“অভিষেককে বলেছি, তুই ইরফানের রোলটা করছিস”: সুজিত সরকার

Share It

সুজিত সরকার নামটা বাঙালি একটু অন্যভাবে উচ্চারণ করে। কারণ, মুম্বইতে বসে অন্য ভাষায় ছবি বানিয়েও তিনি বাঙালির মনের এমন একটা স্পর্শকাতর জায়গা ছুঁয়ে ফেলতে পারেন, যেটা হয়ত বাংলা ভাষায় ছবি বানিয়েও অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাঁর জন্য যে বাঙালির মনে একটা আলাদা জায়গা থাকবে তা আর আশ্চর্যের কী! ‘অক্টোবর’ পরিচালক নভেম্বরের শেষে হঠাৎ হাজির কলকাতায়। সঙ্গে তাঁর নতুন ছবি ‘আই ওয়ান্ট টু টক্’ নিয়ে। সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যে সময় বার করলেন ‘আড্ডা’র জন্য। আর তিনি যখন মন খুলে কথা বলেন, সেটাও অনেকটা ওঁর সিনেমার মতই হয়। সুজিত সরকারকে সামনে পেলে তাই সত্যিই বলতে ইচ্ছা করে, ‘আই ওয়ান্ট টু টক্’।

প্রশ্ন: সুজিত সরকার প্রবাসী বাঙালি, তাঁর ছবি আদ্যন্ত বাঙালি। বাংলার জন্য আলাদা টান?

সুজিত: হ্যাঁ, আমি প্রবাসী বাঙালি কিন্তু মুম্বইতে বসে আমি কিন্তু বাংলা ছবিই বানাচ্ছি। কেউ অভিযোগ করতে পারবে না যে আমি বাংলার জন্য বানাচ্ছি না। ‘পিকু’ হোক বা ‘আই ওয়ান্ট টু টক্’, দুটোই কিন্তু আসলে বাংলা ছবি। কারণ, বাংলার দর্শকদের কাছে আমার অনেক আশা। ভারতবর্ষের মধ্যে বাংলার দর্শকরা আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা সাহিত্যবোধের ক্ষেত্রে কিন্তু অনেকটা উপরে তাই তাঁরা সিনেমার কাছ থেকেও যেন সেই সম্মানের জায়গাটা পায় সেটাও দেখার। সত্যজিৎ রায়কে তখন কেউ চেনেননি, এখন যেভাবে চিনছেন। কিন্তু ওঁকে যদি তখন আমরা চিনতাম বা সেই জায়গাটা দিতাম কত ভাল হত বল! দেশ-বিদেশে এখনও তো ওঁরই নাম। তখন থেকে যদি হত!

প্রশ্ন: ‘আই ওয়ান্ট টু টক্’। অর্জুন সেনের তো বটেই, এটা তো সমস্ত শিল্পীরও কথা! প্রত্যেক শিল্পীই তো তাঁর কথাটা বলতে চান।

সুজিত: আমার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কথা বলতে চাই। কমিউনিকেট করাটা আমাদের কিন্তু খুব দরকার। আমাদের বেশিরভাগ পারিবারিক সমস্যা কিন্তু এই কারণে যে আমরা কমিউনিকেট করতে পারি না। আমরা কথা বলি না ঠিক করে। কিছু না কিছু নিজেদের মধ্যে আমরা রেখে দিই। এটা কিন্তু ছেলেদের মধ্যে বেশি…

প্রশ্ন: তাই কি?

