বাঙালি সাহিত্যধর্মী ছবি হয়না বলে, সাহিত্যধর্মী ছবিকে রিমেক ভাবে: সৃজিত
অতনু রায়
স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন’ প্রযোজিত মৃণাল সেন-এর জীবনীচিত্র ‘পদাতিক‘। দেশ বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদৃত হয়ে এই ছবি সিনেপ্রেমীদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ছবি মুক্তির আগে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় আড্ডা দিলেন ‘দ্য কাউন্টার কালচার‘-এর সঙ্গে।
প্রশ্ন: ভারতীয় অন্যধারার সিনেমায় রাজনীতি আর শিল্প হাত ধরাধরি করে চলেছে। মৃণাল সেনের জীবনেও। ‘পদাতিক’-এ সেই জায়গাটা সৎভাবে বজায় রাখার হোমওয়ার্ক কীভাবে করেছ?
সৃজিত: হোমওয়ার্ক করে সৎ ভাবে কিছু বজায় রাখা যায় না। সেটা হয় নিজের মধ্যে থাকে কিংবা থাকে না। আমার মধ্যে ছিল। কারণ, আজ অবধি আমি যা গল্প বলেছি, সৎ ভাবেই বলেছি। গল্প বলার পেছনে অবশ্য সিনেমার ছাত্র হওয়ার একটা বিশাল বড় জায়গা আছে। তবে এটা ঠিক, সত্যজিৎ রায় যতটা সেলিব্রেটেড হন, এমনকী ঋত্বিক ঘটককেও যতটা উদযাপন করা হয় তেমনভাবে মৃণাল সেনকে উদযাপন করা হয়নি। তাই আমার মনে হয়েছিল যে শতবর্ষ ওঁকে শ্রদ্ধা জানানোর আদর্শ সময়।
প্রশ্ন: এবং একাধিক ছবি…
সৃজিত: …একেবারেই। আমি খুব খুশি যে একটা নয় তিন তিনটে ‘ট্রিবিউট’ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। আশা করছি এবার মৃণাল সেনের কাজ নিয়ে আরও চর্চা হবে, আলোচনা হবে, সচেতনতা বাড়বে।
প্রশ্ন: ‘ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট’ আমাদের ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ এবং ‘প্যারালাল’ ছবির লড়াইকে কতটা শক্ত জমি দিয়েছে বলে মনে কর?
সৃজিত: প্রচন্ডই শক্ত জমি দিয়েছে। কারণ, ‘ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট’ আসলে সবকিছুর ভিত। সেখান থেকেই শুরুটা হয়েছে। সত্যজিৎ রায় থেকে চিদানন্দ দাশগুপ্ত, হরিসাধন দাশগুপ্ত থেকে মৃণাল সেন বা ঋত্বিক ঘটক, যে সব নাম আজও কথায় কথায় উঠে আসে তাঁরা কেউ প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন আবার কেউ পরোক্ষ ভাবে। কিন্তু এই মুভমেন্টে জড়িয়ে ছিলেন সবাই। আজকে আমাদের ছবির যে ‘চেঞ্জ’, তার অন্যতম চালিকা শক্তি এই মুভমেন্ট। তাই এর বিরাট একটা অবদান আছে বলেই আমি অন্তত মনে করি।

প্রশ্ন: তোমার মত একজন পরিচালক, যাঁর সঙ্গে খুব ছোট থেকেই ‘ওয়র্ল্ড সিনেমা’র আলাপ হয়ে গিয়েছিল, তাঁর নিজের ছবিতে বিশ্ব সিনেমার মাস্টার্সদের প্রভাব এড়িয়ে গিয়ে নিজস্ব ‘সিগনেচার’ তৈরি করা কতটা টাফ? তোমার সেটা তৈরি হয়েছে। লোকে ‘সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি’ দেখলে চিনতে পারে। এটা কি তুমি সচেতনভাবে করেছিলে নাকি তোমার অবচেতনেই এই ব্যাপারটা তৈরি হয়েছে?
