পৌষালীর ভালবাসার রহস্য ‘সূচনা’য় রূপ-মেঘা

Share It

সোমনাথ লাহা

রোদ-বৃষ্টি মাখা এক আষাঢ় বিকেলে সিনে আঙিনায় পথচলার শুরু করল পোঙ্গিলা প্রোডাকশনস। পাহাড়ি প্রেক্ষাপটে ভালোবাসা-রহস্যের বুননে আবৃত থ্রিলার ছবির হাত ধরেই টলিপাড়ায় তাঁদের যাত্রার ‘সূচনা’ হচ্ছে। প্রযোজনা সংস্থার নেপথ্যে দুই নারী, পৌষালী সেনগুপ্ত এবং অভিনন্দা সেনগুপ্ত। সম্পর্কে তাঁরা দুই বোন। কাজের ভাগ নিজেরাই করে নিয়েছেন। এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসারের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অভিনন্দা এবং অপরদিকে প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনায় রয়েছেন পৌষালী।

টলিউডে এই সময়ে দাঁড়িয়ে নারীর ক্ষমতায়নের এমন চিত্র দেখতে পাওয়াটা সোনালি রেখার মতোই। কারণ বিষয়টি খুব হাতেগোনা। শুধুমাত্র নতুন প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে ছবি তৈরি করাই নয়, নতুন মুখকে সামনে নিয়ে এসে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা। প্রযোজনা সংস্থার রোমান্টিক থ্রিলার ছবি ‘সূচনা: দ্য বিগিনিং’-এর হাত ধরে টালিগঞ্জ পেতে চলেছে নতুন মুখ রূপ ও মেঘাকে। ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী।

আরও পড়ুন: দিল খুশ রাহুলের, নতুন ছবিতে প্রসেনজিৎ-অনির্বাণ

সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (SRFTI)-এর প্রাক্তনী পৌষালীর পরিচালক হিসেবে এটি প্রথম ছবি। তবে টলিপাড়ায় কাজের নিরিখে বেশ পরিচিত তিনি। সহকারী পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ‘অ্যাডভেঞ্চারস্ অব জোজো’ ছবিতে। ছোট পর্দায় ‘শ্রীময়ী’ ও ‘খড়কুটো’-র মতো জনপ্রিয় মেগা ধারাবাহিকের প্রোডাকশনের কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। পৌষালীর কথাতেও সেই ছাপ সুস্পষ্ট। ”আমি মেইনস্ট্রিম ছবির হাত ধরে একটা বৃহৎ সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছতে চাই। ভাল মূলধারার ছবির মাধ্যমেও যথোপযুক্ত বার্তা তুলে ধরা যায়”, বক্তব্য তাঁর।

ছবির নায়ক রূপ সিনেমায় প্রথমবার পা রাখলেও অভিনয়ের অঙ্গনে নতুন নয়। সম্পর্কে তিনি নাট্যব্যক্তিত্ব তথা নাট্যকার পার্থ প্রতিম দেবের পুত্র। থিয়েটারের মঞ্চে ইতিমধ্যেই অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর। নান্দীকার-এর পাশাপাশি বাবার নাট্যদল বাঘাযতীন আলাপ-এর বহু প্রযোজনাতেই অভিনয় করেছেন রূপ। রূপের কথায়, “বাড়িতে নাট্যচর্চার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ছিল। তাই নাটক একটা দীর্ঘদিনের ভালবাসার জায়গা। কিন্তু সিনেমাকে নিজের মত করে আবিষ্কার করার পর, আমার বরাবরই ইচ্ছে বড় পর্দায় নিজেকে দেখার আর সিনেমার এই ম্যাজিক্যাল দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত হ‌ওয়ার। তাই এই ছবিতে ‘বিনু’-র চরিত্রে সুযোগ পাওয়ার মুহূর্তটা আমার কাছে স্বপ্নের মত।”

