যৌনকর্মীরা এই ছবিটা দেখলে আমি খুব খুশি হব: প্রিয়া

Share It

অতনু রায়

মূল পরিচয় হল, তাঁর জন্ম আর বেড়ে ওঠা কানাডায়। তবু তিনি খাঁটি বাঙালি। মুম্বইকে ঘর ভাবেন এখন। ঝরঝরে বাংলাতে কথা বলেন, বাংলায় ঠাট্টা-তামাশা-টিপ্পনী বুঝতে পারেন, করতেও পারেন। নিজেকে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল অ্যাক্টর’ বলেন। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের প্রযোজনায় সদ্য মুক্তি পাওয়া প্রতিম দাশগুপ্ত’র ছবি ‘চালচিত্র‘তে এক বলিষ্ঠ নারী চরিত্রে নজর কেড়েছেন তিনি। আর গৌণ পরিচয় হল, তিনি রাজ বব্বর-স্মিতা পাতিলের পুত্র প্রতীকের বাগদত্তা। প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের প্রথম বাংলা ছবির প্রিমিয়ারে শহরে এসে সময় বার করে আড্ডা দিলেন।

প্রশ্ন: প্রথমবার বাংলা ছবিতে অভিনয় করলে। প্রিমিয়ারে হলের সিঁড়িতে বসে ছবি দেখলে।

প্রিয়া: (হেসে) তুমি দেখলে, আমি সিঁড়িতে বসে ছবি দেখেছি!

প্রশ্ন: হ্যাঁ। সাধারণত আমরা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে খুব ভাল কোনও ছবি এইভাবে দেখে থাকি। কিন্তু নিজের ছবি সিঁড়িতে বসে দেখার অভিজ্ঞতা কেমন?

প্রিয়া: দারুণ লেগেছে আমার। প্রথমত নিজের ছবি। দ্বিতীয়ত, যাঁরা দেখতে এসেছেন তাঁদের জন্যই ছবিটা বানানো। আমরা এখানে হোস্ট। যাঁরা দেখতে এসেছেন তাঁরা গেস্ট। আমি খুব এনজয় করেছি। আমি আর ইন্দ্রজিৎ (বোস) বসে আছি পপকর্ন খাচ্ছি, পপকর্ন পড়ে গেল, কফি পড়ে যাচ্ছে, সবাই ওইখান দিয়ে যাতায়াত করছে, আমার ব্লেজার মাড়িয়ে যাচ্ছে…আমি তাও বলেছি যে আমি এখানেই বসে থাকব। লোকে ব্লেজার মাড়িয়ে যাক, জামা কাপড় দিয়ে হেঁটে যাক, নো প্রবলেম!

প্রশ্ন: বেশ কিছু হল ভিজিট করেছ। কেমন লাগছে? দর্শকদের কাছ থেকে তো একটা ‘র’ ফিডব্যাক পাওয়া যায়। তাঁরাই বা কী বলছেন?

প্রিয়া: খুব ভাল অভিজ্ঞতা। প্রত্যেকে আমাকে ভাল বলেছেন। আমার চরিত্রটাকে তাঁরা পছন্দ করেছেন।

প্রশ্ন: বাহ। এটা বেশ খুশির খবর।

প্রিয়া: আমার বাবা মা এসেছিলেন সঙ্গে। ওঁরা এখন কলকাতায়। আমার মা কানাডাতে বসে সব বাংলা ছবি দেখা মানুষ। মায়ের জন্য এটা খুব ‘স্টারস্ট্রাকড্ মোমেন্ট’! কারণ মা টোটাদা, অনির্বাণদা, এঁদের ফ্যান। আর দিনের শেষে গিয়ে ছবিটা কিন্তু টোটাদা, অনির্বাণদা, শান্তনু এবং ইন্দ্রজিতের। বাকি চরিত্রগুলোর গুরুত্ব আছে, কিন্তু ওখান থেকে মনে পড়ার মত কিছু করতে গেলে তোমাকে ভাল পারফর্ম করতেই হবে। আমাকে যে দর্শকরা ভাল লাগার কথা জানালেন, এটা আমার কাছে ওভারহোয়েল্মিং! খুব আনন্দ পেয়েছি।

প্রশ্ন: ক্ষেত্রবিশেষে দেখেছি, কলকাতার দর্শক যেভাবে রিয়্যাক্ট করেন মুম্বইয়ের দর্শক হয়ত একটু অন্যভাবে। কলকাতাতে তো তবুও তোমার বাড়ি, তোমরা প্রবাসী বাঙালি। কিন্তু মুম্বইতে তো তুমি একদমই ‘আউটসাইডার’। মুম্বই কতটা রিসেপটিভ ছিল?

