আমার প্রমাণের তাগিদ ছিল যে আমি ‘কন্ট্রোভার্সি আইটেম’ নয়: সীমা বিশ্বাস

Share It

অতনু রায়

অভিনয়ে তিনি অ-সীমা। তাঁর উপস্থিতি দর্শককে দেয় এক অদ্ভুত বিশ্বাস। সব ধরণের চরিত্র সমান বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। দীর্ঘ ১৩ বছর পরে আবার বাংলা ছবিতে অভিনয় করলেন তিনি। অরোরা ফিল্মস প্রযোজিত এবং শর্মিষ্ঠা মাইতি-রাজদীপ পাল পরিচালিত ‘মন পতঙ্গ‘ ছবিতে এক বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী সীমা বিশ্বাস‘কে। এক আড্ডায় অন্য মেজাজে ধরা দিলেন অভিনেত্রী।

প্রশ্ন: ‘মন পতঙ্গ’ ছবিতে একদমই অন্যরকম একটা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনার চরিত্রটা কী কাজ করে এই ছবিতে?

সীমা: আমার চরিত্রটা এই ছবির সঙ্গে খুব ভালভাবে কানেক্টেড। ছবির নাম ‘মন পতঙ্গ’ কারণ, সবারই মনে একটা পতঙ্গ থাকে যে উড়ে বেড়ায়। আমারও আছে। এবার সেই পতঙ্গ উড়ে কোথায় যায় সেটাই দেখাবে এই ছবি। পুরো গল্প আমি বলব না কারণ, এইটুকু সাসপেন্স থাকা দরকার। শুধু এটুকুই বলছি, আমি ফুটপাথের একজন মানুষ যে একটা দোকান করে চা, পাউরুটি, অমলেট বিক্রি করে। পিঁয়াজ, লঙ্কা কেটে অমলেট বানায়, খাওয়ায়। এখানে একটা মজার ব্যাপার হয়েছে, অনেক সাধারণ মানুষ এটা সত্যি ভেবে আমার দোকানে চা-সিগারেটের খোঁজে এসেছিলেন।

প্রশ্ন: অসম থেকে আপনি ‘ন্যাশনাল স্কুল অব্ ড্রামা’-তে পড়তে গেলেন। সারাদিন ক্লাস করার পরে বন্ধুরা মিলে কখনও ফুটপাথের দোকানে খাবার খেয়েছেন?

সীমা: ন্যাশনাল স্কুল অব্ ড্রামা-তে (NSD) আমার প্রথম তিন মাসের কথা বলছি, আমার স্কলারশিপ ছিল ২০০ টাকা। আমি তখন নিজেকে বুঝিয়েছিলাম যে, আমি এই টাকার মধ্যেই সবটা ম্যানেজ করে নেব। আমরা চার বোন আর এক ভাই ছিলাম। আমি মা-বাবার কাছে বোঝা হতে চাইনি। শুধু ট্রেনে আসা যাওয়ার টিকিট বাদে বাকি সবটা আমি ম্যানেজ করে নেব ঠিক করেছিলাম। এই প্রবণতা কিন্তু আমার প্রথম নয়। আজও ‘ফাইভ স্টার’ হোটেলের ঘরটুকুই আমার ভাল লাগে, তাও শুধু পরিষ্কার বাথরুম আর বিছানা থাকে বলে। ‘ফাইভ স্টার’ লাইফটা আমি এনজয় করি না। এনএসডি ফার্স্ট ইয়ারে, আমার মা আমাকে নিয়ে গেলেন, পাঁচটার সময়ে তিনসুকিয়া মেলে আমরা মান্ডি হাউস পৌঁছেছি। ওখানে তখনও গেট খোলেনি। ফুটপাথে একটা চায়ের দোকান ছিল, সেখানে আমি আর মা চা খেয়েছিলাম। চা খেতে খেতে মা আমাকে বলেছিল, “তোমার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। বিশ্বাসটা রাখা তোমার কাজ। আমরা চৌকিদারিও করব না, তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসাও করব না”।