আরও পড়ুন: বড়পর্দা আর ওটিটি জুড়ে এবার শ্রীকৃষ্ণ

মেঘা মুখোপাধ্যায় আবার পরিচিত সংগীতশিল্পী হিসেবে। বেথুন কলেজ থেকে সাইকোলজি অনার্স নিয়ে স্নাতক মেঘা প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্রর কাছে তালিম নিয়েছেন। একাধিক বিজ্ঞাপনী জিঙ্গলসে কন্ঠ দিয়েছেন। বাংলা ধারাবাহিকেও প্লেব্যাক করেছেন। এবার পা রাখছেন অভিনয় আঙিনায়। মেঘার কথায়, “একজন মানুষের জীবনে যদি সাহিত্যচর্চা ও সঙ্গীতচর্চা থাকে তাহলে অন্যকে বুঝতে অনেকটাই সুবিধা হয়। সাইকোলজি নিয়ে পড়ার কারণে আমি মানুষকে নিরীক্ষণ করি। অভিনয় আসলে নিজের ভিতরের স্তরে থাকা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য গুলিকে বের করে একটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা। সেটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু পৌষালী ম্যাভাম এত সুন্দর করে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ‘সুমি’র মত একটা কঠিন চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে অসুবিধা হয়নি।”

ছবির কাহিনি ১৯ বছরের সুমিকে কেন্দ্র করে। ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যার কারণে তার মন বিষন্নতায় পূর্ণ। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মন ভাল করার উদ্দেশ্যে পরিবারের সঙ্গে সে ছুটি কাটাতে যায় সিকিমে। সেখানেই স্থানীয় ক্যাব চালক ২২ বছরের বিনুর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সুমির মনের অবস্থা দেখে যথাসম্ভব শালীনতা ও সম্মান বজায় রেখে কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে তার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে বিনু। বেড়াতে গিয়ে আশেপাশের জায়গায় ঘোরার পরিকল্পনাও কোন‌ওভাবে আকর্ষিত করতে পারে না সুমিকে। বরং পাহাড় ও সবুজের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মধ্যে সে শান্তির আশ্রয় খোঁজে। এদিকে বিনুর ব্যবহারে সুমির পরিবারের সকলেই ভীষণ খুশি। আচার আচরণে পরিবারের সবাইকে বিনু গুণমুগ্ধ করে ফেলে। ধীরে ধীরে সুমিও বিনুকে বুঝতে পারে।বিনুর যে অন্য কোন‌ও উদ্দেশ্য নেই তা নিশ্চিত হয় তার কাছে। ঘটনাচক্রে একদিন পরিবারের সঙ্গে হঠাৎ করেই ‌হ‌ওয়া ঝগড়া, মনোমালিন্যের কারণে বিনুর সঙ্গে গভীর রাতে লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়ে সুমি। তারপর ঘটে একটি হত্যাকাণ্ড। ফলে চরম বিপদে পড়ে সুমি আর বিনু। তারপর কি হয়? সেই উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়।

আরও পড়ুন: সূর্যর পাশে মারা; বিক্রমকে ‘ম্যাডি’ সারপ্রাইজ

ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ক সেন। যিনি নিজে একজন সরোদবাদক। গীতিকার অরূপ ঘোষ ও শ্রেয়ান ভট্টাচার্য। ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন ‘সারেগামাপা-লিটল চ্যাম্পস’ বিজয়ী শ্রেয়ান ভট্টাচার্য, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা। ইতিমধ্যেই শ্রেয়ানের লেখা এবং গাওয়া ছবির ‘এ কোন সকাল’ গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার বিক্রম আনন্দ সবর‌ওয়াল। সম্পাদনায় প্রদোষ এম। জানুয়ারি মাসে মাইনাস দু ডিগ্রি তাপমাত্রায় সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় এই ছবির শুটিং হয়েছে।

ছবির প্রেক্ষাপট হিসেবে পাহাড়কে বাছা নিয়ে পৌষালী জানান, “আমি বেশ খানিকটা সময় পাহাড়ে কাটিয়েছি বাবার চাকরির সুবাদে। ওখানকার সংস্কৃতি, পরিবেশ সবকিছু আমার জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। তাই আমার ছবির চরিত্ররা পাহাড়ে রয়েছে। এই ছবিতে পাহাড়‌ও একটি চরিত্র। থ্রিলার ছবির পাহাড়ি প্রেক্ষাপটে দেখতে ভাল লাগে। এছাড়া এই ছবিতে একটা ভ্রমণের গল্পের‌ও প্রয়োজন ছিল। পাহাড়ের পথের বাঁকের মতোই ছবির গল্প‌ও বাঁক নেয়।”

