অনেক স্বপ্নের দিকে একসঙ্গে দৌড়চ্ছি: মনামী

Share It

অতনু রায়

রাজু মজুমদারের প্রথম ছবি ‘ফণীবাবু যুগ যুগ জিও‘-তে ‘ফণীবাবু’ শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘সুন্দরী’ মনামী ঘোষ। অভিনেত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর জানিয়েছেন ছবি দিয়ে। এদিকে আবার মুক্তির অপেক্ষায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘পদাতিক‘। এর মাঝেই ‘দ্য কাউন্টার কালচার’ এর সঙ্গে আড্ডায় অনেক না বলা কথা বললেন মনামী।

প্রশ্ন: ‘বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা’। আন্তর্জাতিক এবং বলিউড ছবিতে আমরা স্বামী-স্ত্রীর বয়সের বিস্তর ফারাক দেখলেও বাংলা ছবিতে বড় একটা দেখেছি বলে চট করে মনে পড়ে না। সেই জায়গায় ‘ফণীবাবু যুগ যুগ জিও’ মুক্ত বাতাস হয়ে বইবে?

মনামী: একদম ঠিক, চট করে মনে পড়ে না। হঠাৎ করে মনে করতে গেলে আমার তো শুধুমাত্র ‘বিকেলে ভোরের ফুল’-এর কথাই মনে পড়ছে। তবে, এটা কিন্তু ঠিক ওই ধারার গল্প নয়। আমরা গল্পটা ‘রিভিল’ করছি না, সেই জন্য মনে হচ্ছে ‘বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা’। হ্যাঁ, ‘লুকস্’ অনুযায়ী সুন্দরীর বয়স ৩৫ বছর আর ফণী বাবুর ৭৫।

প্রশ্ন: সে তো অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখি যে একজন বিবাহ বিচ্ছিন্ন বা বিপত্নীক মানুষ সংসারের সব দায়িত্ব পালন করে সঙ্গী খুঁজে নেন।

মনামী: এইখানে একটা কথা বলি, সুন্দরী ফণী বাবুর প্রথমা স্ত্রী, দ্বিতীয় বা তৃতীয় নয় কিন্তু! আরেকটা তথ্যও দিই, এদের দুই ছেলে আর এক মেয়ে আছে। বড় ছেলের বয়স প্রায় ৫৫। ছোট ছেলের বয়স ৪৫ আর মেয়ের বয়সও ৪০ এর কোটায়। তার মানে সবাই মায়ের থেকে বয়সে বড়। তাহলে ঘটনাটা হচ্ছেটা কী? সেইটাই কিন্তু হলে গিয়ে দেখতে হবে। কমেডির মোড়কে ছবি, এর বেশি কিচ্ছু বলা যাবে না।

প্রশ্ন: আমি সম্প্রতি একটা সমীক্ষার রিপোর্ট পড়ছিলাম। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন ডেটিং সাইটে পুরুষ-নারী উভয়েই বয়সে অনেকটা বড় পার্টনার খুঁজছেন। তথ্য বলছে, ২৫-২৭ বছরের নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪২-৪৫ বছরের পুরুষকে সঙ্গী হিসেবে চাইছেন। এটা কেন হচ্ছে মনে কর? শুধুই নিরাপত্তা?

মনামী: মানসিক জায়গা থেকে নিরাপত্তার কথাই ভাবনায় থাকছে কিনা সেটা আমি ঠিক বলতে পারব না। তবে সব সময় নিরাপত্তার জন্যই যে হবে তা নাও হতে পারে। অনেক সময় কারোর কাউকে ভালও লাগতে পারে। আমার ক্ষেত্রে যেহেতু ব্যাপারটা এরকম নয় তাই এটা নিরাপত্তার কারণে নাকি কোনও মনস্তাত্ত্বিক কারণে সেটা বলা মুশকিল। যার জীবনে ঘটছে সে নিজেই হয়ত বলতে পারবে।

প্রশ্ন: একটা সময় পরিবারের চাপে এই ধরণের বিয়ে হত। কিন্তু এখন বয়সের ব্যবধান নিয়ে সেভাবে কেউ ভাবছেন না, তাই অনেক সম্পর্ক পরিণতি পাচ্ছে। কোনোভাবে পুরনো এই প্রথায় নতুন প্রজন্ম কি বিজ্ঞান খুঁজে পেল?