সৃজিত: আমি বলব এটা অবচেতনেই হয়ে গেছে। প্রথম কথা হল, আমার ছবিতে বিষয়ের যে বিবিধতা সেটা আমার ব্যক্তিগত বিবিধ ব্যাপারে আগ্রহ থেকেই আসে। ট্রিটমেন্টের জায়গা থেকেও তাই। মৃণাল সেনের ব্যবহৃত ‘সিনেম্যাটিক টুলস্’ বা টেকনিক যেমন ‘ফ্রিজ-ফ্রেম’ ব্যবহার কিংবা ফোর্থওয়াল ব্রেকিং, জাম্পকাট হোক বা নন-লিনিয়ার স্টোরিটেলিং এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রি-এক্সিস্টিং ফুটেজ ব্যবহার করা, প্রত্যেকটাই আমি করেছি ‘পদাতিক’ বানাতে গিয়ে। তার পরেও ‘পদাতিক দেখলে লোকে বুঝতে পারবে যে এটা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি। কারণ, সেখানে আমার ‘সিগনেচার’ আগাগোড়া আছে। সঙ্গীতের ব্যবহারে হোক, সংলাপে হোক, চরিত্রায়ণে বা অভিনেতার ব্যবহারেই হোক, আমার ‘সিগনেচার’ রয়ে গেছে। তাই আমার মনে হয়, সিগনেচারটা আমার কাজে খুব অর্গ্যানিক ভাবেই এসেছে এবং অর্গ্যানিক ভাবেই রয়ে গেছে।
প্রশ্ন: মানে তুমি মৃণাল সেনকে ট্রিবিউট দেওয়ার জন্য তাঁর ছবি তৈরির কিছু সিগনেচার স্টাইল খুব সচেতনভাবে ব্যবহার করেছ।
সৃজিত: সচেতনভাবেই রেখেছি এবং গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজোটা করেছি।
প্রশ্ন: মৃণাল সেনের ছবির ভাষা কোনও সময় তোমার আগে থেকে তৈরি হওয়া সিনেমা বোধকে চ্যালেঞ্জ করেছে?
সৃজিত: না, চ্যালেঞ্জ করেনি বরং আমাকে ‘ইন্সপায়ার’ করেছে। যেমন, ‘আকালের সন্ধানে’ আমি খুব ছোটবেলায় দেখেছিলাম। খুব প্রভাবিত করেছিল। ‘আকালের সন্ধানে’র যে ‘ফিল্ম উইদ ইন ফিল্ম’ স্ট্রাকচার, সেটা কিন্তু আমাকে ‘অটোগ্রাফ’-এর গল্পটা বলতে খুবই সাহায্য করেছিল। ছোট বয়সে ‘ইন্টারভিউ’ ভীষণ প্রভাবিত করেছিল। শুটিং স্টাইল, শট টেকিং বা গল্প বলার ধরণ সবকিছুই খুব ‘ইন্সপায়ারিং’। তাই বলব, মৃণাল সেনের ছবি আমাকে মোটিভেটই করেছিল।
প্রশ্ন: সিনেমার অ্যাস্থেটিকস্ বা নান্দনিকতা নিয়ে প্রচুর কথা হয়। তোমার কাছে সিনেমার নান্দনিকতার মূল কথা কী?
সৃজিত: এই বিষয়টা নিয়ে আমি সত্যিই অত ভাবি না আর অতটা বুঝিও না। আমার মনে হয় সিনেমার প্রফেসর বা যাঁরা সিনেমার ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন তাঁরা ভাল বলতে পারবেন। আমার মনে হয়, আমার গল্প বলাই কাজ। আমি নিজের কথা মাথায় রেখে গল্প বলি। যে গল্প আমি নিজে শুনতে ভালবাসি, সেই গল্পই আমি বলতে ভালবাসি এবং সেই গল্পই বলি। নান্দনিকতার সেরকম কোনও সংজ্ঞা আমার মাথায় নেই।

প্রশ্ন: এই যে ‘রিয়্যালিজম্’ আর ‘আভাঁগার্দ’ ফিল্মমেকিং মাঝে মাঝেই মিশে থেকেছে সিনেমার পর্দায়। তোমাকে এটা কতটা টেনেছে? ছবিকে অহেতুক ভারী না করা, যেটা আমরা তোমার ছবিতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি। তোমার ছবি ভারী না হয়েও তার মধ্যে অনেক কিছু থেকেছে। আর কাদের ছবি ‘ইন্সপায়ার’ করেছে?