সুজিত: হ্যাঁ। আমি দেখেছি ছেলেরা খুব কম ‘এক্সপ্রেস’ করতে পারে। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। সাধারণত মেয়েরা বেশি ‘এক্সপ্রেস’ করতে পারে। এই ছবিতেও দেখবে, বাবা আর মেয়ের মধ্যে যখন একটা দ্বন্দ্ব চলছে, বাবা যেখানে বুঝতে চেষ্টা করছে মেয়ে সেটা বুঝে গেছে। মেয়ে বলতে চেষ্টা করছে। মেয়ে চাইছে বাবা কথা বলুক। কিন্তু বাবাকে কী আটকে দিচ্ছে সেটা বলা মুশকিল। ছবিতে অভিষেকের ক্ষেত্রেও তাই। ও কথা বলতে চায়। আবার অনেক সময় খুব আজেবাজে কথাও বলে।

প্রশ্ন: তুমি সব সময় নিজের কথা নিজের মত করে বলতে পেরেছ, বলেছ। এই ছবিতে বাস্তবের একজন মানুষের জীবন জড়িত। যেভাবে অর্জুনের কথা বলতে চেয়েছ, পেরেছ?

সুজিত: অর্জুন আমার বন্ধু। ওকে নিয়ে আমি ছবিটা বানিয়েছি। ও আমেরিকাতে থাকে। আমি ওর কথাটা আমার মত করে বলতে চেয়েছি। আমি সত্যিই খুব গভীর কিছু কথা হাসির ছলে, সরলভাবে বলতে চেয়েছি। আমার আশা মানুষ ছবিটার সঙ্গে রিলেট করতে পারবে।

প্রশ্ন: আমরা অভিনেতারা ‘টাইপকাস্ট’ হয়ে গেলে সমালোচনা করি। পরিচালকদের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় একটা ‘সিগনেচার’ থাকা প্রয়োজন বলি। সবাই সেটা তৈরি করতে পারেন না, তুমি পেরেছ। তুমি গল্পের চিত্রনাট্যের শুরু থেকেই কাউকে কাস্ট করবে ভেবে রাখো, নাকি পুরোটা লেখার পর চরিত্র অনুযায়ী ‘গড গিফটেড’ ভাবে চরিত্রের অবয়ব চোখে ভাসে?

সুজিত: ‘আই ওয়ান্ট টু টক্’ ছবির ক্ষেত্রে অভিষেক শুরু থেকেই আমার মাথায় ছিল। আমি ওকে মাথায় নিয়ে লিখছি কিন্তু ওকেই কাস্ট করব ভাবিনি। ভেবেছি অন্য কাউকেও হয়ত কাস্ট করতে পারি। অভিষেক আমার বন্ধু। আমরা দুজনে খেলাধূলা করি। আমি ওর বাবার সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। আমি যখন ওর বাবার সঙ্গে কাজ করতাম, তখন ও মাঝেমধ্যেই ওখানে হেঁটে চলে আসত। বলত, দাদা লাঞ্চ করতে এসেছি। ও হয়ত অন্য একটা সেটে কাজ করছে পাশে, ফোন করে হয়ত খাবার খেতে চলে এল বা বলল বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। তারপরে হয়ত আমার সেটেই রয়ে গেল, হাসি-ঠাট্টা করল। ও প্রচন্ড ইয়ার্কি মারে আর খুব কথা বলে।

প্রশ্ন: একদম অন্য অভিষেক!

সুজিত: ওর সাথে আমার একবার দেখা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতে। ও আমাকে বলল, দাদা তোমাকে ডিনারে নিয়ে যাব। আমি বললাম, হঠাৎ তুই আমাকে ডিনারে নিয়ে যাবি কেন? বলল, চলো না! ডিনারে গিয়ে সেদিন আমাকে অনেক কিছু বলল নিজের কথা। ওর মধ্যে একটা খুব গভীর ব্যাপার রয়েছে। বলল দাদা, আমি এইরকম করতে চাই, এইটা আমি। এত ছবি করেছে ও! কিন্তু ওর ছবি চলছিল না। সবাই বলছে, ভাল ছেলে কিন্তু একটাও ঠিক ছবি দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু, ওই বিকেলটা ওর সঙ্গে কাটানোর পরে আমি ওকে একদম ভালবেসে ফেলেছি। মনে হল এত ভাল ছেলেটা!