মনামী: না, সেটা মনে হয় ঠিক নয়। কারণ, এটা কিন্তু এখন দু’দিক থেকেই হয়। একটা মেয়ে যেমন বয়সে অনেক বড় ছেলেকে বিয়ে করছে, একটা ছেলেও তেমন বয়সে অনেক বড় মেয়েকে বিয়ে করছে। আবার সমবয়সী বিয়েও হচ্ছে। আমার যেটা মনে হয়, এখন মানুষ অনেক ‘লিবার‍্যাল’ হয়ে গেছে। আগে কোনো মেয়ের নিজের থেকে ছোট কাউকে পছন্দ হলে সে হয়ত সমাজের ভয়ে সেটা বলতে পারত না। কারণ সোশ্যাল কিছু ‘ট্যাবু’ ছিল। এখন যেহেতু সেটা অনেকটাই কমেছে, মানুষ এখন বেশি প্রকাশ করতে পারে। তাই আমরা বেশি জানতে পারি।

প্রশ্ন: পরিচালক রাজু মজুমদার তোমার সহকর্মী। রাজু নতুন পরিচালক, প্রথম ছবি। সহকর্মীর ছবি কি অভিনেত্রী হিসেবে একটা আলাদা ‘কমফোর্ট জোন’ দেয়?

মনামী: না, ওটা আলাদা করে কিছু হয় না। একেকজনের সঙ্গে ‘কমফোর্ট জোন’ তৈরি হয়ে যায়। কোনও পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে তৈরি হয় আবার কারোর সঙ্গে হয় না। আবার একজন সহ-অভিনেতা পরিচালক হলে তখনও এটা হতে পারে। কোথাও কমফোর্ট জোন তৈরি হল আবার কখনও মনে হল যে সহ-অভিনেতা হিসেবেই তাঁর সঙ্গে আমি বেশি কমফর্টেবল। এটা ক্ষেত্রবিশেষে আপনা আপনি হয়ে যায়।

প্রশ্ন: দীর্ঘদিন কাজ করছ। তার পরেও এত কম ছবি। সম্ভবত এটা তোমার ১১ নম্বর ছবি। অভিযোগ, তুমি এতদিন তোমার কেরিয়ারকে সিরিয়াসলি নাওনি। এখন নিচ্ছ। সত্যি?

মনামী: দেখো, আমি একটানা টেলিভিশন করেছি। কোভিডের সময় একটা বিরতি হল, তারপর থেকে আমি আর সিরিয়াল করিনি। এবার সিরিয়ালে আমি সারাজীবন লিড করেছি। তখন আমার মাসে ২৬ দিন শুট থাকত। কোনো মাসে সেটা হয়ত কমে বড় জোর ২৪ দিন, কিন্তু ‘কন্ট্র্যাক্ট’ ২৬ দিনেরই। ওইখান থেকে বেরিয়ে কোনও ছবি করা সম্ভব নয়। কারণ, সেখানে যে ছুটি গুলো থাকবে সেটা যে পরপর চারদিন পাবে তেমনটাও তো নয়!

আরও পড়ুন: বাংলা ছবিতে এই রকমের পারফরম্যান্স সচরাচর আমরা দেখি না

প্রশ্ন: এখন তো অনেকে সিরিয়াল করতে করতে ছবি করেন। তাঁরা এও বলেন যে প্রযোজনা সংস্থা খুব ‘অ্যাডজাস্ট’ করে নিয়েছে, ঠিকঠাক ছেড়ে দিয়েছে ছবির শুটে!

মনামী: (হেসে) আমার কোনও প্রযোজনা সংস্থাই ‘অ্যাডজাস্ট’ করেনি। তবে হ্যাঁ, আমি যখন ‘বেলাশুরু’ করছিলাম তখন আমি শেষ যে সিরিয়ালটা করেছি ‘ইরাবতীর চুপকথা’ সেটাও শুরু হয়েছিল। যেহেতু শিবুদা অনেক আগে আমার ডেট নিয়ে রেখেছিল, তাই আমার ওদেরকে বলা ছিল যে ওই সময়টায় আমাকে ছেড়ে ছেড়ে দিতে হবে। ওই সময় আমি টেলিভিশন আর সিনেমা অল্টারনেটিভ ভাবে শুট করেছি। ‘অ্যাডজাস্ট’ হয়ে গেছে, কিন্তু সিরিয়ালে সত্যিই সবসময় সেটা করা সম্ভব হয় না।

প্রশ্ন: চেষ্টা করা হয় কি?