সৃজিত: সত্যজিৎ রায় তো বটেই। তপন সিনহা। শুরুর দিকের তরুণ মজুমদার, বিশেষ করে যাত্রিক। অজয় কর, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, সলিল দত্ত, সলিল সেন, পীযূষ বোস, পার্থপ্রতিম চৌধুরী। হালে অবশ্যই ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত এবং কৌশিক গাঙ্গুলি আমাকে ‘ইন্সপায়ার’ করেছে। বাংলা ছবিতে মোটামুটি এঁরাই।
প্রশ্ন: বাঙালি বরাবর অন্য ধারার ছবি পছন্দ করে এসেছে। এক্ষেত্রে ফিল্ম সোসাইটি আর ফিল্ম ক্লাবগুলো আজও তো বিশ্ব সিনেমার মহীরুহদের সিনেমা দেখায়। কিন্তু সত্যজিৎ বাদ দিলে যে পরিমাণে গদার, দে সিকা, ট্রুফো, ফেলিনি দেখায় ততটা মৃণাল-ঋত্বিক দেখাল না কেন? এমনকি কাসারাভাল্লি-আদুর গোপালকৃষ্ণনও দেখায় না। ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিকগুলো আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনোর দায়িত্ব কি তাঁদের ছিল না? তাঁরাও কি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে বলা চলে?
সৃজিত: নিশ্চয়ই তাঁদের দায়িত্ব ছিল এবং তাঁরা খানিকটা হলেও ব্যর্থ তো অবশ্যই হয়েছেন। সেটা না হলে অন্যরকম হতেই পারত। তবে এটার সঙ্গে একটা সায়েন্টিফিক যোগাযোগও আছে বলে আমার মনে হয়। সেটা হচ্ছে ফিল্ম কোয়্যালিটির। অধিকাংশ ছবির যা অবস্থা! সেটা তো ওই অবহেলা থেকেই এসেছে। আজকে চারটে জায়গায় একটা ছবি দেখানো হলে তার রেস্টোরেশন নিয়ে কথা হয়, কোয়্যালিটি নিয়ে কথা হয়। কিন্তু যেহেতু সেটা হয়নি, তাই দেখো মৃণাল সেনের অর্ধেকের বেশি ছবির তুমি ভাল প্রিন্ট পাবে না। তপন সিনহার ছবিরও একই অবস্থা। বাকিদের কথা তো ছেড়েই দিচ্ছি। তাই এটা অবশ্যই একটা খুব বড় ক্ষোভের জায়গা।
প্রশ্ন: তুমি সাহিত্যধর্মী কাজ করেছ। আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র-সুনীল-শীর্ষেন্দু-শরদিন্দু এবং আরও কিছু নাম এলে আমরা সাহিত্যধর্মী বলছি অথচ রাজ চক্রবর্তী যখন একটি মেয়ের ফেসবুকে লেখা গল্প থেকে পরিণীতা বানাল সেটাকে বললাম না। সেই গল্প তো সিনেমা বানানোর জন্য লেখা হয়নি, সাহিত্য হিসেবেই লেখা। নতুন প্রজন্মের লেখা গল্পকে সিনেমার নিরিখে আমরা সাহিত্য পদবাচ্য বলেই ধরছি না। কেন?