প্রিয়া: সত্যি বলতে মুম্বই আমাকে খুব ভালভাবে ওয়েলকাম করেছে। মুম্বই আমাকে কখনও নিজেকে ‘আউটসাইডার’ ফিল করতে দেয়নি। যখন কোনও অডিশন দিয়েছি বা মিটিং করেছি, আমার একটা বিষয় নিয়েই চিন্তা ছিল যে আমার হিন্দিতে একটা ‘কানাডিয়ান অ্যাক্সেন্ট’ ছিল। সেটার কারণে আমি একটু কাজ করেছিলাম। তারপর যখন আমি মারাঠিদের মত বলতে শুরু করলাম, মানুষ আমাকে আরও অন্যভাবে নিতে শুরু করলেন।

প্রশ্ন: তোমার শুরু তো দক্ষিণী ছবিতে?

প্রিয়া: হ্যাঁ। আমি প্রথমে তেলুগু ছবি করেছি। ওখানে শেষ আদিভি’র সঙ্গে একটা ছবি ‘কিস’ এর টাইটেল ট্র্যাকে আমাকে দেখে সঞ্জয় গুপ্তা আমাকে ফোন করে বললেন, ‘বি আ পার্ট অব্ ‘জজবা’।

প্রশ্ন: তার মানে বলিউডে ব্রেক পেতে তোমাকে খুব স্ট্রাগল করতে হয়নি?

প্রিয়া: আমার কাজ দেখিয়েই আমি কাজ পেয়েছি। নিজের মত করে স্ট্রাগল তো আছেই। কিন্তু একজন আউটসাইডারের মুম্বইতে এসে যে অসুবিধাটা হয়, মানে ভাষার, বা কাউকে চিনি না কী করব, সেটা কিন্তু আমার সেভাবে হয়নি। এখন আমার মনে হয় ‘মুম্বই ইজ্ মাই হোম’।এই যে কলকাতায় এসেছি, আমার মনে হচ্ছে কী জানি বাড়িতে কী হচ্ছে! এখন কলকাতা বা কানাডার থেকে বেশি মুম্বই আমার বাড়ির মত হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: কিন্তু তোমার বাংলাটা যেরকম ঝরঝরে তাতে মনে হচ্ছে, ছোটবেলা থেকেই চর্চার মধ্যে ছিলে!

প্রিয়া: হ্যাঁ, এটা একদম ছোটবেলা থেকেই। বাবা-মা সবসময়ই বাংলায় কথা বলত। কারণ যখনই কেউ বাইরে বড় হয়, বাবা-মায়ের মধ্যে এই ব্যাপারটা সব সময় থাকে। মনে করে যে বাংলা ভুলে যাবে, বাচ্চা বাংলায় কথা বলবে না। তাই তাঁরা বাংলার টাচটা সবসময় রেখে যান। বাড়িতে বাংলা কথা বলা, বাংলা রান্না হওয়া, আমরা সবসময় বাঙালিয়ানার সঙ্গে কানেক্টেড থেকেছি। আর আমি খুব গান শুনতে ভালবাসি। আমি গানও গাই। বাংলায় গান গেয়েছি, লতা মঙ্গেশকরের গান…

প্রশ্ন: এটা জানতাম না।

প্রিয়া: ছোটবেলা থেকেই। অনেক গান গেয়েছি। আর বাঙালির তো গান এমনিতেই আসে। আমার মনে হয় সব বাঙালি গান গাইতে পারে। আমার বাবাও খুব ভাল গান গায়, ‘হি ইজ আ গ্রেট সিঙ্গার’। বাবার কলকাতায় গায়ক হওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু এত ভাল পড়াশোনা করেছে যে দাদু বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই আর গায়ক হওয়া হয়নি। আমি যখন দেশে আসছিলাম, বাবা বারবার বলেছে, “গান গাইবি”। বাবা এখনও আশা করে যে আমি ‘সিঙ্গার’ হব, কিন্তু দেখো আমি কী হয়ে গেছি!

প্রশ্ন: তোমার ছোটবেলা থেকে বাড়িতে ছবি দেখার কালচার কেমন ছিল? ছোটবেলায় কানাডাতে বসে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর মত ছবি দেখেছ?

