“যে লেগ্যাসিটা বহন করছি আমরা সেটার কতটা যোগ্য?”: কোরক

Share It

অতনু রায়

মুক্তির অপেক্ষায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘পদাতিক’। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন প্রযোজিত মৃণাল সেনের এই জীবনীচিত্রে তরুণ ‘মৃণাল’-এর ভূমিকায় তিনি। টিজার, ট্রেলারে তাঁকে দেখে সকলেই বলেছেন, বাহ্। তিনি কোরক সামন্ত। ছবি মুক্তির আগে ‘দ্য কাউন্টার কালচার’ এর সঙ্গে আড্ডায় অনেক না বলা কথা বললেন কোরক

প্রশ্ন: যখন তোমাকে অফার দেওয়া হল যে তরুণ মৃণাল সেনকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হবে, সেই সময় কী রকম অনুভূতি হয়েছিল? ভয়ের নাকি আনন্দের? আনন্দ তো নিশ্চয়ই…

কোরক: আনন্দ তো নিশ্চয়ই আছে। তবে হ্যাঁ, প্রাথমিক আনন্দটা কেটে যাওয়ার পরে ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। মৃণাল বাবু কেমন দেখতে ছিলেন, কেমন ভাবে কথা বলতেন, কীভাবে মানুষজনকে ইন্সপায়ার করেছিলেন সবটারই একটা পরিণত বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পরের রেফারেন্স আছে। যে বয়সের অভিনয়টা আমি করেছি তা নিয়ে মৃণাল বাবুর নিজের লেখাপত্র ছাড়া সেইভাবে ডকুমেন্টেড কিছু নেই…

প্রশ্ন: …হ্যাঁ, শুধুই লিখিত রেফারেন্স। পিক্টোরিয়াল রেফারেন্স কিছু নেই।

কোরক: হ্যাঁ। পিক্টোরিয়াল রেফারেন্স বলতে কিশোর বয়সের একটাই ছবি পাওয়া যায়। তাও সেটা ১৭-১৮ বছর বয়সের। আর সেইটাই আমাদের ‘এরকম দেখতে ছিলেন মানুষটা’ বোঝার সম্বল ছিল।

প্রশ্ন: তোমার নিজের মৃণাল সেন সম্বন্ধে যেটুকু বোঝা তা তখন কাজে লাগেনি?

কোরক: আমি শুধু এইটুকুই জানতাম যে, কুড়ির দশকে জন্মানো একজন মানুষ আর তারপরে তাঁর বেড়ে ওঠা। সেই সময়ের বাঙালি, যে যুদ্ধ দেখছে-দাঙ্গা দেখছে-মন্বন্তর দেখছে-দেশভাগ দেখছে! এইরকম একটা লড়াকু বাঙালির যে চেহারা, কথাবার্তা বা গোটা জাত হিসেবেই যে মানসিক অবস্থা সেইটা আমি কীভাবে ‘অ্যাডপ্ট’ করব? সত্যি কথা বলতে, একদম ভেতরের যে বেঁচে থাকার ক্রাইসিস সেটা কিন্তু আমরা খুব কমই উপলব্ধি করেছি। কয়েক বছর আগে একটা প্যান্ডেমিক এসে আমাদেরকে পুরো পেড়ে ফেলল। তাহলে সেই সময়টায় কত ঝড় সয়ে একটা জাত হিসেবে টিকে ছিলাম আমরা! এইটা আমার কাছে খুব ভয়ের একটা জায়গা ছিল।

প্রশ্ন: সেই সময়ের কথা বাড়িতে বড়দের কাছে কখনও শোনোনি?

কোরক: সেটা হয়ত আমাদের জেনেটিক কোডে আছে। আমি আমার পরিবারের গল্প বলতে পারি। আমি শুনেছি, দাদু তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একটা সময় পদ্মার বুকে একটা গুপ্ত-নৌকা ছিল, তাতে উনি ভেসে বেড়াতেন। এই জীবনটা তো আমি কোনোদিন দেখিনি। আমরা ভাবতেও পারিনা সেই জীবনযুদ্ধটা কেমন ছিল। সেই সময় দাঁড়িয়ে মৃণাল বাবু এবং তাঁর মত কিছু মানুষ বাঙালির কালচারাল কোড তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। কতটা যুদ্ধ করে তাঁরা শিল্প করতে এসেছিলেন ভাবলে অবাক লাগে। শিল্প যেমন আমাদের একদম প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা গুলোর একটা, আবার এই প্রশ্ন উঠলেও অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, বেঁচে থাকার জন্য ভাত কাপড়ের সংস্থান করতেই যেখানে মানুষকে এত জীবনযুদ্ধ করতে হয় সেখানে শিল্প মানুষের ঠিক কোন কাজে লাগে? সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি বানালেন, সাহিত্য হল, শিল্প হল, থিয়েটার হল, বিজন ভট্টাচার্য এত সাংঘাতিক সব কাজ করে গেছেন, আইপিটিএ তৈরি হল। আজ এই সময় দাঁড়িয়ে একজন আর্ট প্র্যাকটিশনর হিসেবে আমরা যে লেগ্যাসিটা বহন করছি আমরা সেটার কতটা যোগ্য সেটা নিয়ে একটা বিরাট সংশয় রয়েছে।