এরপর এনএসডি-তে যখন পড়েছি, সেরকম ভাবে ফুটপাথের খাবার ছিল না। আমাদের কম্পাউন্ডের মধ্যে বেঙ্গলি মার্কেট ছিল। খুব ‘পশ্’ বা ‘রিচ’ নয়, কিন্তু ফুটপাথ এলাকাও ছিল না, যেহেতু এটা মান্ডি হাউস এলাকা। কিন্তু রাত বারোটা, একটা বা দুটোর সময় প্রজেক্ট করে যখন প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকতাম, আমাদের টিচারই আমাদেরকে বলতেন, “চল্ আজকে তোদের অমলেট-পরোটা খাইয়ে আনি”। তবে অসমে ফুটপাথে খাওয়ার প্রচুর স্মৃতি আছে আমার। রাস্তায় পাতায় করে যে ঘুগনিটা দেয়, জল জল একটা ভাব থাকে, ওই অনুভূতিটা কখনোই কোনও ‘ফাইভ স্টার’ হোটেলে বসে পাওয়া যাবে না। ওই ঘুগনির মধ্যে একটা মাটির গন্ধ থাকে, সেটা আমার খুব ভাল লাগে।

প্রশ্ন: ফুটপাথের জীবন আপনাকে আকর্ষণ করে?

সীমা: একটা কথা মনে পড়ল, বলি। এনএসডি-তে আমার বেশিরভাগ বন্ধু খুব বড়লোক ছিল। একজনের দাদা এসেছিল, তখন সে আমাকে তাজে নিয়ে গিয়েছিল। তখন আমি প্রথম দেখেছি যে ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করছে। আমি তখনই ঠিক করেছিলাম, যতদিন না আমার নিজের এই সামর্থ্য হবে আমি এই ধরণের ইনভিটেশনে যাব না। কারণ, এটা আমার ভিতরে একটা ‘কমপ্লেক্স’ তৈরি করছিল। মনে হচ্ছিল, কারোর দয়ায় আমি ‘ফাইভ স্টার’ হোটেলে খেতে ঢুকছি।

ফুটপাথের জীবনটা আবার একদম আলাদা। শ্যুটিং করতে করতে আমি ফুটপাথে এক দম্পতিকে দেখছিলাম। লোকটা স্টোভ জ্বালাচ্ছে আর তার স্ত্রী পিঁয়াজ কাটছে। দেখলাম ওইটুকু জায়গার মধ্যে ওরা সবকিছু করছে। আমরা শ্যুটিং করছিলাম, আমাদেরকে বিন্দুমাত্রও ডিস্টার্ব করেনি। তারপরে দেখলাম দুটো বাচ্চা, তারা পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে কিন্তু সেই ব্যাথাটা আমি ধরতে পারছিনা! এই যে ফুটপাথে বসে ওরা রান্না করে, এত সুন্দর গন্ধ বেরোয় আমার খালি মনে হয় যে আমি ওদের পাশে গিয়ে বসে ওদের তাওয়া থেকে একটা রুটি তুলে নিই। এঁদের জীবনটা আমাকে খুব টানে। মন থেকে বলছি। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট যে ছিল তাকে বলছিলাম, দেখো এটাই কিন্তু রিয়্যালিটি।

প্রশ্ন: আপনি একজন অভিনয় শিখে আসা অভিনেত্রী। একজন শিখে আসা আর না শিখে আসা অভিনেতার সঙ্গে অভিনয়ের কতটা আলাদা অনুভূতি হয়?

সীমা: শিখে আসা হোক বা না শিখে আসা, অভিনয়ের ক্ষেত্রে সেটা আমার কাছে অতটা গুরুত্ব পায় না। আমি যদি এনএসডি’র কথা ধরি, সারা দেশ থেকে কুড়ি জনকে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও যে মানুষগুলো অভিনয় করতে চাইছেন তাঁদের তো সেটা ক্রাইম নয়! তাঁরা সেখানে সুযোগ পেলেন না বা আর্থিক কারণ বা তাঁদের ইচ্ছে নেই যেকোনো কিছু হতে পারে। আমি মনে করি যে, অভিনেতা হতে চাইলেই যে ট্রেনিং নিতে হবে সেটা কিন্তু সবসময় খুব দরকারি নয়। এত কিংবদন্তি অভিনেতা রয়েছেন, যদি বাংলাতেও ধরি, বেশিরভাগই তো ‘নন-ট্রেইন্ড অ্যাক্টর’। আমার ক্ষেত্রে যদি আমার সহ-অভিনেতা একটা ‘অ্যাটিটিউড’ নিয়ে কাজ করেন বা মনে হয় যে তিনি হৃদয় দিয়ে কাজটা করছেন না, তখন আমার একটুখানি ‘আনকম্ফর্টেবল্’ লাগে। কিন্তু আমি কিছু বলি না। কারণ, ছবি আসলে একদমই পরিচালকের মাধ্যম। আমার খুব ইচ্ছে হয় যে, যাঁরা নতুন রয়েছেন তাঁদেরকে আমার ‘অ্যাক্টিং প্রসেস’ বা মেথডের টিপস্ দিয়ে যেতে। আমি কিন্তু একদমই বলছি না যে, আমি খুব ভাল অভিনেত্রী। আমি শুধু তাঁদেরকে শেখাতে চাই যে, কষ্ট করো, খাটো, আন্তরিক আর সৎ থাকো। চরিত্র যেমনই হোক, অভিনয় করতে হবে হৃদয় থেকে। আমি অনেক সময়েই আমার সহ-অভিনেতাদের অনেক কিছু বলি আবার অনেককে বলি না। কারণ, আমি বুঝতে পারি, কাকে বললে শুনবে। যে শুনবে না, আমি তাকে বলি না।