প্রিয়া: ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ দেখেছি। যখন আমি কলকাতায় বেড়াতে আসতাম, দেখেছি দিদা আমার কাজিনদের সঙ্গে বসে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ দেখত। সেটা আমার মনে আছে। বাংলা কিছু কিছু ছবি আমি দেখেছি। রাইমার একটা ছবি আমি দেখেছি। রাইমা সঙ্গে আমি আগে কাজও করেছি…

প্রশ্ন: রাইমার সঙ্গে কোন কাজটা করেছিলে?

প্রিয়া: রাইমার সাথে আমি প্রথমে করেছিলাম ‘ত্রিদেব’। খুব ভাল কমেডি। আমি, রাইমা, করণ সিং গ্রোভার, কেকে মেনন। কিন্তু ছবিটা রিলিজ হল না! তারপরেও রাইমার সঙ্গে একটা শো করেছিলাম। এটা তৃতীয় প্রজেক্ট। পরমের সঙ্গেও একটা ছবি করেছি যেটা খুব তাড়াতাড়ি রিলিজ হবে। তাই বাংলা ছবির জগতের সঙ্গে আমার একটা যোগাযোগ সবসময়ই ছিল।

প্রশ্ন: একটা কথা বলতেই হবে, ‘চালচিত্র’ কিন্তু চর্চায় আছে।যাঁরা দেখছেন, তাঁরা অন্যকে দেখতে বলছেন। যেযাঁরা থ্রিলার দেখতে পছন্দ করেন তারা কিন্তু ট্রেলার দেখে ছবির অনেকটা বুঝে ফেলবেন। তারপরেও থ্রিলটা পুরো ছবি জুড়ে ধরে রাখা কিন্তু টাফ ছিল।

প্রিয়া: আমিও এই কথাটা ভাবছিলাম যে কীভাবে প্রতিম গল্পটাকে স্টিচ করবে! কিন্তু যখন আমি প্রথমবার ছবিটা প্রিমিয়ারে দেখলাম, আমার একবারের জন্যও চোখ সরাতে ইচ্ছে হয়নি। অনেক ভাল ছবি দেখার সময়ও কখনও হয়ত একটু ফোন ঘাঁটি বা পাশে কারো সঙ্গে কথা বললাম দরকারে, কিন্তু এই ছবিতে একবারের জন্যও আমি পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারিনি। থ্রিলার, এতগুলো মার্ডার, ব্লাডশেড, তার মধ্যেও যেন একটা লাইফ আছে।

প্রশ্ন: ঠিক।

প্রিয়া: খুব ক্রিসপি, প্রত্যেকটা ডট খুব সুন্দর কানেক্ট করেছে প্রতিম আর প্রত্যেকে তাদের যে চরিত্রে দারুণ পারফর্ম করেছে। তানিকা, ও তো আলাদা লেভেলে চলে গেছে। আমি তো সবাইকে বলেছি, তানিকা যদি এটার জন্য কোনও অ্যাওয়ার্ড না পায় তাহলে খুব খারাপ হবে। আমি তো ওকে মুম্বইতে আমার টিমের সঙ্গেও কানেক্ট করিয়ে দিয়েছি। আমি ওকে বলেছি, তুমি মুম্বইতে এসে কাজ কর। এখানে প্রচুর কাজের সুযোগ আছে। এটা না যে কলকাতায় কাজের সুযোগ নেই। কিন্তু মুম্বইতে কাজ করলে অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারবে। বাংলায় হোক, মুম্বইতে হোক বা দক্ষিণে…ওর কাজ করে যাওয়া উচিত। কারণ ও দুর্দান্ত একজন অভিনেতা।

প্রশ্ন: হ্যাঁ, প্রতিম আমাকে বলেছে যে ওর চরিত্রটা অডিশনের মাধ্যমেই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চরিত্রটাকে ও যে লেভেলে নিয়ে গেছে, স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি কাজ পাওয়া উচিত।

প্রিয়া: একদম।

প্রশ্ন: প্রতিমের সঙ্গে আলাপ কীভাবে?

প্রিয়া: প্রতিমের সঙ্গে আলাপটা খুব ইন্টারেস্টিং। প্রতিম আর আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধু। যেমন অনেক অভিনেতা, পরিচালক একে অপরের কাজ ফলো করেন, আমিও সেভাবেই প্রতিমকে ফলো করতাম। ও ‘টুথপরি’ বানালো। প্রথমে ওই ভ্যাম্পায়ার ওয়র্ল্ড দেখে আমার মনে হয়েছিল, কে দেখবে! কিন্তু যখন আমি দেখতে শুরু করলাম, বুঝলাম যে রিলেটেবল্! একটা ভ্যাম্পায়ার ওয়র্ল্ড এবং কলকাতাতে সেটা এক্সিস্ট করছে! অডিয়েন্স ভাল বলছে, সেটা ওর জন্য একদম উইন উইন সিচুয়েশন। আমি প্রচন্ড কনভিন্সড হলাম। ওই কাজটা দেখে আমি ওকে মেসেজ করলাম, ‘ইউ কনভিন্সড্ মি দ্যাট ভ্যাম্পায়ার ওয়র্ল্ড এক্সিস্টস্ অ্যান্ড ইউ ডিরেক্টেড ওয়েল’।

প্রশ্ন: প্রতিমের অ্যাপ্রোচ ব্রিফ কী ছিল ‘চালচিত্র’র জন্য?