প্রশ্ন: ছবিটা করতে গিয়ে মৃণাল সেনকে নিয়ে ভাবনা বদল হয়েছে?

কোরক: ওঁর লেখাগুলো পড়া শুরু করার পরে দেখলাম একদম সহজ একটা মানুষ। একটা বয়সে যাঁর ছবি দেখে রীতিমত ভয় পেয়েছি যে, ওরে বাবা! বুঝব আদৌ? তাঁর লেখায় বুঝলাম লোকটা ভীষণ সহজ। জলের মত সহজ লেখা, ঝরঝরে গদ্য, কোনও ভনিতা নেই, ভান নেই। সহজ ভাবে নিজের কথা এভাবে বলতে পারাও বোধহয় ওঁদের জেনারেশনের পক্ষেই সম্ভব ছিল। আমরা এভাবে আর পারব না বোধহয়। এত মুখোশ আর আবরণ চাপিয়ে আমরা বাইরে বেরোই তাতে আমরা আর কোনদিন নগ্ন হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারব না। ওই সময়ের বাঙালি পারত, ওই সময়ের শিল্পী পারতেন।

আরও পড়ুন: অনেক স্বপ্নের দিকে একসঙ্গে দৌড়চ্ছি: মনামী

প্রশ্ন: চরিত্রটা করতে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ানো হল কখনও?

কোরক: হ্যাঁ, নিজেকে বেশ খানিকটা বুঝতে পারলাম। নিজের অসহায়য়তাগুলো কোথায় বুঝলাম। বুঝলাম এই সময় দাঁড়িয়ে যারা থিয়েটার বা ছবি করার চেষ্টা করছি, আমাদের নিজের সত্যিগুলোই ভীষণ ঘেঁটে যাওয়া এবং বিক্ষিপ্ত।

প্রশ্ন: স্বয়ং মৃণাল সেনের তো ফিল্ম বানানোর কোনও রুলবুক সেরকমভাবে ছিল না। একটা চলমান পদ্ধতিতে ছবি বানাতেন। অতটাও গুছিয়ে নয়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের তো সবটা গোছানো। সৃজিতকে কি একটু ‘স্ট্রিক্ট’ পরিচালক মনে হয়েছে?

কোরক: ঘটনাচক্রে সৃজিতদার সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। আমি নিজে বেশ টেনশনে ছিলাম। ছাত্র বয়স থেকে সৃজিতদার ছবি দেখে বড় হওয়া। আমার মনে পড়ে ২০১০ সালে আমার উচ্চ মাধ্যমিক, সেই বছরই ‘অটোগ্রাফ’ এল। বন্ধুরা মিলে দেখতে গিয়েছিলাম। যাঁর ছবি দেখে কৈশোর কেটেছে, সেই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা। টেনশন ছিলই। কিন্তু সৃজিতদা যে কোথাও খুব বেঁধে দিয়েছেন তা কিন্তু নয়। এই ছবিটার ক্ষেত্রে অন্তত সেটা হয়নি। হয়ত অন্য অভিনেতারাও আমার কথায় সহমত হবেন। তবে হ্যাঁ, একটা গোটাগুটি স্ক্রিপ্ট ছিল, মৃণাল বাবুর মত ওইরকম ভাবে মাঠে নেমে পড়াটা অবশ্যই নয়। একটা আকার ছিল, কীভাবে কী হতে চলেছে সেই ধারণাটা ছিল। সৃজিতদার টিমটা দারুণ এবং প্রি-প্রডাকশন এত ভাল যে অকুস্থলে আমাদের ঝামেলা পোহাতে হয়নি। খুব প্ল্যান মাফিক হয়েছে সবটাই।

প্রশ্ন: ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি কতটা ছিল?