প্রশ্ন: আপনার কাছে অভিনয় কি?

সীমা: একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি বুঝি, অ্যাকশন এবং তার রিয়্যাকশন্…এটাই অভিনয়। আপনি যতটা রেগে গিয়ে আর যে টোনে আমার সঙ্গে কথা বলবেন, আমি সেই টোনের ভিত্তিতেই রিয়্যাক্ট করব। আমাকে শেখর (কাপুর) বলত, একজন যেরকম টোনে তোমার সঙ্গে কথা বলছে তুমি যখন একদম সেই টোনেই তাঁকে উত্তরটা দিচ্ছ, সেটাই রিয়্যালিটি। ভালভাবে রিহার্সাল করেও যদি ‘ফিডব্যাক স্ট্রং’ না হয় তাহলে সেটা কিন্তু রিয়্যালিটি নয়। আমি কোনও সিচ্যুয়েশনে অভিযোগ করি না, আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। আমি তো শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন বা মাধুরী দীক্ষিতের মত কোনও বড় স্টার নয়, যে শর্ত দেবে কাকে কাস্ট করবে আর কাকে করবে না! আমি একজন ‘কমপ্লিট’ অভিনেত্রী এবং একজন ‘হার্ডকোর’ থিয়েটার অভিনেত্রী। একজন মানুষ যদি মানুষ হিসেবে আমাকে ডিস্টার্ব করে তখনই আমি একটু ‘আনকম্ফোর্টেবল’ ফিল করি। কিন্তু চেষ্টা করি যাতে আমার অভিনয় বা কাজে সেই প্রভাবটা না পড়ে।

প্রশ্ন: প্রথম ছবি ‘ব্যান্ডিট কুইন’, পরের ছবি ‘খামোশি দ্য মিউজিক্যাল’। দুটো চরিত্র একদম আলাদা হলেও ছবি হিসেবে দুটোই ‘অন্য ধারার’ বা ‘সমান্তরাল’ ছবি। এই ধরণের ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখলে আদ্যন্ত কমার্শিয়াল ছবিতে কাজ পেতে অনেকেরই অসুবিধা হয়। আপনার ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়নি?

সীমা: ‘ব্যান্ডিট কুইন’ আর ‘খামোশি দ্য মিউজিক্যাল’ প্রায় একই সঙ্গে রিলিজ হয়েছিল। ‘ব্যান্ডিট কুইন’-এর যখন এডিটিং চলছিল তখন সঞ্জয় লীলা ভনশালী চার ঘণ্টার ‘রাশ্ – কাট্’ দেখেছিলেন। এরপর আমাকে খুঁজছিলেন। আমি তখন ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, ‘লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ ঘুরে বম্বেতে। তখন দিল্লিতে ‘ন্যাশনাল স্কুল অব্ ড্রামা’ রেপার্টরীতে কাজ করি। এক রাতে বম্বেতে হল্ট ছিল। আমার বন্ধুবান্ধব যারা ছিল তাদের ফোন করলাম, একরাত থাকতে পারব কিনা জানতে চেয়ে। তারা বলল, তুই চলে আয়। তোকে খুঁজতে রামগোপাল ভার্মা আর সঞ্জয় লীলা ভনশালী দিল্লি গেছে। পরের দিন সকালে আমাকে একটা নম্বরে ফোন করতে বলল। ফোন করলাম। সঞ্জয় এল। বন্ধুর বাড়ির সিঁড়িতে বসে আমাকে পুরো গল্পটা শোনালো। আমার স্ক্রিপ্ট চাই, তাই আমাকে স্ক্রিপ্ট দিল। আমি শেখরের সঙ্গে আলোচনা করলাম। শেখর আমাকে ছবিটা করতে বারণ করল।

প্রশ্ন: তা সত্ত্বেও করলেন কেন?