প্রিয়া: হঠাৎ একদিন প্রতিম আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করল যে, “একটা বাংলা ছবি করবে?” আমি হিন্দি করছি, দক্ষিণের ছবি করেছি। আমি সবসময় বাংলা কাজ করতে চেয়েছি। আর স্বাভাবিক, মাতৃভাষা তো! সেই ভাষায় ছবি করতে তো ভালই লাগবে আমার। এটা সবসময় আমার স্বপ্নই ছিল। আমি বললাম, হ্যাঁ, কিন্তু তুমি আগে দেখ যে আমি এটার জন্য ঠিকঠাক কিনা। ও বলল, সেটা আমি দেখে নেব। তারপরে আমাকে চরিত্রটা বলল। চরিত্রটা খুব ধারালো। আমি মুম্বইতে ধারালো চরিত্র করেছি। প্রতিমকে বললাম, তোমার মনে হয় যে কলকাতার দর্শকরা এই চরিত্রটাকে নিতে পারবে? ও আমার যে সত্তা, সেটা চরিত্রটার মধ্যে আনতে বলল।

প্রশ্ন: ছবিতে তোমার চরিত্র ‘জবা’ একজন যৌনকর্মী। তুমি ওঁদের ম্যানারিজম রপ্ত করার জন্য কোনও রেফারেন্স নিয়েছিলে না পুরোটাই পরিচালকের উপর ছেড়ে দিয়েছিলে?

প্রিয়া: পুরোটাই প্রতিমের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি এক্ষেত্রে ওঁর ভিশনের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিলাম। ছবিটা যদি পুরোপুরি জবার চরিত্রকে ঘিরে আবর্তিত হত, সেক্ষেত্রে হয়ত একটু অন্যভাবে ট্রিট করতাম।

প্রশ্ন: কিন্তু ম্যানারিজমের জায়গা থেকে কিছুটা তো আলাদা। কথা বলা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, নিজেই ইম্প্রোভাইজ করেছ?

প্রিয়া: আমি খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে করেছি। তারপর প্রতিমকে জিজ্ঞাসা করেছি ঠিকঠাক যাচ্ছে কিনা চরিত্রটার সঙ্গে! ওঁর পছন্দ হয়। ও বলে, একদম ঠিক করছিস। এটাই কর। আসলে আমি আমার মা, পিসিরা যখন কথা বলত তাঁদের কথাবার্তার যে টোন সেগুলো একটুখানি মনে করছিলাম। আমি দেখেছি বাঙালিদের মধ্যে না হালকা একটা ন্যাকামি আছে। একটা অন্যরকম ব্যাপার আছে। আমি কিন্তু ‘ন্যাকামি’ শব্দটা কোনও খারাপ উদ্দেশ্যে বলছি না। তো আমি মা বা পিসিদের একটু কপি করার চেষ্টা করেছি। প্রথম সিনটা যখন করলাম, প্রতিম খুশি হয়ে গেল। তবে যেখানে গাইডেন্সের দরকার হয়েছে, খুব ভাল গাইড করেছে। যখনই তেমন কিছু করা হয়েছে, তখন বলেছে, না, না এটা করিস না। এটা চরিত্রের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতিম হচ্ছে আসল ‘ক্যাপ্টেন অব্ দ্য শিপ’।

প্রশ্ন: চরিত্রটা যেমন বোল্ড, তেমন স্ট্রং।

প্রিয়া: ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে, একটা সিন আছে যেখানে জবা বলে, “আমার কাজটার কী হবে?” আজ যদি একটা ছেলে এসে আমাকে বলে, চলো অন্য কোথাও একটা চলে যাই, আমি তাকে প্রথমেই বলব যে আমার কাজের কী হবে! আমার সিনেমাগুলো কে শেষ করবে? একই জিনিস কিন্তু চরিত্রটার মধ্যে আছে। জবার কাজও কিন্তু জবার কাছে ছোট নয়। সে ইন্ডিপেন্ডেন্ট, অ্যামবিশাস, নিজে রোজগার করে। তাহলে সে কেন একজন পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে? এরকম কাজে এমন ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স’ মেয়েদের হয় না। ওরা পালিয়ে যেতে চায়, কাঁদে। কিন্তু জবা, সবাই ওকে জাজ করবে জেনেও কনফিডেন্ট। একজন যৌনকর্মী, তাও সে যে তার কাজকে ছোট মনে করছে না বরং একটা ‘প্রাইড পজেশন’ আছে, এটাই আমাকে কনভিন্স করল।