সৃজিত: এটা একটা সংজ্ঞাগত সমস্যা। একেকজন কোনটাকে সাহিত্য বলছেন আর কোনটাকে বলছেন না সেটার উপর বিচার হচ্ছে। এই ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনও বক্তব্য নেই। কারণ আমি কখনও সাহিত্যধর্মী ছবি নাকি সাহিত্যধর্মী নয় তার মধ্যে যেতেই চাই না। আমার নিজের গল্প হলে আমি একরকম ভাবে গল্প বলাটাকে অ্যাপ্রোচ করি আর অন্য কারোর গল্প, ছোটগল্প বা উপন্যাস হলে আরেক রকম ভাবে অ্যাপ্রোচ করি। যাঁরা এই বিভাজন করেন তাঁরা হয়ত ভাল বলতে পারবেন। আমি করি না।

প্রশ্ন: আমরা এখন বিভিন্ন ফরম্যাটে কাজ দেখছি। তুমিও বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটি ফরম্যাটে কাজ করছ। তোমার পরবর্তী ছবি রেজিনাল্ড রস-এর (Reginald Rose) ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ (12 Angry Men) নাটক থেকে অনুপ্রাণিত ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’। আমার স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে, তোমার কাছেই শোনা ‘অটোগ্রাফ’ বানানোরও আগে তুমি ‘মাইন্ড গেম’ নামে একটা নাটক লিখেছিলে ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ নাটক মাথায় রেখে। কেরিয়ারের শুরুতে যে গল্পকে নাটক হিসেবে অ্যাপ্রোচ করেছিলে আজ সেটাকে ছবি হিসেবেও বানাচ্ছ। মাঝের এই দীর্ঘ সময়ে ভাবনার কতটা পরিবর্তন হল? পরিণত তো কালের নিয়মেই হয়েছ, নিজেকে ভেতরে ভেতরে কতটা ভেঙ্গেছ?
সৃজিত: কিছু গল্প আমার খুব প্রিয়। সেটা ‘ইক রুকা হুয়া ফ্যায়সলা’ হতে পারে, ‘জুলিয়াস সিজার’ হতে পারে, ‘ফেলুদা’ হতে পারে। আবার ছবি হিসেবে সেটা ‘নায়ক’ হতে পারে। আমি বারবার ফেরত যাই এই গল্পগুলোর কাছে। এই ন্যারেটিভগুলো ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব নাড়া দেয়, আমার দারুণ লাগে। একজন ছবিকরিয়ে হিসেবে সেই গল্পগুলো বলার তাগিদ আমি সবসময় অনুভব করি। তাই বারবার জুলিয়াস সিজার ফেরত আসে, বারবার আমি ফেলুদা করি। বাকি কাজগুলোও সেই একই সূত্র ধরে ফেরত আসে আমার কাজে। এগুলো আসলে আমার ছোটবেলার মনকে নাড়িয়ে দেওয়া গল্পের ‘লেগ্যাসি’ বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন: তোমার কাজে তোমার ‘সিগনেচার’ থাকে। আমরা ফেলুদা বা ব্যোমকেশের ক্ষেত্রে দেখেছি যে গল্প একটু এদিক থেকে ওদিক গেলেই মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু তোমার সঙ্গে তার বাইরেও তো হয়েছে। তুমি যখন ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ বানালে, সেটাকে সবাই ‘চৌরঙ্গী’ ছবির রিমেক মনে করেছে। আবার ‘জাতিস্মর’কে ‘অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি’ আর ‘এক যে ছিল রাজা’কে ‘সন্ন্যাসী রাজা’র রিমেক ভেবেছে। তারপরে অনেকগুলো বছর কেটে গেছে, বাঙালি দর্শক সেই জায়গা থেকে একটু পরিণত হয়েছে?