আরও পড়ুন: রান্নাঘরের অন্দরে রহস্যের ঘনঘটা, বাপ্পার ‘রবিন্স কিচেন’-এ বনি-প্রিয়াঙ্কা

ছবিতে নতুন মুখ নেওয়া প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, “আমি জানতাম এই ছবির শুটিং কতখানি চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে। তাই আমার সেই অভিনেতাদের প্রয়োজন ছিল যারা আমার সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারবে। তাই ওদের দুজনকেই অডিশনের মাধ্যমে বেছে নিয়েছি।”

নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে রূপের অভিমত, “বিনু চরিত্রটা খুব‌ই চ্যালেঞ্জিং। আমার থেকে একদমই আলাদা। বিনু সিকিমে বড় হয়ে উঠেছে। তার কথা বলার ডায়লেক্ট‌ও আলাদা। সে একজন পেশাদার ক্যাব চালক। ট্যুরিস্টদের নিয়ে ‘সাইট সিইং’ করায়। পৌষালীদি আমাকে চরিত্রটা খুব ভাল করে বুঝিয়েছিলেন। তারপর আমি রেকিতে গিয়ে ওখানকার মানুষজনদের পর্যবেক্ষণ করে যেটুকু রসদ সংগ্রহ করেছিলাম সেখানে থেকেই এই চরিত্রটিকে গড়ে তুলেছি।”

প্রথম ছবিতেই এমন চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত মেঘা বলেন, “সুমির চরিত্রটার মধ্যে অনেক গুলো স্তর রয়েছে। সে স্বাধীনচেতা, সাহসী, নির্ভীক মেয়ে। নিজস্ব জীবনদর্শন রয়েছে। নিজের মত করে ভাবনাচিন্তা করতে পারে। তাকে পুরোপুরি না চিনলে সে কী ভাবছে কেউ বুঝতে পারবে না। ঈশ্বরের অনেক আশীর্বাদ যে এমন একটি চরিত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছি।”

আরও পড়ুন: সাগরপারে শুরু, বাংলায় এবার সাতদিন ‘ফ্রাইডে’!

তবে মাইনাস তাপমাত্রায় রোম্যান্টিক দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে তার মত, “ঐ ঠান্ডায় কতটা রোম্যান্টিসিজম এসেছিল জানি না, রীতিমতো ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে শুটিং করেছি।”

সহ অভিনেতা হিসেবে রূপের প্রশংসা করেছেন মেঘা বলেন, “রূপ একবারের জন্য‌ও সেটে বুঝতে দেয়নি ও একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অভিনেতা। আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই কাজ করেছি।” আবার মেঘার সঙ্গে কাজ করে রূপ বলেন, “ছবির সূত্র ধরেই আমাদের পরিচয়। ওর সঙ্গে পরিচয় হয়ে খুব আপ্লুত হয়েছি।”

ইন্দ্রজিতের মতে, “পৌষালী ও অভিনন্দাকে কলেজে পড়ার সময় থেকেই চিনি। তখন ওরাও অনেক ছোট ছিল। ওদের এই কাজে আমি সবসময় সাপোর্ট করেছি। আমার চরিত্র নিয়ে কিছু বলব না। সেটা দর্শকরা ছবিতেই দেখবেন। ধারাবাহিকের কাজ শেষ করে সেই ফাঁকে এই ছবিতে কাজ করেছি। নতুন প্রযোজনা সংস্থা হলেও এটা বলতে পারি ওরা দুজন যথেষ্ট পারদর্শী।”

ছবির অন্যতম প্রযোজক এবং ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয়‌ও করা অভিনন্দার কথায়, “এই ছবির চিত্রনাট্য শোনার সময়‌ই আমি ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম। ছবিটা দেখার পর অনেকের‌ই একটা আত্মবিশ্বাস আসবে যে অন্যভাবেও এগোনো যায়।”

আগামী ২৬ জুলাই বড় পর্দায় মুক্তি পাবে ‘সূচনা: দ্য বিগিনিং’।

Loading


Share It