প্রশ্ন: এটা তো একটা ‘স্টেটমেন্ট’। এবং এটা থাকা দরকার। যৌনকর্মীদের পেশাকে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে।

প্রিয়া: হ্যাঁ, একেবারেই। পৃথিবীর আদিম পেশা। ‘জবা’ কিন্তু এই মানুষগুলোকে একটা ‘আপলিফ্টমেন্ট’ দেওয়ারও চেষ্টা।আমার মনে হয়, এই পেশায় থাকা কোনও মহিলা যদি ছবিটা দেখেন তাহলে তাঁরও ভাল লাগবে। প্রতিমের একটা ট্রিটমেন্ট তুমি লক্ষ্য করবে, জবা যত আস্তে আস্তে উল্টো দিকের পুরুষটাকে বুঝতে পারছে তত নিজের গার্ডগুলো খুলছে। তখন কিন্তু সে একটা সাধারণ চশমা আর সালোয়ার কামিজ পরে ফুচকা খাচ্ছে। এটাও কিন্তু জবা। যখন উল্টো দিকের মানুষটা ওর উপর প্রেসার দেওয়াটা বন্ধ করে দিল, তখনই আস্তে আস্তে জবার এই দিকটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আসলে জবা কিন্তু একদম পাশের বাড়ির মেয়েটার মতই। শুধু তার পেশাটা আলাদা। দিনের শেষে তোমার অন্নসংস্থানটা যদি এখান থেকে হয়, তাহলে নিজেকে ছোট মনে করার কিছু নেই। যৌনকর্মীরা এই ছবিটা দেখলে আমি খুব খুশি হব।

প্রশ্ন: এই যে ফুচকা খাওয়ার কথা উঠল, তুমি কি সত্যিই ফুচকা খেয়েছিলে?

প্রিয়া: আমি ৪০-৫০টা করে ফুচকা খেয়েছি।

প্রশ্ন: সে কী!

প্রিয়া: সত্যিই। ইন্দ্রজিৎ এদিকে সাংঘাতিক ডায়েট করে। আর আমি খেয়েই যাচ্ছি। প্রতিম আমাকে বলছে, তুই এতগুলো খাস না। শট দিতে হবে, দরকারে রিটেক করতে হবে। তখন খেতে হবে, এখন খাস না। আমার কথা হচ্ছে, মুম্বইতে আমি ফুচকা খেতে পারি না। পানিপুরিতে আমার পোষাবে না। আমি ফুচকা খাবই।

প্রশ্ন: কলকাতার ফুচকাই শুধু ভাল লাগে?

প্রিয়া: ফুচকা, চিকেন রোল আর রাস্তার ধারের চাউমিন। কলকাতায় এসে এই তিনটে জিনিস বাদে আমি থাকতে পারি না। ফুচকার শটের আগে বিরিয়ানি আনিয়েছি। প্রতিম জিজ্ঞাসা করছে, প্রিয়া কী করছে? ইন্দ্রজিৎ বলছে, সবসময় ও খাচ্ছে। আমি বিরিয়ানি খেয়ে শটে গিয়ে ৫০টা ফুচকা খেয়েছি। যদি তোমার বিশ্বাস না হয়, প্লিজ একবার প্রতিমকে জিজ্ঞাসা করো।

প্রশ্ন: আর একটা কথা। তুমি যে বড়মুখ করে একটা ডায়লগ বললে, “এখনকার হিরোইনদের মত…”

প্রিয়া: ‘এখনকার হিরোইনদের মত আমার ১৮ ইঞ্চির কোমর নয়।’

প্রশ্ন: হ্যাঁ। তুমি যখন ডায়লগটা বলছিলে, একফোঁটাও ‘গিল্ট ফিলিং’ কাজ করেনি! (এই প্রশ্নের কারণ যাঁদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তাঁদের জন্যই এই প্রশ্নের ঠিক আগের ছবিটা দিলাম)।

প্রিয়া: (হেসে) না, না। আমি কিন্তু ১৮ ইঞ্চি নয়, ১৮ ইঞ্চি বাচ্চাদের হয়। সত্যিই আমি প্রতিমকে বলেছিলাম, এই ডায়লগটা কিন্তু আমার বডি টাইপের সাথে যাচ্ছে না। ও বলল, আরে হ্যাঁ যাবে। তুই লোককে এটায় কনভিন্স করে দে। অ্যান্ড আই ডিড ইট।

প্রশ্ন: বাংলায় কাজ করলে। দক্ষিণের ছবি করেছ। হিন্দিতে কাজ করেছ। কিন্তু তুমি কানাডা থেকে এলে, কোনও ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টের কথা ভাবছ না?