কোরক: হ্যাঁ। অবশ্যই প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হত। কারণ, এইরকম চরিত্র করার একটা আলাদা প্রস্তুতি লাগেই। আমি বলব, একটা মৌলিক চরিত্র করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ।

প্রশ্ন: মানে বলতে চাইছ যে সব চরিত্রের কোনও রেফারেন্স নেই?

কোরক: হ্যাঁ। কোনও রেফারেন্স নেই। আমি চাইলে স্ক্রিপ্ট পড়তে পড়তে ইম্প্রোভাইজ করতে পারি। চরিত্রটা কেমন দেখতে হবে, কেমন ভাবে হাঁটাচলা করবে সেটা ঠিক করার অনেকটা স্বাধীনতা কিন্তু আমার হাতেও থাকে। মানে পরিচালকের সঙ্গে বসে একটা আলোচনার পরিসরটুকু থাকে। আর এই ছবির ক্ষেত্রে রেফারেন্স আছে, আলোচনার জায়গাও আছে। মৃণাল বাবুর লেখা পড়ে, ছোটবেলার কথা পড়ে বা ওঁর যেসব ইন্টারভিউ পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে সেগুলো দেখে আমার মনে হয়েছিল যে, এই লোকটাকে তো আমি নকল করতে পারব না! ওই রকম একটা ব্যক্তিত্বকে আমি ধারণ করতেও পারব না, নকল করতেও পারব না। তাই যে পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে দিয়ে আমি যাচ্ছি বা যে পরিস্থিতিগুলোয় আমাকে ফেলা হচ্ছে আমি সেই অনুযায়ী আমার মত করেই রিয়্যাক্ট করব। শুধু চেষ্টা করব, সেই সময়ের কোডটা যতটুকু আমার মধ্যে আছে সেইগুলোকে খুঁজে বার করে অভিব্যক্ত করতে।

আরও পড়ুন: আনন্দ: ছক ভাঙা এক কষ্টিপাথর

প্রশ্ন: তাহলে তো যথেষ্ট কঠিন হয়েছে ব্যাপারটা শুরুতে?

কোরক: মৃণাল সেনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়ত একটু বেশিই কঠিন। আমাদের বাংলা ছবির কিংবদন্তি ত্রয়ী সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল এর মধ্যে মৃণাল সেন সবথেকে সাম্প্রতিক। ২০১৮ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। মানুষের কাছে তাঁর প্রচুর স্মৃতি রয়েছে। রেফারেন্সগুলো খুব স্পষ্ট এখনও। সময়ের স্রোতে সেগুলো এখনও ভেসে যায়নি

প্রশ্ন: একই সঙ্গে প্রচন্ড অভিগম্য ছিলেন। প্রচুর মানুষ তাঁকে ছুঁতে পেরেছে। অবারিত দ্বার ছিল।

কোরক: হ্যাঁ। একদম। বহু পরিচিত মানুষ। তাই এই ভয়টা ছিলই যে মানুষ এইটা বলবে না তো, “একেবারেই হচ্ছে না। একেবারেই মৃণাল বাবুর মত লাগছে না”! সেটা আমি সৃজিতদাকে বললাম যে, এই ব্যক্তিত্ব তো আমি ধারণ করতে পারব না। সৃজিতদা বললেন, “তুই দেখ, পড়, তারপর তোর মত করেই কর।” অভিনেতার বাচন থেকে শুরু করে শরীরী ভাষা, সেই স্বাধীনতাটা আমি সৃজিতদার কাছে পেয়েছিলাম। ওইটা না পেলে খুবই মুশকিল হত।

প্রশ্ন: আমরা যখন কোনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছবি দেখি যাঁর একটা বয়সের চরিত্র একজন করছেন এবং তার অন্য বয়সে আরেকজন, সে তো অনেকটা রিলে রেসের মত। এক হাত থেকে আর এক হাতে ব্যাটনটা যায়। সেই ব্যাটন পাস করার হাতটা যখন চঞ্চল চৌধুরীর তখন কি আলাদা রকমের কোনও চাপ কাজ করেছে?