সীমা: শেখর আমাকে বলেছিল, “অনেকগুলো বড় ছবি আসছে, তুমি এই জায়গাটাকে নষ্ট কোরো না। তুমি এই ছবিটা করলে সবাই তোমাকে এরপরে মায়ের চরিত্রে কাস্টিং করবে”। তারপরে লক্ষ্য করবেন, ‘হাজার চুরাশির মা’ সহ অনেক ছবিতে আমি সত্যিই মায়ের চরিত্র করেছি। তখন আমি মায়ের চরিত্রেই নতুন কিছু একটা মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তখন সুধীর মিশ্র, রামগোপাল ভার্মা আমাকে বারবার বলেছিলেন যে এটা কোরো না। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কোনও ‘গডফাদার’ বা ‘গডমাদার’ নেই। আমি চুপচাপ একা বসে ভাবলাম আর নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম। মনে হল, আমার ‘ব্যান্ডিট কুইন’ এখনও রিলিজ হয়নি ভারতে, তাতেই এত বিতর্ক! আমি রাস্তায় বেরোলেই মানুষ আমাকে চিনে ফেলে, আমি এয়ারপোর্টে গেলে মানুষ আমাকে চেনে, কিন্তু তাঁরা আমার কাজ দেখেনি। এই ধরণের বিখ্যাত আমি হতে চাই না, আমি প্রমাণ করতে চাই যে আমি একজন কমপ্লিট অভিনেত্রী এবং আমি এটা করবই। তাই আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিই যে আমি ছবিটা করব। আমি জানি শেখরের খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু আমি ছবিটা করেছিলাম। তার জন্য আমি পরবর্তীকালে ভুগেছি। আমাকে সত্যিই শুধুমাত্র মায়ের চরিত্রের জন্য বাছা হয়েছে পরপর। কিন্তু সেই সময়ে আমার নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদটাও ছিল যে আমি ‘কন্ট্রোভার্সি আইটেম’ নয়, আমি একজন অভিনেত্রী।

প্রশ্ন: সে তো দু নম্বর ছবিতেই হয়ে গেল।

সীমা: আমাদের এখানে ঐশ্বর্য রাই বা মাধুরী দীক্ষিতের মত সুন্দরী না হলে তাঁকে কল্পনা করে কোনও গল্প লেখা হয় না। আমাদের মত অভিনেত্রীদের কাছে এটা খুব কষ্টের একটা জায়গা। অনেক বিদেশী ছবিতে কিন্তু আমরা এরকম চরিত্র দেখে থাকি। আমাদের মত লুক-এর মানুষের জন্য কেউ গল্প ভাবে না, এটা খুব কষ্টের। আমি কিন্তু সার্ভাইভ্যালের জন্য এই কাজগুলো করিনি। আমি তো ভেবেছিলাম, ‘ব্যান্ডিট কুইন’ আমার প্রথম এবং শেষ ছবি। রামগোপাল ভার্মা ‘কোম্পানি’র সময় বলেছিল, “সীমা, তুমি আমার উপরে বিশ্বাস রাখ”। উনি আমাকে অনেক ইম্প্রোভাইজ করতে দিয়েছেন, আমিও আমার মত করে ছোট ছোট অনেক মুহূর্ত অ্যাড করেছি।

প্রশ্ন: কাজের জন্য অপেক্ষা তার মানে সেরকমভাবে করতে হয়নি কখনও?