প্রিয়া: আমার একটা প্রজেক্টের শুটিং কানাডায় চলছে, কিন্তু সেটা হিন্দি ছবি। আর হলিউডে কাজ করতে গেলে ওখানে থাকতে হবে, ওখানে পুরোটাই অডিশন বেসড্ হয়। ওখানে নিজের এজেন্ট থাকতেও হবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে যে ছবিগুলোর গ্লোবাল কাস্টিং হয় সেক্ষেত্রে তাঁরা মুম্বইতেও আসে কাস্টিং করতে। কিন্তু হলিউডে কাজ করতে গেলে সম্পূর্ণভাবে থাকতে হবে। আমার আর প্রতীক (বব্বর) দুজনেরই খুব ইচ্ছে আছে ওখানে কাজ করার। হয়ত আর দু-তিন বছর পরে আমরা ওখানে একজন সেরকম এজেন্ট রাখতে চাইব। সেভাবে যদি কোনও কাজের সুযোগ তৈরি হয়, সেটা বাংলা, হিন্দি, কোরিয়ান, চাইনিজ যাই হোক না কেন, আমার মনে হয় একজন অভিনেতার সমস্ত ভাষায় কাজ করা উচিত। আমার মোটো, যদি মনে হয় গল্পটা ভাল তাহলে তার অংশ হয়ে যাও। আমি যদি সারা পৃথিবীর জন্য কোনও এজেন্ট পাই যাঁর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় কাজের সুযোগ পাব, আমি নিয়োগ করতে পারি। কারণ আমি সব ভাষায় কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন: অনেকেই বেশি করে ইন্টারন্যাশনাল অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছনোর জন্য ফেস্টিভ্যাল সার্কিটের ছবি বেশি করেন। তোমার কি সেরকম কোনও প্ল্যান আছে?

প্রিয়া: সম্প্রতি ‘ক্যান্ডি অ্যান্ড দ্য পিজ্জা গার্ল (Candy and the Pizza Ggirl) নামে একটা ডার্ক কমেডি করেছি। সেটা এবার গোয়ায় ইফি’তে ছিল। এরকম একটা-দুটো প্রজেক্ট আমি করেছি যেগুলো ফেস্টিভ্যাল সার্কিটের জন্য। আর যা করেছি সেগুলো সবই প্রায় কমার্শিয়াল বা ওয়েবের জন্য। কিন্তু আমার সবসময় মনে হয় যদি লোকে তোমাকে ফেস্টিভ্যালের ছবি বা সিরিয়াস ছবিতে দেখে, তাহলেই কিন্তু তোমাকে তারা সিরিয়াস একজন অভিনেতা হিসেবে গুরুত্ব দেবে। আমি তাই যেকোনো সিরিয়াস ছবির অংশ হতে সবসময় রাজি।

প্রশ্ন: কোন ধরণের ছবি খুব করতে চাও?

প্রিয়া: আমার খুব ইচ্ছে একটা রোম্যান্টিক ট্র্যাজেডি করার। রম-কম নয়, রোম্যান্টিক ট্র্যাজেডি।

প্রশ্ন: বলিউডে ‘জজবা’র মত একটা ছবিতে অভিনয় করলে। তারপরে এখনও পর্যন্ত তোমার কী মনে হয়, স্ক্রিপ্ট বাছাই বা কেরিয়ার গ্রাফ যেরকম চেয়েছিলে সেরকমই হয়েছে?