কোরক: ঠিক। এটা একেবারেই ব্যাটন পাস করার মত। তবে এটা কোনও চাপ তৈরি করেনি, বরং আমি প্রচন্ড উত্তেজিত হয়েছিলাম। কারণ আমি তো মূলত থিয়েটারের ছেলে, তাই এটা মাথায় রাখতেই হবে চঞ্চলদা মানুষটা কিন্তু মামুনুর রশিদের ছাত্র। সেই গ্রেট মামুনুর রশিদ। আমাদের মত কলকাতার থিয়েটার করিয়ে ছেলেপুলেদের কাছে যে সম্মানটা অরুণ মুখোপাধ্যায় বা বিভাস চক্রবর্তী পান, ঢাকার মানুষদের কাছে মামুনুর রশিদ সেই জায়গাটায়। চঞ্চলদা তাঁর ছাত্র। তারপরে এত কাজ মানুষটার! সেই কাজগুলো হাঁ করে দেখার মত। অভিনেতা হিসেবেও সেই মাপের একজন অভিনেতা। তাই ভয় নয়, খুব উত্তেজনা কাজ করছিল ভেতরে। মনে হচ্ছিল, এটা একটা অদ্ভুত কাজ হতে চলেছে।

প্রশ্ন: অদ্ভুত কাজ হল কি শেষমেশ? চঞ্চলপর্ব শুনব একটু।

কোরক: আমাদের বাহ্যিকভাবে কোনও মিল নেই সেই অর্থে। আলাপটাও ছিল না সেভাবে। শুটিংয়ের সময়ই আমাদের প্রথম আলাপ। একসাথে কোনও দৃশ্য ছিল না কারণ, থাকার কথাও নয়। আমি দেখলাম, চঞ্চলদা মানুষটা একদম সহজ, মাটির মানুষ। একদম সহজ করে দিলেন ব্যাপারটা প্রথম আলাপেই। কিছু মানুষ প্রথম আলাপেই সবটা খুব সহজ করে দেন। ১০ মিনিটের মধ্যে আপনাকে বাড়ির লোক করে ফেলবে। চঞ্চলদা তেমন। তাই বড় অভিনেতার প্রতি যে সম্ভ্রম থাকে, সেটা চঞ্চলদা নিজে থেকেই কাটিয়ে দিলেন। তারপর ভাবলাম, আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এগোনো যাক।

আরও পড়ুন: বাংলা ছবিতে এই রকমের পারফরম্যান্স সচরাচর আমরা দেখি না

প্রশ্ন: বায়োপিকের ক্ষেত্রে ‘লুক রিভিল’ হলে আমরা দেখি যে চরিত্রের মত দেখতে লাগছে কিনা। একজনের চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে তাঁর মত দেখতে লাগাটা কতটা জরুরী বলে তুমি মনে কর?

কোরক: জরুরী নয়। সব ক্ষেত্রে একেবারেই জরুরী নয়। এই ছবিটার ক্ষেত্রে আমরা ওই ব্যাপারটা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। কেউ যদি নাও করেন, শুধুমাত্র স্পিরিটটা ধরতে চান তাতেও সমস্যা নেই। যেমন অঞ্জন দত্তের ‘চালচিত্র এখন’ ছবিটাতে অঞ্জন বাবুকে একেবারেই মৃণাল বাবুর মত দেখতে লাগেনি। হাঁটাচলা, হাবভাব অনেকটাই আলাদা। কিন্তু এতদিন একসঙ্গে থাকার ফলে মৃণাল বাবুর আত্মা এবং তাঁর যাপনটাকে অঞ্জন বাবু কী সুন্দর ধারণ করেছেন! আমার অসম্ভব সুন্দর লেগেছে ছবিটা। তোমার মাধ্যমেই বলছি, আমি দু’বার দেখে ফেলেছি ছবিটা। আমাদের বন্ধু শাওন খুব ভাল অভিনয় করেছে। তাই সব সময় বাহ্যিক চেহারাটা মিলতেই হবে সেটা আমার অন্তত মনে হয় না।

প্রশ্ন: এবার একটু ওটিটিতে ঢুকি। ওটিটিকে এখন ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছে। প্রচুর কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখছি, থিয়েটার থেকে প্রচুর অভিনেতা ওটিটিতে আসছেন কারণ ভাল অভিনেতাদের খুব প্রয়োজন পড়ছে। এটা কি তাহলে থিয়েটারের অভিনেতাদের জন্য একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিল? আর একটা নেগেটিভ কথাও উঠে আসছে। অনেক থিয়েটারের পরিচালক বলছেন যে, ওটিটি আর ছবিকে সময় দিতে গিয়ে তাঁরা থিয়েটারের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করছেন। একজন অভিনেতা কীভাবে দুটো মাধ্যমকে ব্যালান্স করবেন? তোমার কী মত?