মনামী: সমস্যাটা হয় আমি যদি ‘প্রটাগনিস্ট’, বিশেষত হিরোইন হই। কারণ আমাদের সিরিয়ালে তো হিরোইনের উপরেই সব গল্প। তাই যদি মনে করি কোনও ছবিতে একটা একদিনের চরিত্র করব সেটা হয়ত ম্যানেজ হয়ে যাবে কিন্তু যদি ছবিতেও একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করতে চাই যেটা শুট করতে বেশিদিন লাগবে, সেটা ম্যানেজ করা খুবই অসুবিধা।

প্রশ্ন: একটু ওটিটিতে আসি। তুমি ওটিটিতে একটাই কাজ করেছ, ‘মৌচাক’। সেখানে তোমার অনেকটা ‘সিডাকট্রেস’ এর ভূমিকা। যে সময় ওটিটি তার বাজার ধরতে মোটা দাগের কনটেন্ট করত, তখন মনামী ঘোষকে ব্যবহার করা হল। তারপরে যখন একের পর এক নারীকেন্দ্রিক কনটেন্ট হতে শুরু করল তখন একজন ভাল অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও মনামীকে আর ব্যবহার করা হল না! কেন?

মনামী: এটা তো পরিচালক-প্রযোজকরা ভাল বলতে পারবেন।

প্রশ্ন: তুমি কারোর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছ এমন শোনা যায়নি। তোমার পি.আর. খারাপ তাও বলা যাবে না। তাহলে কী অসুবিধা হল মনে হয় তোমার?

মনামী: তুমিই এবার বল তাহলে, কেন! মনামী ভাল অভিনেত্রী, ভাল ডান্সার, মনামীর দারুণ একটা ফিগার, মনামী কাজের প্রতি ভীষণ ‘সিনসিয়ার’, যেকোনো জায়গায় ১০০-র জায়গায় মনামী নিজের ২০০ শতাংশ দিয়ে কাজ করে, মনামীকে শাড়ি পরেও মানায় আবার ওয়েস্টার্নেও; আর কি চাই! আবার তুমি বলছ পি.আর. ভাল। আমার পি.আর. মনে হয় অত ভাল নয়, কি জানি! তাও তুমি বলছ বলে যদি ধরেই নিই ভাল, তাহলে এবারে বাকি উত্তরটা কিন্তু পরিচালক-প্রযোজকরা দিতে পারবেন যে কেন তাঁরা আমাকে কাস্ট করলেন না।

প্রশ্ন: বাংলা কোনও সিরিজে কোনো চরিত্রকে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে যে ‘আমি অনেক ভাল করতাম’?

মনামী: না। বাংলার ক্ষেত্রে সেভাবে মনে হয়নি কারণ আমি খুব একটা দেখিওনি।

আরও পড়ুন: অস্কার কর্তৃপক্ষ বুদ্ধদার উপরে হওয়া কাজগুলো সংরক্ষণ করতে চায়: সোহিনী

প্রশ্ন: তোমার বিঞ্জ-ওয়াচ মূলত ন্যাশনাল ওটিটি অঙ্গনে?

মনামী: যা দেখার ন্যাশনাল ওটিটিই দেখেছি। বাংলা সিরিজ প্রায় হাতে গোনা। বলতে গেলে দেখিইনি। ছবি দেখেছি অনেক বেশি। সিনেমাহলে মিস করলে সেগুলো যখন ওটিটিতে এসেছে, দেখেছি।

প্রশ্ন: বাংলার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মুম্বইতে কাজ করার প্রবণতা ওটিটি আসার পরে অনেকটাই বেড়েছে। অনেক ‘স্টার’ও মুম্বইতে নিয়ম করে অডিশন দিচ্ছেন। মনামীর কখনও মুম্বইয়ে কাজের ইচ্ছে হয়নি?

মনামী: মুম্বই থেকে সমানে আমাকে ডাকছে। আজ এই অডিশন, কাল ওই অডিশন…

প্রশ্ন: …তাহলে যাচ্ছ না কেন?

মনামী: কে বলল, যাচ্ছি না? আমার যেটা ঠিকঠাক মনে হবে সেটার জন্য আমি ঠিক যাব। অনেক আগে, সেই কেরিয়ারের শুরু থেকেই ডাক আসছে, সে সব লোকে জানেও। তবে শেষ ৪-৫ বছর ধরে অনেক ডাক আসছে, আমার যেটা ঠিকঠাক মনে হবে সেটার জন্যই আপ্রোচ করব।

প্রশ্ন: একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী একজন ভাল পরিচালকের ছবিতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার কাজের সুযোগ পেলে সেটা কি ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়?