প্রিয়া: না। কারণ আমি একদমই ক্যালকুলেটিভ নয়। আসলে ভারতে আমি কিন্তু অভিনেতা হতে আসিনি। যদি সেটা হত তাহলে হয়ত সমস্ত কিছুই খুব হিসেব করে হত। এই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাই, এর পরে এইটা, রিলিজের পরে এইভাবে নিজেকে প্রমোট করব। কিন্তু আমি সেরকম করিনি। আমি ইউনিভার্সিটির পাট চুকিয়ে এসেছিলাম আনন্দ করতে, টাইমপাস করতে। তখন শেষ আদিভি’র তেলুগু ছবির অডিশন হচ্ছিল। প্রায় ২০০ জন মেয়ে অডিশন দিয়েছিল। আমাকে এক বন্ধু বলল অডিশন দেবার জন্য। আমি বললাম, আমি অডিশন দিয়ে কী করব! তেলুগু বলতেও পারি না। আমি তখন হিন্দিতে অডিশন দিয়ে কানাডায় ফেরত চলে গেছি। দু’মাস পরে আমাকে মেইল করে জানানো হয়, “ইউ হ্যাভ বিন লকড্ অ্যাজ লিড”। আমি বললাম, লিড! আমি তো অভিনেতাই নয়। তারা বলল, সানফ্রানসিস্কোতে শুটিং। ভাবলাম, গ্রেট! কানাডায় আছি, সানফ্রানসিস্কোতে গিয়ে মজা করব চুটিয়ে।

প্রশ্ন: মজা হল?

প্রিয়া: সে তো হল। টেনশনও ছিল। তারপর আমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেটেড্ হয়ে গেলাম! ওই ছবির গান থেকে সঞ্জয় গুপ্তা ডাকলেন! একটা চেইন রিয়্যাকশনের মত হয়েছে সব। কিন্তু আমার কখনও প্ল্যান ছিল না যে আমি মুম্বইতে থাকব। সবসময়ই দেখতে থাকতাম কখন ঠিকঠাক রিটার্ন টিকিট পাব। কানাডার রিটার্ন টিকিটটা যখন একবার বুক করতে যাব, ঠিক সেই সময় আর একজন বলল, ‘অমুক ছবিতে তোমাকে চাই’। ব্যস, তাই আমার মুম্বই থেকে যাওয়া হয়নি।

প্রশ্ন: এখন সিরিয়াস তো অভিনয় নিয়ে?

প্রিয়া: এখন সিরিয়াস। (হেসে) এখন তো ফ্যামিলিই আছে! কোভিডের ঠিক আগেই আমি ‘টুইস্টেড ৩’ শুটিং করেছি। কোভিডের সময় আমার সব রেডি, ফিরে যাব কানাডা। ভয়, কখন সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে! আমি তো ফিরে যাবই, এখানে থাকব না। ঠিক তখনই প্রায় পুরো পৃথিবী শাট ডাউন হল। সবথেকে আগে কানাডা ফ্লাইট বন্ধ করল। আমি দেখলাম, আমি আটকে গেছি! প্রথমবার জীবনে দুটো বছর আমি ফিরে যেতে পারিনি। তখন ভাবলাম, এবার তো তাহলে অভিনয়কে সিরিয়াসলি নিতেই হবে! এখানে আটকে আছি, কাজ না করলে কী করব? তখন আস্তে আস্তে মানুষের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম, আরও দু-তিনটে ছবি করলাম। তখন থেকে কিছুটা ক্যালকুলেটিভ হলাম বলতে পারো। তার আগে ৬-৭ বছর ধরে আমি অনেকগুলো ছবি করেছি। কিন্তু এসেছে, তাই করেছি। আমাকে ছবি করতে হবে বা করতে চাইছি বলে করছি, সেটা নয়। আমার মাথায় সবসময় থাকত যে আমি কানাডায় ফিরে যাব। আর ফিরে যাওয়া হল না। মুম্বইতে থাকা, আর এখন দেখো কলকাতাতেও চলে এসেছি।

প্রশ্ন: বাবা-মা তো বাঙালি। তুমি বাংলা ছবি করলে। ওঁদের কেমন রিয়্যাকশন হল?

প্রিয়া: বাবা-মা প্রচন্ড এক্সাইটেড। এখন ওঁরাও কলকাতাতেই আছেন। আমার দিদার শরীরটা খুব খারাপ, সেই জন্যই ওঁদের কানাডা থেকে আসা। সেই সময়ই আমার ছবি রিলিজ হল। কিন্তু এখন ওঁদের ছবি দেখার মাইন্ডসেটটা নেই বলে এখনও দেখতে পারেননি। আমার সঙ্গে দেখা করে গেছেন।

প্রশ্ন: তোমাদের কলকাতার বাড়িটা কোথায়?

প্রিয়া: যাদবপুরে। বাবা যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ছাত্র। বাবার ইঞ্জিনিয়ারিং ডবল্ ডিগ্রি, সবই যাদবপুর থেকে। বাবা চিরকাল পড়াশোনায় খুব ভাল। চেয়েছিলেন আমিও ইঞ্জিনিয়ার হব। না হলে গান গাইব, মানে সিঙ্গার হব। দুটোর মধ্যে একটা কিছু হতে হবে। আমি একটাও হলাম না!

