রান্নাঘরের অন্দরে রহস্যের ঘনঘটা, বাপ্পার ‘রবিন্স কিচেন’-এ বনি-প্রিয়াঙ্কা
সোমনাথ লাহা
টলিউডের সঙ্গে থ্রিলার বিষয়টি এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক বাংলা ছবির তালিকায় চোখ রাখলেই তার প্রমাণ মিলবে। এবারে রহস্যের ঘনঘটা পরিবৃত হয়েছে রান্নাঘরের অন্দরমহলে। সেটি কোনও বাড়ির রন্ধনশালা নয়, একদম ঝাঁ চকচকে রেস্তোরাঁর কিচেন। এহেন কিচেনকে কেন্দ্র করেই কাহিনির বুনন ঘটিয়েছেন পরিচালক বাপ্পা। ডার্ক থ্রিলার ঘরানার এই ছবির নাম ‘রবিন্স কিচেন’। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন বনি সেনগুপ্ত এবং প্রিয়াঙ্কা সরকার।
বড়পর্দায় অবশ্য এই জুটির এটাই প্রথম কাজ নয়। ইতিপূর্বে এই জুটিকে অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অহল্যা’ ছবিতে একসঙ্গে দেখেছেন দর্শকরা। অপরদিকে মূলত নাট্যকর্মী বাপ্পা বরাবরই গতানুগতিকতার থেকে বেরিয়ে অন্যরকম কাজ উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। তাঁর পরিচালিত ছবি ‘ত্রিভুজ’, ওয়েব সিরিজ ‘সাইকো’ সেই ধরনের কাজের প্রমাণ।

সেই কারণেই পরিচালকের নতুন ছবিকে ঘিরেও দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ থাকবে তা বলাই যায়। ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক রবিন(বনি)-কে কেন্দ্র করে। আর পাঁচজন ছেলের মতোই সেও ছোটবেলা থেকেই মায়ের হাতের রান্না খেতে খুব ভালবাসে। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একটি রেস্তোরাঁ খোলার, যেখানে ওর মায়ের স্পেশাল রেসিপিগুলো দিয়ে ও সকলের মন জয় করে নেবে।
কালক্রমে বন্ধুদের সহযোগিতায় কষ্ট করে রবিন একটি ক্যাফে খোলে, যেটির নাম রাখে ‘রবিন্স কিচেন’। এহেন ক্যাফেটেরিয়াতেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় নীহারিকার (প্রিয়াঙ্কা)। সে ওখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পরস্পরকে ভালবেসে ফেলে তারা। কিন্তু এরপরই রবিন ও নীহারিকার জীবনে দুঃস্বপ্নের মতো এসে উপস্থিত হয় রাজনৈতিক নেতা অরিত্র। রবিনের ক্যাফের জমি হাতানোর ফন্দি আঁটলেও ব্যর্থ হয় সে।
গল্প অন্যদিকে মোড় নেয় যখন ব্যবসার উন্নতির জন্য নীহারিকাকে একা ছেড়ে ক’দিনের জন্য কলকাতার বাইরে যায় রবিন। নীহারিকাকে একা ক্যাফে চালাতে দেখে অরিত্র নীহারিকার উপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ক্রমেই অসহায় হয়ে পড়ে সে। এমন সময় রবিন ফিরে এসে জানতে পারে নীহারিকার এমতাবস্থার জন্য দায়ী অরিত্র। এবার কি করবে রবিন? নীহারিকার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বদলা কি নিতে পারবে সে? সেই উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন শান্তনু নাথ, কেশব ভট্টাচার্য, সস্রীক গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।