মনামী: একটু তো বাড়ায় অবশ্যই।

প্রশ্ন: সেক্ষেত্রে ‘বেলাশেষে’ এবং ‘বেলাশুরু’ তোমাকে সুনামের পাশাপাশি কোনও ‘এক্সট্রা মাইলেজ’ দিয়েছে?

মনামী: চরিত্রটা তো একই। প্রথম ছবিটা হয়েছে বলেই দ্বিতীয়টা হয়েছে এবং সমস্ত চরিত্রকেই রিপিট করা হয়েছে তাই সেই চরিত্রগুলিতে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাদের আবার করতেই হত। যদি দুটো আলাদা ছবি হত এবং চরিত্র দুটো একেবারে আলাদা হত, তাহলে তুমি যেটা বলছ সেটা হয়ত একটু বেশি করে মনে হত। সেটা দুজন আলাদা পরিচালকের ছবি হলেও হত। তবে এমনিতে আমার শিবুদাদের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভাল লাগে। হিসেব অনুযায়ী উইন্ডোজ-এর একদম শুরু থেকেই আমি কাজ করি। ওঁদের সঙ্গে নন-ফিকশনও করেছি। তবে দ্বিতীয় কাজে কমফোর্ট জোন এবং কনফিডেন্স লেভেল দুটোই কিন্তু একটু উপরের দিকে থাকে। কারণ আমার জানা হয়ে যায় সেই পরিচালক কেমন এবং কিভাবে কাজ করা পছন্দ করেন আবার পরিচালকেরও জানা হয়ে যায় যে এই অভিনেত্রীকে আমি কিভাবে ব্যবহার করতে পারি। সেক্ষেত্রে একটা সুবিধা হয়। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আগের ছবি ভাল হলে পরেরটাও উতরে যাবে।

প্রশ্ন: ‘পদাতিক’ ইতিমধ্যেই অনেক পরিচালক-প্রযোজক ফেস্টিভ্যাল সূত্রে দেখে ফেলেছেন। আমার মতে, ‘পদাতিক’-এর পরে তোমার কাছে আরও অনেক কাজের অফার আসা উচিৎ। যাঁরা দেখেছেন তাঁদের কাছে কি তোমার জন্য সেই রাস্তাটা খুলেছে? অন্তত আলোচনার রাস্তাটা?

মনামী: যে পরিচালকরা দেখেছেন, মানে যাঁদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তাঁরা কিন্তু খুবই প্রশংসা করেছেন এবং তুমি যে কথাটা বললে তাঁরা সেটাই বলেছেন। কিন্তু তার সুবাদে কতটা কী হবে আমি সত্যিই জানিনা। হয়ত রিলিজ হওয়ার পরে তুমি যেটা বলছ সেটা হতে পারে। হলে তো খুব ভাল।

প্রশ্ন: তোমার নাচের এত সুন্দর একটা কেরিয়ার। আজ ওটিটি ‘পাথ ব্রেকিং’ কনটেন্ট তৈরি করছে। নাচকে কেন্দ্র করে কোনও অন্য ধারার নন-ফিকশন বা ফিকশন করার কথা কখনও মনে হয়নি?

মনামী: হ্যাঁ, মনে হয়েছে। সেটা শুধু আজকে নয়, অনেকদিন থেকেই আমার মনে হয়েছে। যে সব প্রযোজনা সংস্থা এই ধরণের কাজ করতে পারবে আমি কিন্তু সেরকম অনেক জনকে বলেওছি যে তোমরা এরকম কিছু একটা ভাবতে পার। আমি অনেকবারই ভেবেছি নাচের পৃথিবীর মানুষদের নিয়ে যদি একটা ফিকশন করতে পারি!

প্রশ্ন: একটা মাল্টিস্টারার মিউজিক্যাল ছবি। মনামীকে কাস্ট করা হল না। ছবিতে অনেক গুলো নাচের সিকোয়েন্স। মনামীকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে অ্যাপ্রোচ করা হল। করবে?

মনামী: (হেসে) না। ওটা করতে পারব না।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতায় মুক্তি, ‘পদাতিক’-এর অপেক্ষায় মৃণালের এলডোরাডো

প্রশ্ন: কেন? নিজে অভিনয় করছ না বলে নাকি অন্য কোনও কারণ?