প্রশ্ন: গান তো তুমি এখনও গাইতে পারবে?

প্রিয়া: এটা একদমই আমার প্ল্যানের অংশ, কখনও না কখনও আমি একটা গান হলেও প্লেব্যাক করব।

প্রশ্ন: এখন তো কতজন ‘কভার’ করতে করতে প্লেব্যাক করার সুযোগ পাচ্ছেন!

প্রিয়া: আমি লকডাউনের সময় কিছু গান গেয়েছিলাম। আমার ইন্সটাগ্রামে আছে, শুনতে পারো। অনেকেই ‘কভার’ করার কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: ইন্সটাগ্রামের কথা উঠল, তাই বলছি। এখন শোনা যায়, ফলোয়ার সংখ্যার জন্য অনেকে সুযোগ পায়। তোমার কখনও এরকম হয়েছে যে, ফলোয়ার বেসের জন্য কাজ পেয়েছ?

প্রিয়া: আমার অত ফলোয়ার নেই। কমপক্ষে মিলিয়ন ফলোয়ার তো হতেই হবে কাজ পাওয়ার জন্য। তবে আমার উল্টোটা হয়েছে। আমি ফলোয়ার না থাকার কারণে কাজ পাইনি। একটা অডিশন হয়েছিল। সেখানে আমার সঙ্গে আরেকটা মেয়ে অডিশন দিয়েছিল। তার 2-3 Million ফলোয়ার ছিল। আর আমার 900K+; তাকেই কাস্ট করা হয়েছিল। সে খুব ভাল অভিনেতা ছিল, তেমনটা নয়। একটা মিউজিক ভিডিও ছিল। হয়ত মিউজিক ভিডিওর জন্য একটু ফলোয়ারের দরকার হয়! তবে ফলোয়ারের জন্য আমি কাজ পাইনি, বরং কাজ হারিয়েছি। এখনও এত বেশি ফলোয়ার নেই আমার।

প্রশ্ন: তোমার সঙ্গে প্রতীকের কথা না বললে অসম্পূর্ণ হবে ব্যাপারটা। একটা প্ল্যানের কথা ইতিমধ্যেই বলেছ। আমরা দেখেছি, ওঁর সিরিয়াস কাজের প্রতিই টান। স্মিতাজির লিগ্যাসি বলে কথা! আমার খুব মনে হয়, প্রতীক পরিচালনার দিকেও যাবে।

প্রিয়া: ১০০% যাবে।

প্রশ্ন: তুমি কি প্রতীককে পরিচালনার জন্য মোটিভেট করতে থাকো?

প্রিয়া: সেরকম না। আমরা দুজনেই আসলে ক্রিয়েটিভ মানুষ। আমরা দুজনে মিলে স্ক্রিপ্ট লিখতে ভালবাসি। ইচ্ছে আছে দুজনে মিলে একটা সিনেমা বানাব।

প্রশ্ন: যৌথ পরিচালনা?

প্রিয়া: হ্যাঁ। দুজনে। আমরা মোটামুটি যাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করি, আমাদের যে বন্ধু-বান্ধব, তাঁরাও খুব ক্রিয়েটিভ মানুষ। আমাদের অনেক অভিনেতা বন্ধু আছে, পরিচালক বন্ধু আছে। তাই যখন বাড়িতে থাকি এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা স্ক্রিপ্ট লিখি, গল্প লিখি। আমরা ভাবি, কী করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা একটা ভাল সিনেমা বানাব। যেটা খুব ‘আর্টি’ হবে। এটা সবসময় আমাদের মাথায় থাকে যে অভিনয়ের সঙ্গে এটা আমাদের একদিন করতেই হবে।

প্রশ্ন: একটা বাংলা কনটেন্ট দুজনে একসাথে করার প্ল্যান করতে পারো তো? প্রতীকের মাথায় এই কথাটা ঢুকিয়ে দিতে পারো।

প্রিয়া: ও তো বাংলা ছবি করেছে!

প্রশ্ন: হ্যাঁ, অরণি তখন। তোমাকে আবার বাংলা ছবিতে কবে দেখব?

প্রিয়া: তুমি লিখে জানিয়ে দাও, আমি অনেক ভাল ভাল বাংলা ছবি করতে চাই। পরিচালকরা আমাকে বারবার ডাকলে আমি খুশি মনে কাজ করতে চলে আসব।

Loading


Share It