প্রশ্ন: মানে এবার বন্ধুত্ব টপকে পরিচালক সুজিত সরকার অভিনেতা অভিষেক বচ্চনকে ভালবাসলেন!

সুজিত: একদম। বন্ধুত্বটা অন্যরকম, কিন্তু এবার একদম অন্যরকম একটা জায়গা পেলাম। আমি ওর মধ্যে জয়া ভাদুড়ীকে খুঁজে পেলাম। জয়া ভাদুড়ীর চোখটা খুঁজে পেলাম। জয়া ভাদুড়ীর সাইলেন্সটা খুঁজে পেলাম। জয়া ভাদুড়ীর কোনও কথা না বলে দেওয়ালের ধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা অদ্ভুত পারফরম্যান্সের ইনোসেন্স খুঁজে পেলাম! তারপরে আমি ওকে বললাম, অভিষেক তুই করবি এই ছবিটা? তাহলে তোকে কিন্তু সমস্ত কিছু খুলে ফেলতে হবে। পোশাকও খুলতে হবে ফিজিকাল ট্রান্সফর্মেশনের জন্য আবার মানুষ হিসেবেও নিজেকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ও বলল দাদা আমি রাজি, তুমি কর। তারপরে অভিষেককে যা ছবিতে দেখেছেন সবাই। নিজের ছবি বলে বলছি না, অভিষেক এই ছবিতে অসাধারণ। ওকে নিয়ে সত্যিই কোনও কথা হবে না।

প্রশ্ন: এটা আমারও সত্যিই খুব খারাপ লাগে, অনেকের সঙ্গেই কথায় কথায় ওঠে, অভিষেক বচ্চন সত্যিই একজন দারুণ অভিনেতা।

সুজিত: আমার মনে হয় আর খারাপ লাগা থাকবে না। কারণ, এই ছবির প্রত্যেকটা ফ্রেমে অভিষেক দেখিয়ে দিয়েছে যে ও একজন অত্যধিক ট্যালেন্টেড অভিনেতা এবং মানুষ। হ্যাটস্ অফ টু হিম। বক্স অফিস বাদ দাও, সেটা কিছুই ম্যাটার করে না।

প্রশ্ন: সিনেমা ‘ডিরেক্টর্স মিডিয়াম’। একজন পরিচালক তাঁর অভিনেতাকে ভেঙে চুরে তৈরি করে নেবেন যদি অভিনেতা প্রস্তুত থাকেন। তোমাকেই আমরা দেখেছি একদম অন্যরকম একজন বরুণ ধাওয়ান উপহার দিতে, ‘অক্টোবর’ ছবিতে। যা কেউ ভাবে না, তেমন কিছু সফলভাবে করে দেওয়ার পর ইন্ডাস্ট্রির ইক্যুয়েশন কি কিছুটা বদলায়? যে স্বাধীনতা একজন পরিচালকের পাওয়া উচিত, সেটা তাঁরা পান?

সুজিত: আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু এইটুকু আমি দেখেছি যে, ইন্ডাস্ট্রিতে সব অভিনেতা অন্তত এটুকু আমাকে বলেছে যে দাদা তোমার সঙ্গে একটা কাজ করতে চাই। অন্তত একটা ছবি হলেও। এটাও আমাকে লোকে বলেছে যে তোমার ছবিতে যাঁরা কাজ করেছে তাঁরা জীবনের প্রায় সেরা পারফরম্যান্সটা দিয়েছে, যেটা তুমিও বললে। সেই হিসেবে বরুণ ধাওয়ান বল, দীপিকা, আয়ুষ্মান, বনিতা, তাপসী সবাই তাঁদের সেরা পারফরম্যান্সটা দিয়েছে। ‘সর্দার উধম’ ভিকির সেরা পারফরম্যান্স। আবার ‘মাদ্রাস ক্যাফে’ জনের সেরা ছবি বলতে পার। কারণ ও যেরকম ছবি করে, তার থেকে একদমই আলাদা। সে দিক থেকে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলব যে একটা বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে অন্ততপক্ষে অভিনেতারা সবাই আমার সঙ্গে কাজ করতে চায়। তবে আমি কিন্তু ছবি আমার মতই করব।