মনামী: কারণ আমাকে নিয়ে কাজ করতে হয়ত তারা চাইবে না। তাছাড়া অনেকের কাছেই হয়ত আমাকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে নেওয়াটা খুব অ্যাফোর্ডেবল্ হবে না।

প্রশ্ন: লকডাউনের সময় বাড়িতে বসে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী মোবাইলে ‘শর্ট ফিল্ম’ বানিয়েছেন। নিজেরাই অভিনয় করেছেন। তুমি তো প্রচুর রিল বানাও, কখনও ছোট করে কোনও ছবি বানানোর কথা ভেবেছ?

মনামী: তুমি এটা লকডাউনে মিস করেছ, আমি ‘ফুচকা’ নামে একটা ‘শর্ট কনটেন্ট’ বানিয়েছিলাম চার-পাঁচটা এপিসোডে। সেখানে চারটে বন্ধুর গল্প ছিল। চারটে চরিত্রই আমি করেছিলাম। এটা আমার ইউটিউব চ্যানেলে আছে। যাঁদের দেখা নেই তাঁরা দেখতে পারেন। ওটা কিন্তু আমারই লেখা আর ফোনেই শুট করা।

প্রশ্ন: তারপরে আর কিছু বানানোর ইচ্ছা হয়নি। এখন তো লোকে আকছার ফোনে সিনেমা বানাচ্ছে!

মনামী: ফোনে বানানোর ইচ্ছে হয়েছে হয়নি সেভাবে। বানাতে হলে সেটা যে ক্যামেরাই হোক তাতে বানানো যায়।

প্রশ্ন: তোমার মধ্যে কি একটা পরিচালক সত্তা রয়েছে?

মনামী: হ্যাঁ, ভীষণ ভাবে আছে। ‘ফুচকা’র পরে আমি বেশ কয়েকটা ‘ডান্স কভার’ বানিয়েছিলাম। একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত আর একটা পপুলার গান। সেই ভিডিও গুলো আমাকে রাতারাতি ভাইরাল করে দিয়েছিল। কিন্তু সেটা তো ভাইরাল হওয়ার জন্য করা নয়! তারপরে আমি মোবাইল ছেড়ে বড় ক্যামেরায় শুট করতে শুরু করলাম…

প্রশ্ন: …তারপরেই তো তোমার ‘ভিটামিন এম’?

মনামী: হ্যাঁ। ‘ভিটামিন এম’ আর গত বছর ‘আইল উমা বাড়িতে’ তো ব্লকবাস্টার! তাই বানালে আমি ওই ভাবেই বানাব।

প্রশ্ন: পরিচালনার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানতে চাইছি, ছবি বানালে ওটিটির জন্য বানাবে নাকি থিয়েট্রিক্যাল?

মনামী: সেটা সত্যিই এখনও ভেবে দেখিনি। যখন বানাতে শুরু করব তখন আমি এটা ভাবব। আমি যখন মিউজিক ভিডিও বানাতে শুরু করলাম তখন আমি জানলাম যে একটা মিউজিক লেবেল লাগে, মিউজিকটা লঞ্চ করতে। তখনই ‘এম মিউজিক’ তৈরি হল। অনেক রাইটস্ কিনতে হয়। এ গুলো করতে করতেই আমি শিখেছি। আবার যখন ছবির ব্যাপারটা মনে হবে তখন ওইটার মধ্যে ঢুকে পড়াশোনা করতে করতে আমাকে বুঝতে হবে। তবে যখন মনে হবে তখন আগে গল্প ভাবব, তারপরে কিভাবে বানাব ভেবে শেষে পোস্ট প্রোডাকশনটা ভাবব।

প্রশ্ন: তাড়াতাড়ি ভাবা শুরু হোক।

মনামী: লকডাউনের পরে মিউজিক ভিডিও বা আরও অন্যান্য কাজ নিয়ে আমি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে সময় পাই না। আমার মনে হয়, প্রথম যখন পরিচালনা করতে যাব তখন আমাকে প্রচুর সময় ফাঁকা রাখতে হবে, অন্য কাজ করলে হবে না। শুধু পরিচালনাতেই মন দিতে হবে। যখন ‘ইউজড্ টু’ হয়ে যাব তখন হয়ত একসঙ্গে অন্য কাজও করতে পারব। আসলে আমার অনেক গুলো স্বপ্ন। আমার স্বপ্ন গুলো বিভিন্ন দিকে ছড়ানো। শুধুমাত্র ভাল অভিনয় বা ভাল নাচে সেটা সীমাবদ্ধ নয়। আজকে তো মানুষের জীবন বড় অনিশ্চিত। আজ আছি, কাল নেই! তাই আমার বিভিন্ন দিকের সমস্ত স্বপ্নের দিকে আমি একসঙ্গে দৌড়চ্ছি। সেইজন্য পরিচালনার ব্যাপারটা আপাতত একটু দমে আছে।

প্রশ্ন: নিজের পরিচালনার ছবিতে নিজে অভিনয় করবে?