ছবির কাহিনি লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। চিত্রনাট্যকার সস্রীক গঙ্গোপাধ্যায়। সংগীত পরিচালনায় অর্ণব চক্রবর্তী। দৃশ্যধারণ করেছেন অনুজিত কুণ্ডু। সম্পাদনায় সায়ন্তন নাগ। ছবিটির প্রযোজক মুকেশ পাণ্ডে। সম্প্রতি শহরের একটি রুফটপ রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে এল ছবির ফার্স্ট লুক পোস্টার ও ট্রেলার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছবির মুখ্য অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক-প্রযোজক সহ অন্যান্য কলাকুশলীরা।

ছবি প্রসঙ্গে পরিচালক বাপ্পা জানান, “থ্রিলার মানেই আসলে আমরা ডার্ক দিকে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু এটা হালকা মেজাজের একটা রোম্যান্টিক থ্রিলার ছবি। কিচেনকে কেন্দ্র করে বাংলায় সেভাবে আমরা ছবি তৈরির চ্যালেঞ্জ নিই না। বাঙালি মাত্রই খাদ্যরসিক। তাই আমার মনে হয়েছে রহস্য ও খাদ্য সবটা একইসঙ্গে পেলে বাঙালিরা ছবিটা দেখতে পছন্দ করবে। এই ছবিটি দর্শকদের সেই স্বাদ দিতে পারবে।” ছবির গল্প সম্পর্কে তাঁর আরও বক্তব্য, “এখানে রান্না, রেস্তোরাঁ, এমনকি প্রেমকে ঘিরেও জট রয়েছে। সবটা জানতে হলে ছবিটা দেখতে হবে।” বনি ও প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কাজের প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, “দুজনেই খুব ভাল। খুবই সহযোগিতা করেছেন। আমি ওদের থেকে ছোট হলেও সেটা একবারের জন্যও বুঝতে দেয়নি।”
প্রিয়াঙ্কার কথায়, “এই ছবির গল্পটা খুব বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিক। ছবিতে আমার অভিনীত চরিত্রটিরও অনেকগুলি দিক রয়েছে। পিতৃ-মাতৃহীন এই মেয়েটির সিলেকটিভ মেমোরি ডিসঅর্ডারের সমস্যা রয়েছে। সেখান থেকে সবকিছু মিলিয়ে মানিয়ে নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি কিভাবে সে সম্পর্ক বজায় রাখে, এমন অনেক দিক রয়েছে। পাশাপাশি বনির সঙ্গে আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুবই ভাল। তাই ওর সঙ্গে আবার কাজ করতে চাইছিলাম। বাপ্পার সঙ্গে কথা বলেই ওকে আমার সম্ভবনাময় বলে মনে হয়েছে। সেই কারণেই এই কাজটা করতে রাজি হয়েছি।” তবে এর পাশাপাশি ছবিতে রান্নাও করেছেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, “এখানে আমি কন্টিনেন্টাল খাবার বানিয়েছি। বাড়িতে এগুলো আমি একদমই বানাই না।” রান্না করা প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমি রান্না নিয়ে প্যাশনেট নই। আমি আমার কাছের মানুষদের ইমপ্রেস করতে রান্না করি।”
ছবিতে একজন শেফের চরিত্রে অভিনয় করা প্রসঙ্গে বনির মন্তব্য, “আমি খেতে খুব ভালবাসলেও কিচেন থেকে দূরে থাকি। তবে ছবির প্রয়োজনে আমাকে চপিং, টসিং, ফ্রাই, গ্রিলিং এগুলো শিখতে হয়েছে। ছবিতে অভিনয় করার থেকেও তাই রান্না করাটা বেশি কঠিন বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।” ছবির নিয়ে বেশি কিছু খোলসা না করলেও বনি জানান, “খাবারকে কেন্দ্র করে যেভাবে একটা থ্রিলার গল্পকে তৈরি করা হয়েছে সেটা বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার। ছবির চিত্রনাট্যও খুব সুন্দর।”
আগামী ১৯ জুলাই বড়পর্দায় মুক্তি পাবে পান্ডে মোশন পিকচার্সের ব্যানারে নির্মিত ‘রবিন্স কিচেন’।