প্রশ্ন: সুজিত সরকার নিজে ছবি করেন খুব কম। বহু ছবির প্রযোজনায় জড়িয়ে থাকেন। কিন্তু সব ছবি পরিচালনা করেন না। এটা কিভাবে ঠিক কর যে কোন গল্পটা তুমি পরিচালনা করবে আর কোনটা কেবল প্রযোজনা?

সুজিত: আমার শুরুর দিনগুলোতে যখন আমি নিজের ছবি নিয়ে স্টুডিওর কাছে বা প্রযোজকদের কাছে যেতাম, আমাকে যথেষ্ট স্ট্রাগলের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ, আমি কাউকে কী করে বোঝাব যে আমার মনে কী চলছে! শুধু তো আর একটা স্ক্রিপ্ট দিয়ে সবটা বোঝানো যায় না! স্ক্রিপ্টের উপরেও তো কিছু আছে। একটা ট্রিটমেন্ট আছে, আমি কীভাবে শুট করব সেটাও দেখার। কিন্তু এই সবটা তো ওইভাবে বোঝানো যায় না। অন্য পরিচালকরা যখন আমার কাছে আসেন ছবি নিয়ে, আমি সেটা বুঝতে পারি। আমি খুব কম কাজ করি, যেটুকু করি খুব মন দিয়ে করি। আমি ক্রিয়েটিভ পার্টে সাহায্য করার চেষ্টা করি। মানে স্ক্রিপ্টে সাহায্য করি, পরিচালনায় সাহায্য করি। কারণ, আমার মনে হয় এটা খুব ভাল একটা ব্যাপার এবং এগুলো বলা উচিত। ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ যখন করেছিলাম অনিন্দ্যর সাথে আমি পুরো দাঁড়িয়ে ছিলাম। ‘পিঙ্ক’-এর শুরু থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার মনে হয় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে এটা দরকার। আর আমি ওদের সাথেই কাজ করি।

প্রশ্ন: অমিতাভ বচ্চন বা আরও কিছু মানুষের সঙ্গে তুমি একাধিক কাজ করেছ। এক মানুষের সঙ্গে বারবার কাজ করতে করতে একটা কমফোর্ট জোন তৈরি হয় খুব স্বাভাবিকভাবেই। কখনও কাজ করতে করতে কারোর জন্য মনে হয়েছে যে ওঁর জন্যই একটা কিছু লিখব বা ওঁকে ভেবেই এটা আমি করব?

সুজিত: হ্যাঁ, সেটা হয়ই। যেমন আমি কিছু ছবি ইরফানকে ভেবেই লিখেছি। আজকে যদি ইরফান থাকত, তাহলে ‘আই ওয়ান্ট টু টক্’ ওই করত। আমি অভিষেককে বলেছি, এটা তুই ইরফানের রোলটা করছিস। ও বলত, দাদা আমাকে তুমি ভয় দেখাচ্ছ? আমি বলতাম, না ভয় দেখাচ্ছি না। তুই ভাল করবি আমি জানি। ও বলত, পারব আমি? আমি বলতাম, তুই দারুণ পারবি। এই কনফিডেন্সটা তো দরকার। ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে, সত্যিই কোথাও না কোথাও ইরফান খানের ঝলক তুমি পাবে। ইরফানের ছোঁয়া পাবে।

প্রশ্ন: ইরফান খানের কথা এল, একটা কথা বলি। সম্প্রতি ‘দ্য রেলওয়ে মেন’ সিরিজে বাবিল খানের অভিনয় চমকে দিয়েছে। ইরফান খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুজিত সরকার বাবিলকে কি কোনও ভাবে মেন্টর বা স্ক্রিপ্ট বাছাইয়ে সাহায্য করেন?