মনামী: না করতে পারলেই ভাল। আর একান্তই করতে হলে পাশে এমন একজন পরিচালককে রাখতে হবে যাঁর সঙ্গে বসে সমস্তটা আগে ঠিক করা যাবে এবং তারপরে আমাকে ফ্লোরে যেতে হবে। তবে পরিচালক পর্দার পিছনে থাকলেই আমার মনে হয় কাজটা বেশি ভাল হয়।

আরও পড়ুন: আনন্দ: ছক ভাঙা এক কষ্টিপাথর

প্রশ্ন: মনামী কোন ধারার ছবি বানাতে চাইবে?

মনামী: আমি আদ্যন্ত কমার্শিয়াল ছবি বানাতে চাই। আমার ছবি এমন হবে যেটা দর্শককে কাঁদাবে, হাসাবে, সব রকম ভাবে এন্টারটেইন করবে। সেটাই হবে আমার জঁরের ছবি।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। এটা আমার প্রশ্ন নয়। একটা শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে উঠে আসা প্রশ্ন। বেশ কিছু মানুষ বলছেন ‘কোট আনকোট’, “মনামী ঘোষ মৃণাল সেনের স্ত্রী’র চরিত্রে অভিনয় করেছে, এখন আবার ফেসবুকে একগাদা বিকিনি পরা ছবি দিয়ে যাচ্ছে! এটা মৃণাল সেনের স্ত্রীর ইমেজের সাথে যায়?” কোনোভাবে এঁরা তোমাকে মৃণাল সেনের স্ত্রী’র জায়গায় বসিয়ে ফেলেছেন, তাই অভিযোগ। ‘পদাতিক’ রিলিজ করার আগে বিকিনিতে মনামী কি গীতা সেনের চরিত্রের একটা ‘অ্যান্টি-ইমেজ’ তৈরি করতে পারে?

মনামী: ‘ইমেজ’ তৈরি হবে কেন? ‘ইমেজ’ তৈরি হবে না, সেটাই তো চ্যালেঞ্জ। একটা মানুষ যে চরিত্রে পর্দায় অভিনয় করবে সে যদি বাস্তব জীবনেও তাই হয় তবে তো তার কাছে জিনিসটা সহজ। আমি যদি গীতা সেনের মতই হই তাহলে তো আমার কাছে সেই চরিত্রটায় ‘বিহেভ’ করা বা অভিনয় করা সহজ হয়ে গেল। আর পর্দায় এবং মানুষ হিসেবে একদম আলাদা হয়ে সে ভাল করেছে মানে সে অনেক ভাল অভিনেত্রী। তাই সে ভাল করেছে। যে কাছাকাছি তার জন্য জিনিসটা সহজ আর যে দূরের তার জন্য জিনিসটা অনেক কঠিন। আর মানুষ আজও অনেক ক্ষেত্রেই পুরনো ধারণা নিয়ে বসে আছেন। এটায় আজকের যুগে আর কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। আগে এত সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ বুঝে গেছে কোনটা ব্যক্তি আর কোনটা চরিত্র। এখন মানুষ প্রত্যেকদিন বুঝতে পারে কোনটা মনামী আর কোনটা তার অভিনয় করা চরিত্র। সেই জায়গা দাঁড়িয়ে আমার মনে হয় কোনও অসুবিধা হওয়ার কথাই নয়। বরং আরও প্রশংসা করা উচিত যে, একটা মেয়ে একদম আলাদা হয়েও ওই চরিত্রটা অত ভালভাবে করতে পারে। তবে মানুষ যে ছবিটা দেখার আগেই মৃণাল সেনের স্ত্রী’র জায়গায় আমাকে বসিয়ে ফেলেছেন সেটাকে আমি একটা বিরাট ‘কমপ্লিমেন্ট’ হিসেবেই নিচ্ছি।

Loading


Share It

One thought on “অনেক স্বপ্নের দিকে একসঙ্গে দৌড়চ্ছি: মনামী

Comments are closed.