায়ে হলুদ থেকে বিয়ে, বাসর হয়ে ফুলসজ্জার জৌলুস, খাওয়াদাওয়া, এখানে তা নেই। বরং সানাইয়ের সুর সরিয়ে শোনা যাচ্ছে কান্না, উলুধ্বনির পরিবর্তে চিৎকার! আলতা বদলে যাচ্ছে রক্তে। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে রয়েছে রহস্যময়তা।

হ‌ইচ‌ই অরিজিনাল সিরিজ ‘কালরাত্রি’-তে রহস্যের ঘনঘটা ঠিক এমনটাই। প্রতাপনগরের সুপ্রতিষ্ঠিত, শিক্ষিত বনেদি পরিবারে বড় ছেলে রুদ্র রায়বর্মণের ব‌উ হয়ে বাড়িতে পদার্পণ করে দেবী। কিন্তু সেই পরিবারের নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যেই রয়েছে প্রচুর টানাপোড়েন। এমন একটি পরিবারের ব‌উ হয়ে আসার আগেই বিয়ের পরদিন অর্থাৎ কালরাত্রি, যেদিন নববিবাহিত স্বামী এবং স্ত্রী একে অন্যের মুখ দেখে না। সেদিন দেবীর বর মারা যাওয়ার মতো ভবিষ্যতবাণী করে তার‌ই বন্ধু মায়া। ঘটনাচক্রে মায়ার ভবিষ্যতবাণী সফল করে কালরাত্রির দিন‌ই খুন হয় দেবীর বর রুদ্র। সেই খুনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে খোঁপার কাঁটাকে। কিন্তু কে খুন করলো রুদ্রকে? তদন্ত করতে আসেন ডিএসপি সাত্যকি সান্যাল। ইতিমধ্যেই রায়বর্মণ পরিবারে দেবীকে কেন্দ্র করে টানাপোড়েন আর‌ও তীব্র হয়েছে। তদন্তে নেমে সাত্যকি দেখেন এই খুনের সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে বাড়ির প্রায় সকলেই। এমনকি দেবী নিজেও!

নিজের প্রথম ওয়েব সিরিজ নিয়ে সৌমিতৃষা যে রীতিমত উৎসাহিত সেটি কনের সাজে সজ্জিত হয়ে গ্র্যান্ড এন্ট্রি থেকেই স্পষ্ট। অভিনেত্রীর কথায়, “বাড়িতেই সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে সাজগোজ করেছি। অয়ন স্যারকে জিজ্ঞাসা করে সিঁদুর কিনে গাড়ির মধ্যে নিজেই পরে নিয়েছি।” সিরিজ প্রসঙ্গে সৌমিতৃষা জানান, “এটা এসভিএফের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। অয়ন স্যারের থেকে প্রথমদিন গল্পটা শুনেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।” তবে তাঁর উপরেও দর্শকের প্রত্যাশা চাপ নিয়ে অভিনেত্রীর মত, “মানুষ যখন ভালবাসা দেয়, তখন আমিও চাই তারা আমাকে আর‌ও বেশি ভালবাসুন। সেজন্য‌ই তাদের প্রত্যাশাও অনেকখানি বেশি। তাই আমিও চেষ্টা করছি অনেকরকম চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরার। দেবী চরিত্রটায় অভিনয় দক্ষতা তুলে ধরার জায়গা রয়েছে অনেকখানি। কতটা করতে পেরেছি সেটা দর্শকরাই বলবেন।” পরিচালক অয়ন চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌমিতৃষা বলেন, “অয়ন স্যার খুব গুণী একজন মানুষ। এই কাজটা করতে গিয়ে অনেককিছু শিখেছি অয়ন স্যারের থেকে। সেটা আমার অভিনয় দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে অনেকখানি বাড়িয়েছে।”

দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “আমি এমনিতেই খুব কম কাজ করি। নিজের চরিত্র, নির্দেশক এবং প্রযোজনা সংস্থার পাশাপাশি সেই কাজটি তারা গুরুত্ব সহকারে করবেন কিনা সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিই। অয়ন আমাকে যে চরিত্রটা দিয়েছে সেটায় এত রকম শেড রয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে দেখলে বহুস্তরের একটা চরিত্র। সেটা আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। প্রতিটি চরিত্র যেভাবে চিত্রনাট্যে জায়গা পেয়েছে সেটা আমার ভাল লেগেছে।”

অনুজয়ের কথায়, “পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে শুনে ভেবেছিলাম, খাকি পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সাত্যকি সান্যাল চরিত্রটা আমার খুব প্রিয়। কারণ, পুলিশ অফিসার ফোর্সে কাজ করলে চরিত্রগুলো অনেকটা মেশিনের মতো হয়। এই চরিত্রটা সেরকম নয়। মানবিক, সংবেদনশীল একটি চরিত্র। তার মধ্যে ভয়-ভালবাসা-প্রেম রয়েছে। ডিএসপি পদমর্যাদার হলেও এটা ঘাম-রক্তের গন্ধমাখা খুব চমৎকার করে লেখা চরিত্র।”