সুজিত: একদম। রোজ করতে হয়। আমি তো এখন যাকে বলে বাবিলের বাবার মত হয়ে গেছি। এই আমি সুতপাকে (ইরফানের স্ত্রী) ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম বাবিল কোথায়। আমি বললাম কলকাতা থেকে ফিরেই আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে আসছি, দরকার আছে। ওকে অফিসে আসতে হবে না, আমিই বাড়িতে আসছি। এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে করছি, এবার যতটা পারব। কারণ বন্ধু ইরফান নেই। আমি এখন চেষ্টা করছি বাবিলকে যতটা পারি হাত ধরে নিয়ে চলতে। সামনে আমার একটা ছবি আসছে, যেটার আমি পরিচালক নয়। আমার প্রযোজনার ছবি। আমার এক বন্ধু সেটা পরিচালনা করেছে। সেটাতে আমি বাবিলকেই নিয়েছি। তাড়াতাড়ি জানতে পারবে সেটার কথা।

প্রশ্ন: আমরা জানি যখনই তুমি কলকাতায় আসো, চেষ্টা কর একটু খেলাধুলা করার। ফুটবল খেলার প্রতি তোমার ঝোঁকের কথা সবাই জানে। ফুটবল নিয়ে বা খেলা নিয়ে কোনও ছবি কি তুমি ভেবেছ?

সুজিত: ফুটবল নিয়েই ভেবেছি। আমি অনেকদিন থেকেই ভেবেছি যে ১৯১১ সালে মোহনবাগানের শিল্ড জয় নিয়ে একটা ছবি করব। কিন্তু সেটা অনেক দিন ধরেই পড়ে আছে। স্ক্রিপটা আমি এখনও ঠিক করে তৈরি করতে পারিনি। তবে হ্যাঁ, আমি নিজে যেহেতু খেলি, খেলতে ভালবাসি তাই খেলা নিয়ে ছবি করার আমার ইচ্ছা আছেই কিন্তু কবে করব সেটা এখনও বলতে পারছি না।

প্রশ্ন: ওটিটি আসার পর থেকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অনেক মানুষ সিনেমাহলে ছবিটা না দেখে ওটিটিতে যখন আসছে তখন দেখছেন। অনেক ছবির ক্ষেত্রে এটাও হচ্ছে যে ওটিটিতে দেখে আক্ষেপ করছেন ছবিটা বড় পর্দায় না দেখার জন্য। তাও আবার পরের ছবিকে ওটিটিতে দেখার অপেক্ষা করছেন।

সুজিত: হ্যাঁ। এটা আমার ‘অক্টোবর’-এর সাথেও হয়েছে। যখন রিলিজ করেছে তখন দেখেনি। তারপর ওটিটিতে দেখে আমাকে বলেছে, এটা আমাদের হলে দেখা উচিত ছিল। আমি বলি, তোরা যদি সিনেমাহলে এটা দেখতিস কি ভাল হত বল তো! এখন এই ছবিটার ক্ষেত্রেও আমি বলছি, ছবিটা বড় পর্দায় দেখো। কারণ, এটা ভাল ছবি। আমি আমার কাজটুকু করেছি। ছবিটা যাতে নতুন কিছু একটা মানুষকে দিতে পারে, গল্পটাকে যাতে নতুনভাবে বলতে পারি সেটাই আমি আমার মত করে চেষ্টা করছি। যাতে কাউকে অনুপ্রাণিত করতে পারি, কারুর মনে যাতে একটা আশা জাগাতে পারি, ভয়টা যাতে দূর করে দিতে পারি, আমি এই ছবিটা সেই জন্যেই বানিয়েছি। এবারে মানুষকে তো ছবিটা সিনেমাহলে গিয়ে দেখতে হবে! আমি যখন ছবি বানাই, লোকে বলে তোমার ছবি তো বাংলায় দারুণ চলবে। সবাই দেখবে। আর আমি বাংলাকে নিয়েই বেশি হতাশ! মানুষ ছবি দেখতে যাচ্ছে না। আর আমরা এত গভীর কথা বলি বাঙালির বিষয়ে, আমাদের চিন্তাধারা বিশাল, আমরা সবার থেকে আলাদা রকম চিন্তা করি, আমাদের আলাদা মানসিকতা, সাহিত্যের প্রতি প্রচুর রেসপেক্ট! কিন্তু আমি সত্যিই খুব হতাশ হয়েছি।