সৃজিত: আমার মনে হয় বাঙালি দর্শক সিনেমাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। সিনেমার প্রভাব তাঁদের উপর অনেক বেশি। তাই সাহিত্যধর্মী ছবি হয় না বলে হা-হুতাশ করার পর যেটা আসলেই সাহিত্যধর্মী সেটাকে তাঁরা রিমেক হিসেবে দেখে। তাঁরা ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাসটা না পড়ে বাংলা সিনেমাটাই শুধু দেখে এবং সেটাকেই সেলিব্রেট করে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ সাহিত্যধর্মী আবার ‘এক যে ছিল রাজা’ জীবনধর্মী সত্য কোর্ট কেস অবলম্বনে। তবে এই জিনিসগুলো মানুষ সাধারণত বুঝতে চায় না। যেহেতু সিনেমা খুব শক্তিশালী একটা মাধ্যম তাই তার মাথার মধ্যে ‘একটা বাংলা ছবি দেখেছিলাম’ স্মৃতিটা অনেক বেশি জাঁকিয়ে বসে।
প্রশ্ন: মনে আছে আমি লিখেছিলাম, যখন ‘শাহজাহান রিজেন্সি’র পোস্টার লঞ্চ হল তখন সবাই সেই পোস্টারের সঙ্গে ‘দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল’ ছবির মিল পেয়ে ট্রোলিং শুরু করেছিল কিন্তু ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাসের কভারের মিল পায়নি। তুমি তো সোশ্যাল মিডিয়াতে খুবই অ্যাক্টিভ থাকো। এখনও এই ধরণের বিষয়ই ঘুরে ফিরে আসে নাকি মানুষ একটুখানি বিচক্ষণ হয়েছে?
সৃজিত: ঘুরে ফিরে সেই সব জিনিসই আসছে। কারণ, মানুষ খুব যে বিচক্ষণ হয়েছে একদমই সেটা নয়। তবে হ্যাঁ, এইটা দেখে ভাল লাগছে যে ‘মানিকবাবুর মেঘ’ দেখতে প্রচুর লোক হলে যাচ্ছে। আমি ৯ বছর আগে যখন ‘নির্বাক’ করেছিলাম তখন কিন্তু এত লোক হলে যায়নি। তারা ‘নির্বাক’কে রিজেক্ট করেছিল। কিন্তু আজকে তারা একটা ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট’ প্রেমের গল্প দেখছে এবং অ্যাপ্রিশিয়েট করছে। এটা আমার ভাল লাগল। সেদিক থেকে দেখলে বলব, কিছুটা হলেও হয়ত বদল এসেছে।
প্রশ্ন: তোমার শুরুর কথাতেই আবার ফিরি। মৃণাল সেনকে নিয়ে তিনখানা ছবি হল। সব থেকে আশ্চর্যের, কোনও ছবিই অন্যটার কম্পিটিটর হল না। তিনটে ভিন্ন ধরণের ছবি হল। তার মধ্যে তোমার ছবিটা একদম আক্ষরিক অর্থে বায়োপিক…
সৃজিত: হ্যাঁ। আমারটা একদমই ক্ল্যাসিকাল বায়োপিক।
প্রশ্ন: ক্ল্যাসিকাল বায়োপিকের ক্ষেত্রে মূল চরিত্রের সঙ্গে দৈহিক সাদৃশ্য দর্শকের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

সৃজিত: খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দৈহিক সাদৃশ্য তাঁকে কল্পনা করতে সাহায্য করে। রক্ত মাংসের একটা চরিত্র যখন তৈরি হয় তখন দর্শকের কল্পনা শক্তিকে অনেকটা প্রভাবিত করে এই সাদৃশ্য। তাই, চঞ্চল চৌধুরী, কোরক সামন্ত এবং মনামী ঘোষ তিনজনের সঙ্গেই মৃণাল সেন এবং গীতা সেনের দৈহিক সাদৃশ্য এই ছবির চরিত্রায়ণের অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন: আমরা তো প্রচুর বায়োপিক দেখি। তোমার পছন্দের বায়োপিক বললে কোন কোন ছবির কথা মনে হয়? এমন কিছু যা বারবার দেখতে পারো।
সৃজিত: বারবার যে দেখি তেমনটা নয়, তবে খুব সম্প্রতি ‘ওপেনহাইমার’ আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। ‘লিঙ্কন’ আমার খুব ভাল লেগেছিল। ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’ ছবিটাও বেশ পছন্দের।