রাজদীপের মতে, “আমার নিজের চরিত্র নিয়ে আমি বেশি কিছু বলব না। কারণ চিত্রনাট্য শুনে আমি নিজেও ঘেঁটে গিয়েছিলাম। এতগুলো চরিত্র, এতগুলো ফ্ল্যাশব্যাক। আমরা সাধারণত গল্পে দেখি একটা খুন হয়, খুনি ধরা পড়ে। সেটা শেষ হয়ে যায়। এখানে এতগুলো খুন, ফ্ল্যাশব্যাকে খুন, অনেকবছর আগে খুন। প্রত্যেকের এক একটা ব্যাকস্টোরি রয়েছে। আমার চরিত্রটিকে কখনও ডার্ক, কখনও ধূসর মনে হবে। আবার কখনও মনে হবে বেচারা। সিরিজের দ্বিতীয় সিজনে অনেক বিষয় খোলসা করা হবে।”

ওটিটি ডেবিউ দিয়ারও। অভিনেত্রীর কথায়, “এই কাজটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল। হ‌ইচ‌ই-তে আগে কাজের কথা হলেও, সেটা হয়ে ওঠেনি। এবার হ্যাঁ বলার কারণ অয়নদা এবং গল্পটা। প্রথম যেদিন চিত্রনাট্য শুনতে গিয়েছিলাম তিনটে এপিসোড শোনার পর দশ মিনিটের বিরতিতে সবাই মিলে একটাই আলোচনা করছিলাম পরের তিনটি এপিসোডে কি হবে! শুনে এতটাই আকর্ষণীয় লেগেছিল। এটা আমার কাছে খুব ভাল সুযোগ। অয়নদা এত শান্ত, ধীরস্থির একজন মানুষ যে কাজটা করে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি যেভাবে শিবানী চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলেছি আশাকরি দর্শকদের ভাল লাগবে।”

সৌনক জানান, “বরুণ রায়বর্মণ চরিত্রটায় অভিনয় করে আমি নিজে অনেককিছু শিখেছি। ভীষণ এনজয় করেছি কাজটা করে। কারণ, আমি যেটা করতে স্বাচ্ছন্দ্য তার বাইরে গিয়ে যখন কিছু করতে হচ্ছে, সেই চ্যালেঞ্জটাকে গ্রহণ করে সেটা সঠিকভাবে করতে পারার মধ্যে আলাদাই আনন্দ রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে অয়নদা আমাকে স্বাধীনতা দেওয়ার পাশাপাশি সাহায্য‌ও করেছেন।” তবে তাঁকে পরিচালকরা এরকম নেতিবাচক চরিত্রে কাস্ট করেন কেন, তার উত্তরে অভিনেতা বলেন, “ জানি না আমাকে দেখে দুষ্টু মনে হয় কিনা! সেটা পরিচালকরাই বলতে পারবেন।”

পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী জানান, “এই বনেদি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে নানা ধরণের জটিলতা রয়েছে। তাই সম্পূর্ণ রহস্যের সমাধান এই সিজনে সম্ভব নয়। তবে দর্শকরা একেবারে নিরাশ হবেন না। এই সিজনের কাহিনি সেভাবেই শেষ করা হয়েছে। সিজন টু তে আর‌ও কিছু রহস্য আসবে। পুরোনো কিছু রহস্যের উন্মোচন হবে। তবে এটার এপিসোড সংখ্যা কম হ‌ওয়ায় গল্প টানটান থাকবে। ফলে দর্শকদের ভাল লাগবে।”

সিরিজে মুখ্য চরিত্র দেবীর ভূমিকায় সৌমিতৃষা ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অর্থাৎ দেবীর স্বামী রুদ্রের চরিত্রে রয়েছেন ইন্দ্রাশিস রায়। পরিবারের কর্তা সমরেশ রায়বর্মণ ও তার স্ত্রী ইন্দ্রানীর চরিত্রে দেখা যাবে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ও রূপাঞ্জনা মিত্রকে। বাড়ির মেজো ছেলে আশিস রায়বর্মণ ও ছোট ছেলে বরুণ রায়বর্মণের চরিত্রে রয়েছেন রাজদীপ গুপ্ত ও সৌনক রায়। বাড়ির মেয়ে শিবানীর চরিত্রে রয়েছেন দিয়া চক্রবর্তী। বাড়ির মেজবৌ রাই এবং ছোটব‌উ কীর্তির চরিত্রে যথাক্রমে দেখা যাবে সৈরিতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও সম্পূর্ণা মন্ডলকে। ডিএসপি সাত্যকি সান্যালের চরিত্রে রয়েছেন অনুজয় চট্টোপাধ্যায়। দেবীর বন্ধু মায়া এবং রায়বর্মণ বাড়ির পরিচারিকা তানির চরিত্রে দেখা যাবে যথাক্রমে কৌশানী মুখোপাধ্যায় ও দীপান্বিতা সরকারকে। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন অনুষ্কা চক্রবর্তী, স্বাতী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

সিরিজের কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। সিনেমাটোগ্রাফার রম্যদীপ সাহা। সম্পাদনায় সংলাপ ভৌমিক। সংগীত পরিচালনা ও আবহের দায়িত্ব সামলেছেন শুভদীপ গুহ। সিরিজের ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সহ সিরিজের কলাকুশলীরা। এসভিএফ প্রযোজিত ছয় পর্বের এই সিরিজটি দেখা যাবে হ‌ইচ‌ই-তে ৬ ডিসেম্বর থেকে।

Loading


Share It