প্রশ্ন: মানে, এই ছবিটার ক্ষেত্রে?

সুজিত: নিশ্চয়ই। এবারে আমি খুব হতাশ। কারণ, শেষমেশ গিয়ে তো ওই সিরিয়াল, ওই গয়না পরে বাড়ির মধ্যে ঝগড়া চলছে! আমি তো ভেবেছিলাম বাঙালি এগুলো ছাড়িয়ে আরও একটু উপরে উঠবে। ওইখানেই যদি হিন্দি সিরিয়ালের মত আটকে থাকে তাহলে তো হয়েই গেল! তাহলে আর এগিয়ে থেকে কী লাভ হল! আমার বলতে খারাপ লাগছে, তাও বলতে বাধ্য হলাম।

প্রশ্ন: সাহিত্যের কথা উঠল বলে একটা কথা জিজ্ঞাসা না করে পারছি না। সাহিত্যধর্মী কোনও ছবি বানাতে চাও?

সুজিত: নিশ্চয়ই। আমি বাংলা সাহিত্য এবং রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি পড়ছি। যেহেতু আমি প্রবাসী বাঙালি, বাংলার সঙ্গে আমার পরিচয় বা কানেকশন হিন্দি এবং ইংরাজির মাধ্যমে হয়েছে। কিন্তু আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করতে চাই এবং কোনও না কোনও সময়ে আমি সেটা করবই।

প্রশ্ন: এই বছরে এসে খুব বেশি করে দেখছি অনেক পুরোনো ছবি রি-রিলিজ হচ্ছে। ফলে বড় পর্দায় আবার সেই ছবি আমরা দেখতে পাচ্ছি। তোমার ছবি ‘ইয়াহাঁ’র তো কুড়ি বছর। আমরা কি অত সুন্দর একটা ছবি আবার পর্দায় দেখতে পাব?

সুজিত: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমাকে বলেছে ‘ইয়াহাঁ’ করবে। ‘ভিকি ডোনর’, ‘সর্দার উধম’, আর ‘অক্টোবর’ও করবে বলছে। আমি কিন্তু এটাকে নিয়ে খুব আনন্দে আছি। বিষয়টা বেশ মজার।

প্রশ্ন: হ্যাঁ। অনেক ছবি প্রথমবারের থেকে বেশি চলছে!

সুজিত: হ্যাঁ। সেটাই চলুক। সব থেকে মজার হল আমরা নিজেদের কাজটা আবার বড় পর্দায় দেখতে পাচ্ছি। দেখো, আমরা একটা কাজ করি। সেটা দু’সপ্তাহ পরেই সিনেমাহল থেকে চলে যায়। খুব খালি খালি লাগে। তখন মনে হয়, হয়ে গেল! বুকটা খালি খালি লাগে। মনে হয় অনেকটা রিলের মত যেন মানুষ উপরের দিকে সরিয়ে বার করে দিল! আর এই রি-রিলিজ হবে এতে আনন্দ হচ্ছে যে সবাই মিলে একসঙ্গে বসে আবার ছবিটা দেখবে।

Loading


Share It