কোরক: আমার মনে হয়, এটা প্রায়োরিটির প্রশ্ন। একজন থিয়েটারের অভিনেতা সারা বছর তো শুট করছেন না! তাই বাকি সময়টা যদি আমরা থিয়েটারে খুব ডেডিকেটেড ভাবে দিই তাহলে তো থিয়েটারটাও চলে একইসঙ্গে। আর তুমি যেটা বললে, ওটিটির এই বিস্তার তো আমাদের প্রজন্মের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আমি নিজেও ওটিটিরই ফসল বলা যেতে পারে। আমার তো প্রথম কাজ ওটিটিতেই, ‘মন্দার’। হ্যাঁ, থিয়েটারের ছেলেমেয়েদের কাছে এটা খুবই ভাল একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। তাদের কাজগুলো শিক্ষার্থী হিসেবে আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটার একটা অন্যদিকও আছে। সেটা হচ্ছে, থিয়েটার থেকে এর আগেও অনেক দুরন্ত অভিনেতা চলচ্চিত্র জগৎ পেয়েছে। আমি এক্ষেত্রে দুই অনির্বাণ দা (ভট্টাচার্য এবং চক্রবর্তী), লোকাদা (লোকনাথ দে) এঁদের কথা বলব। এঁরা দুর্দান্ত কাজ করছেন। খুবই আনন্দ হয় যে আমাদের সিনিয়র যাঁরা তাঁরা এরকম কাজ করেন। আগের প্রজন্মেও কিন্তু থিয়েটার থেকে ভাল অভিনেতারা সিনেমায় এসেছেন। আমাদের ক্ষেত্রে যেটা আলাদা হল, প্রায় একটা গোটা জেনারেশনের উত্থান। একসঙ্গে অনেক জন অভিনেতা। হ্যাঁ, সেটার পেছনে অনির্বাণদার হাত আছে। ‘মন্দার’ এবং ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ পরপর দুটো কাজে অনির্বাণদা কিন্তু একটা গেটওয়ে তৈরি করলেন। দর্শক দেখল যে, আরে এদের তো দুর্দান্তভাবে চরিত্র বলে মনে হচ্ছে। নানাভাবে ব্যবহার করাও যাচ্ছে। একই ধারণা হয়ত পরিচালকরাও করছেন। দু’তরফই লাভবান হচ্ছে। ওটিটি একদম কনটেন্ট নির্ভর, সেক্ষেত্রে ওটিটিও লাভবান হচ্ছে। আমরাও কন্ট্রিবিউট করতে পারছি। দুপক্ষেরই বিস্তার হচ্ছে।

প্রশ্ন: এই বিস্তারটা শুধু থিয়েটার থেকে হচ্ছিল না?

কোরক: এটা তো অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলা থিয়েটার একটা নির্দিষ্ট ডোমেইনে আটকে থাকে। তার একটা নির্দিষ্ট দর্শক আছে। সেই দর্শকের বাইরে আমাদের কাজ খুব একটা ছড়াতে পারে না। সেটা স্বাভাবিক কারণেই পারে না, যেহেতু থিয়েটার পুঁজি নির্ভর নয়। এই জায়গা থেকে অবশ্যই একটা দ্বিপাক্ষিক আদান-প্রদানের জায়গা তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: তুমি নাটকের ছাত্র। ছবিতে অভিনয় করছ। যদি বিশ্ব সিনেমার পরিপ্রেক্ষিতে ধরি, কোন ধরণের ছবি দেখতে পছন্দ কর? পছন্দের পরিচালক কারা?

কোরক: অনেক ছবিই দেখতে খুব পছন্দ করি। আমার ট্যারান্টিনোর কাজ খুব ভাল লাগে। ক্রিস্টোফার নোলান ভীষণ পছন্দের। আসলে ছবি তো সাংঘাতিক শক্তিশালী একটা মাধ্যম, তাই মাঝে মধ্যেই চিন্তাভাবনা গুলোকে ওভারপাওয়ার করে ফেলে। ছবি দেখার অভ্যেসগত জায়গা থেকেই ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাসিকগুলো দেখেছি, দেখি। আমাদের শিক্ষকেরাও বারবার বলেছেন। নানা ভাষার থিয়েটার পড়া, ছবি দেখা আমাদের প্র্যাকটিসের মধ্যেই থাকে। তবে সেটা আলাদা করে এই ছবিটার ক্ষেত্রে যে খুব একটা প্রভাব ফেলেছে তেমনটা নয়। তবে মোটামুটি সব ধরণের ছবি দেখারই চল রয়েছে আমার।

Loading


Share It