সীমা: ‘ব্যান্ডিট কুইন’-এর পরে দু’বছর আমি চুপচাপ ঘরে বসে ছিলাম। কারণ, তখন আমার কাজ করতে ইচ্ছে করত না। এমন ধরণের চরিত্র আসত! আমির খানের মা, অমিতাভ বচ্চনের মা, অনিল কাপুরের মা অথবা কেউ এরকম বলেছেন যে ‘ব্যান্ডিট কুইন’ কমপ্লিট বানাতে চান, এইসব। আর্থিকভাবে সেইসময়ে আমি প্রচন্ড কষ্টে কাটিয়েছি। এখনও আমি আমার ‘ডিগনিটি’কে ‘হার্ট’ করতে চাই না কিন্তু আমাকে তখন আর্থিকভাবে খুবই খারাপ দিন কাটাতে হয়েছে। আমি সেটা কাউকেই বলতাম না, এমনকি আমার বাবা-মা’কেও আমি বলিনি। আমি ঘরের গ্রিল বন্ধ করে নিজেকে আটকে রাখতাম। এমনকি আমি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরে যখন মানুষ ফুল দিতে এসেছেন, দেখেছেন যে আমার ঘরের বাইরের দিক থেকে তালা দেওয়া। তাঁরা ভেবেছেন, সীমা নেই। তাই বাইরে ফুল রেখে গেছেন। আসলে আমি কখনওই ‘পাবলিসিটি সিকার’ ছিলাম না। আমি একজন আদ্যন্ত অন্তর্মুখী মানুষ। আমি সবসময়ই আমার তরফ থেকে চেষ্টা করেছি, ‘সিলেক্টিভ’ কাজ করেছি, যেখানে যতটুকু সম্ভব আলাদা কিছু করার চেষ্টা করেছি। সব মা তো একরকম হতে পারেন না, তাই মায়ের চরিত্রেও আমি যতটুকু আলাদা কিছু দিতে পারি সেই চেষ্টাই করেছি।

প্রশ্ন: ওটিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন? সম্প্রতি ওটিটিতে বেশ কয়েকটা ভাল কাজ নিজেও তো করলেন।

সীমা: ওটিটিতে যেকটা কাজ করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত। কাজগুলো খুব ইন্টারেস্টিং। কিন্তু একই সঙ্গে আমার একটু ভয়ও হয়। এখন আমি অনেকক্ষেত্রে ওটিটিতে খুব নীচু মানের ও নিম্ন রুচির কাজ দেখছি। আমার নতুন প্রজন্মটাকে নিয়ে খুব ভয় হয়। মুম্বইতে আমার বাড়িতে অনেক ‘আন্ডার প্রিভিলেজড্’ বাচ্চা থাকে। তারা আসে অনেক আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে। তাদের কাছে অডিশনের জন্য অনেক ফোন আসে আর যে বিষয়গুলো আসে সেগুলো খুবই খারাপ। সেগুলোকে কোনোভাবেই আপনি ব্লু-ফিল্মের থেকে আলাদা করে দেখতে পারবেন না। খুবই নিম্ন রুচির। আর যদি ভালর দিকে আসে তাহলে ভায়োলেন্স, সাসপেন্স থ্রিলার, এইসব। কিন্তু সেটাই তো যথেষ্ট নয়। তাও বলব, এর মধ্যেও অনেক ভাল কাজ হচ্ছে। আমার কাছেও বেশ কয়েকটা খুব ভাল গল্প এসেছে। এই যেরকম ‘মন পতঙ্গ’ করেছি, এরকমই আরও অনেক ইন্টারেস্টিং ভাল কাজ আমার কাছে এসেছে। নতুন প্রজন্ম ব্যস্ততা ভালবাসে, ব্যস্ত থাকতে চায় আর সার্ভাইভ করতে চায়। কিন্তু দেখতে হবে যে, টেলিভিশনের মতো ট্র্যাজেডি যেন না হয়। ভয় হলেও আশা রাখছি যে, আরও অনেক ভাল মানের কাজ এখানে হবে। আমি খুবই গর্বিত যে আমি ‘ফ্যামিলি ম্যান ২’ এর মত সিরিজের অংশ হতে পেরেছি। এগুলোর পেছনে অনেক হার্ড ওয়ার্ক আছে। খুব ভালভাবে লেখা সিরিজ এবং খুব ভালভাবে তাঁরা কাজটা করে। এরকম হলে খুব ভালই হয়। তখন কাজের সংখ্যাটা অনেক বাড়বে। ছবি কিন্তু সকলে বানাতে পারে না। এর জন্য অনেক টাকা পয়সার দরকার। ‘কর্পোরেট সাপোর্ট’ কিন্তু সবাই পায় না। তবে সেখানে ওটিটিতে ভাল কাজ করলে সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছানোর একটা সুযোগ থেকে যায়।

Loading


Share It